মানবিক বিবেচনা ও করোনায় সরকার সাঈদীর মুক্তি নিয়ে ভাবছে না

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ মানবিক ধর্মীয় ও বার্ধক্য বিবেচনায় প্রখ্যাত মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর মুক্তি দাবি করেছেন বাংলাদেশ উলামা কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি অধ্যক্ষ সাইয়্যেদ কামালুউদ্দিন জাফরীসহ অন্যান্য আলেমগণ।
গত কয়েক দান ধরে সোসাল মিডিয়াতে আল্লামা সাঈদীর মুক্তি দাবি করে আসছে বিভিন্ন ব্যক্তি। এমনকি আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি বিশিষ্ট কলামিষ্ট গোলাম মাওলা রণিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তবর্গ একই দাবী করে আসছে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণ দেখিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কারাবন্দীদের মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। অনেক দেশে মুক্তি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। তবে বাংলাদেশে এখনো করোনা ভাইরাসের কারণে কারাবন্দীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি ভাবছে না সরকার।

সূত্র বলছে, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুসারে যারা ২০ বছর সাজাভোগ ইতিমধ্যে শেষ করছেন তাদের মুক্তি দিতে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এমন একটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল কারা অধিদপ্তর। সেই তালিকা ধরেই কারাবন্দীদের মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। ওই তালিকায় হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিসহ মোট ১৪২০ জনের নাম রয়েছে। তবে এই তালিকাটি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে করা হয়নি। যদিও কারা অধিদপ্তর বলছে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর আগে ডিসেম্বরে যে তালিকা তারা পাঠিয়েছে সরকার চাইলে সেই তালিকা থেকে বন্দীদের বর্তমান পরিস্থিতিতে মুক্তি দিতে পারে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আমরা এখনো কোনো তালিকা করিনি বা মুক্তির সিদ্ধান্ত নিইনি। বিষয়টা খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে। চিন্তাভাবনা চলছে। অনেক দিন ধরেই কারা অধিদপ্তর ৫৬৯ ধারায় বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে অনুরোধ করছেন। এটার জন্য কমিটি আছে। কমিটি যাচাই -বাছাই করবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে । কতজন মুক্তি পেতে পারেন সেটা বিবেচনা হবে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত ও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষরের পর। তিনি বলেন, ছোট অপরাধ, অসুস্থ কিংবা ভালো ব্যবহার বা কাজ করেছেন এমন বন্দীদের এ সুযোগ দেওয়া হয়ে থাকে। শীর্ষ সন্ত্রাসী বা দুর্ধর্ষ ডাকাতেরা এ সুবিধা পাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, প্রশ্নই ওঠে না। এই ধারা তাঁদের জন্য প্রযোজ্য হবে না।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা  বলেন, কারাবিধির ৫৬৯ ধারা অনুসারে কোনো বন্দী তাঁর সাজার মেয়াদের দুই-তৃতীয়াংশ খাটলে, সেই বন্দীর বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ না থাকে, তবে সরকার চাইলে বিশেষ সুবিধায় তাঁকে মুক্তি দিতে পারে। এ জন্য রাষ্ট্রপতির কোনো অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না। এই সুবিধায় মুক্তি দেওয়ার জন্য গত কয়েক বছর দেশের সব কারাগার থেকে বন্দীর তালিকা তৈরি করা হয়। বন্দীদের বয়স, সাজার ধরন, মেয়াদ, শারীরিক অবস্থা এবং কারাগারে তাঁরা কোনো অপরাধ করেছেন কি না, তা বিবেচনায় নিয়ে নাম চূড়ান্ত করা হয়। সেই তালিকা খতিয়ে দেখার জন্য (ভেটিং) আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় । এরপর তা প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে কোনো সময় বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হয়।

কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা প্রথম আলোকে বলেন, আমরা মন্ত্রণালয়ে অনেক আগেই প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এটি নিয়মিত কাজ। কিন্তু এখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের কিছু জানায়নি। ২০ বছর সাজা খাটার পর কারাবিধির ৫৬৯ ধারায় অসুস্থ ও অচল বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। আগেও দেওয়া হয়েছে। তবে এখন যেহেতু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের বিষয়টি আসনে আসছে তাই গুরুত্ব দিয়েই তাড়াতাড়ি বন্দী মুক্তি চাইছেন।

কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, কারা অধিদপ্তর থেকে ৫৯৪ বিধিতেও ২১ জন অচল অক্ষম, অন্ধ পঙ্গু ও দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত বন্দীর মুক্তির প্রস্তাব জেলা কমিটি থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর আগে ৩০৯২ জন হাজতি বন্দীর জামিন যোগ্য ধারায় আদালত চাইলে মুক্তি দিতে পারে এই তালিকা কারা অধিদপ্তর পাঠিয়েছে। তবে কিছু নির্ভর করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়রে সিদ্ধান্তের ওপর।

প্রসঙ্গগত করোনাভাইরাসের পরিস্থিতি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ভারতও কিছু বন্দীকে ছেড়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে। ইরানে বহু বন্দীকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

ব্রিটেন সরকারও এই মহামারির কারণে জেল থেকে কিছু বন্দীকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালও কারা বন্দীদের মধ্যে যারা বয়স্ক এবং যাদের নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা আছে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

দেশবরেণ্য আলেমেদের পক্ষ থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে তারা বলেন, করোনা ভাইরাসের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে পবিত্র কাবার মধ্যে সেজদাকারী বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন ও সাবেক এমপি আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে মুক্তির ব্যবস্থা করা সময়ের দাবী। কেননা তিনি একেবারে বার্ধক্যে উপনীত হয়েছেন। ৮১ বছর বয়সের এই আলেম দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত ডায়বেটিকসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত। তার হার্টে ৫ টি রিং বসানো। শারিরীক ও মানসিক যন্ত্রণায় তিনি দীর্ঘ ১১ বছর কারাগারে আছেন। এ অবস্থায় অন্যের সাহায্য ছাড়া উঠতে বসতে, চলাচলে বা নিত্যদিনের কাজ করা একেবারেই অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তারা আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে যে উদারতার পরিচয় দিয়েছেন তা ভুলবার নয়। আমরা আশা করছি সেই সাথে মানবিক বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আল্লামা সাঈদীকে মুক্তির মাধ্যমে গোটা জাতির কাছে আজীবন স্বরণীয় হয়ে থাকবেন। ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া সাবেক এই সংসদ সদস্য দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর যাবত কুরআনের খেদমত করে আসছেন। তাছাড়া তিনি দেশে-বিদেশে অসংখ্য মসজিদ-মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। পৃথিবী জুড়ে এক মহামারী ভাইরাসের এই সঙ্কটময় মুহূর্তে যাতে তিনি করোনা ভাইরাস থেকে মুক্ত থেকে পরিবারের কাছে দিন কাটাতে পারেন সেই সুযোগটুকু মানবিক ধর্মীয় ও বার্ধক্যের কারন বিবেচনায় তাকে মুক্তি দেওয়া ব্যবস্থা করা ঈমানের অপরিহার্য দাবি বলে জানান দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম।
বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম আল্লামা আজিজুল হক রাহঃ এর ছেলে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক লক্ষীপুরের প্রবীণ মুফাসসিরে কুরআন ড. মাওলানা লুৎফুর রহমান, ঢাকার আল্লামা তারিক মুনাওয়ার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়য়ের প্রফেসর ডক্টর আব্দুস সালাম মাদানী, বরিশালের অধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক, সিলেটের মাওলানা আবুদল মতিন শাহবাগি, মাওলানা আব্দুস সালাম মাদানী, চট্টগ্রামের মাওলানা হারুনুর রশিদ, প্রফেসর ডঃ বি এম মফিজুর রহমান আজহারী, খুলনার মাওলানা মনোয়ার হোসেন মাদানী, কুষ্টিয়ার এনামুল হক শাফি, রংপুরে মাওলানা আতাউল গনী ওসমানী, চরমোনাইর মরহুম পীর সাহেব, মাওলানা ইসহাক রাহ এর সাহেবজাদা সাইয়েদ ফেরদাউস বিন ইসহাক, ছারছীনার ছোট পীর শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দিকী, মিরেরসরাই পীর মাওলানা আব্দুল মোমেন, নাছিরী টেকেরহাটের পীর আল্লামা সাইয়েদ কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা রাফি বিন মনির সিফাত হাসান মাওলানা সাইমুম সাদী জমিয়াতুল মুফাসসিরিনের সভাপতি মাওলানা আব্দুস সোবাহান বাংলাদেশ জাতীয় মুফাসসির পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাদ্দিস আমিরুল ইসলাম বেলালী, মুফাসসিরে কুরআন মাওলানা আবুল কালাম আজাদ বাশার, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল আমিন, মুফতি মাওলানা আমির হামজা, অধ্যক্ষ এইচ এম শহিদুল ইসলাম, মাওলানা মোশাররফ হোসাইন, মাওলানা কাজি মারুফ বিল্লাহ, মাওলানা নাসির উদ্দীন হেলালী, শেখ আবুল কালাম আজাদ আজহারী, মাওলানা সাদিকুর রহমান আজহারী, শাইখ জামাল উদ্দিন, মাওলানা মাহমুদুর রহমান দেলোয়ার, মাওলানা সাদিক সিকান্দার, মুফতি একেএম ফারুক সিদ্দিকী, আবু হানিফা নোমান, মুফতি মাওলানা ডাক্তার এম এ সালাম, অধ্যাপক তৈয়বুর রহমান, মাওলানা গোলজার হোসাইনসহ দেশের শীর্ষ ওলামা ও পীর বুজুর্গ বিভিন্ন মাধ্যমে আল্লামা সাঈদীর মুক্তি দাবি করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।এর আগে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এক হাজারের বেশি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দী মুক্তি পেয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে বন্দী থাকা বৃদ্ধ, নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ—এই পাঁচটি শ্রেণির এক হাজার বন্দীকে তখন মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা  বলেন, তাদের কাছে গত ডিসেম্বরে একটি তালিকা পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এসব করোনা সংক্রামককে সামনে রেখে নয়। এসব তালিকা তারা নিয়মিত পাঠান। তারা বলেন, আমরা মাদক ও খুনের মামলা বাদ দিয়ে হয়তো বড়জোর তিন শ জনের একটি তালিকা করতে পারি। তাও যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।