প্যানিক বাইং কারসাজিতে সাতক্ষীরার নিত্যপণ্যের বাজার:পানির দামে সবজি: চাল ও মশলার দাম বাড়ছে লাফিয়ে: সর্বশান্ত ও নি:স্ব এক লক্ষ কৃষক: ক্ষতিপূরণ দাবী

ক্রাইমর্বাতা রিপোট: সাতক্ষীরা: করোনার প্রভাব পড়েছে জেলার নিত্যপণ্যের বাজারে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি থাকায় বাজারে কমেছে সবজির দাম। বেড়েছে চাল ডালসহ নিত্যপণ্যের বাজার। সবধরণের সবজির দাম কমায় লক্ষাধীক প্রান্তিক কৃষক সর্বশান্ত ও নি:স্ব হতে চলেছে । কাঁচা ঝাল, শসাসহ বেশির ভাগ সবজির দাম কমেছে কয়েকগুণ । বাজারে ক্রেতার উপস্থিতি কম থাকায় পচনশীল সবজি পানির দামে বিক্রি হচ্ছে। সুলতানপুর বড় বাজারে ৬ থেকে ১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে এক কেজি শসা,কাঁচা ঝালা ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজি প্রতি আর গাভির দুধ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকায় কেজি প্রতি। রমজানকে সামনে রেখে চাল,ডাল তৈল ও মসলার দাম বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ভাগ।উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা প্রণোদনা দাবী করেছে।
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনো রোগী শনাক্ত হয়। সরকারের পক্ষ থেকে চলাফেরা সীমিত করার নির্দেশনা দেয়া এবং পরবর্তীতে ছুটি ঘোষণা ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার নির্দেশনা দেয়ার পর থেকে একশ্রেণির মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত পণ্য ক্রয়ের হিড়িক পড়ে যায়। এই অতিরিক্ত পণ্য ক্রয়ের হিড়িক দেখে দোকানিরাও দাম পণ্যভেদে দ্বিগণ বহুগণ করে ফেলে। যাদের হাতে প্রচুর টাকা রয়েছে তারা অতিরিক্ত মূল্যে দিয়ে অতিরিক্ত পণ্য কিনেছে ইচ্ছামতো। কিন্তু যাদের হাতে অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করে অতিরিক্ত পণ্য কেনার মতো পয়সা নেই তারা মহাবিপাকে পড়েছেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা পরে (পণ্য) না পাওয়ার আশঙ্কায় অতিরিক্ত কিনে মজুদ রাখাকে প্যানিক বাইং (আতঙ্কিত হয়ে ক্রয়) বলে থাকেন। এর ফলে বাজার তার স্বকীয়তা হারায়। এতে হঠাৎ পণ্যের সংকট দেখা দেয় আবার কখনো ক্রেতা সংকটে পড়েন ব্যবসায়ীরা। এদিকে দুই-তিন দিনে যারা কয়েক মাসের বাজার করে রেখেছেন তারা এখন আর নতুন করে কিছুই কিনছেন না। ফলে কৃষক, কাঁচামালের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। জেলা শহরের বড় কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে, পণ্য আছে কিন্তু ক্রেতা নেই। খুবই সস্তায় বিক্রি হচ্ছে সবজিসহ নিত্যপণ্য।
শুক্রবার ও শনিবার জেলার কয়েকটি খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরবরাহ স্বাভাবিক থাকায় নিত্যপণ্যের বাজারে কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই। তবে লকডাউনের কারণে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে কম। বাজারে ক্রেতার উপস্থিতিও সীমিত। ফলে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও কমে গেছে বিক্রি। এতে করে সব পণ্যের দাম কমেছে। এদিকে ডিম ও সবজির দাম কমলেও এখনো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল এবং নতুন করে বেড়েছে ডালের দাম।
সাতক্ষীরা বড় বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী মনিরুজ্জান লিটন জানান,ক্রেতা না থাকায় পোয়াজ,রশুনের দাম কমেছে। বিক্রি না হওয়ায় অনেক পেয়াজ নষ্ট হচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ক্রেতা কম থাকায় অনেক সবজি অবিক্রিত থেকে যায়। এজন্য সীমিত লাভে সবজি বিক্রি করছেন তারা। এক ডজন ডিম ৯০-১০০ টাকা থেকে কমে ৭৫-৮০ টাকায় নেমে এসেছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) তথ্য বলছে, উৎপাদন পর্যায়ে ডিমের দাম সাড়ে ৫ টাকা থেকে কমে ৪ টাকা ২০ পয়সায় নেমে এসেছে।
এদিকে বাজারে বেশিরভাগ সবজি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২৫ টাকার মধ্যে। প্রতি কেজি টমেটো ১০-১৫ টাকা, বেগুন ১৫-২০ টাকা, উস্তা ৬০-৮০ টাকা, ঢেঁড়স ১০-২০ টাকা, আলু ১৮-২০ টাকা, চিচিংগা ২০ টাকায় এবং মাঝারি আকারের লাউ ১৫-২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সজিনা ২শ টাকা থেকে কমে একশ টাকায়,পুঁইশাক মাত্র ১০ টাকা কেজি, কচুর লতি মাত্র ১৫ টাকা, রুই মাছ বড় সাইজ মাত্র ২০০ টাকা, করোনা শনাক্তের পর বাজারে ৩৫ টাকার পেঁয়াজ হঠাৎ ৮০ থেকে ৯০ টাকা হয়ে যায়, অথচ এখন বাজারে যথেষ্ট পেঁয়াজ রয়েছে, দাম ২৫-৩৫ টাকা কেজি প্রতি। তবে গরুর গোশত বাদে দাম কমেছে অন্যান্য গোশতের। প্রতি কেজি ব্রয়লার, লেয়ার,সোনালি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে বলে ক্রেতারা জানান।
একজন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, বাজারে নাজির শাইল, মিনিকেট, পাইজাম, স্বর্ণা চাল প্রতি বস্তায় ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে।
সুলতানপুর বড়বাজারে এক চাল বিক্রয়কর্মী বলেন, মিল মালিক ও আড়তদাররা চালের দাম বাড়িয়েছেন। তাই পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বেশি। খুচরায় ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি চাল।
মশলার বাজারে জিরা, লবঙ্গ, দেশি আদা ও এলাচের দাম বেড়েছে। শনিবার পাইকারী দামে এক কেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার ৫শত টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে যার দাম ছিল ২৮শ থেকে ৩২শ টাকা। এক কেজি লবঙ্গ ৮শটাকা,গোল মরিচ ৭২০ টাকা কেজি। সব মসলায় শতকরা ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান।
তবে অসৎ ব্যবসায়ীরা বসে নেই, তারা সুযোগ খুঁজছে বেশি দামে বিক্রির জন্য। সেকারণে পণ্য সংকট না থাকলেও এরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে থাকে এবং সুযোগ পেলে দাম বাড়িয়ে দেয়। অবশ্য সেরকম তথ্য পাওয়া যায়নি সাতক্ষীরা বড়বাজারের তথ্য নিয়ে।
আসন্ন রমজান কিংবা অবনতিশীল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে নিত্যপণ্যের কোনো সংকট হবে না জানিয়েছে ব্যবসায়ী ও খাদ্য মন্ত্রণালয়সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চাল,ডাল,তেলসহ কয়েকটি পণ্য সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সাধারণ মানুষের জন্য তুলনামূলক কম দামে পণ্য বিক্রি করছে।
টিসিবি জানিয়েছে, মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৫০ টাকায়। এ ছাড়া সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ৮০ টাকা ও পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে সংস্থাটি।বাজারে এসব পণ্যের দাম বেশ চড়া।
এদিকে জেলাতে টিসিবির পণ্য অসদুপায় অবলম্বনের মাধ্যমে ক্রয় করে বিক্রির জন্য মজুদ করার অপরাধে সাতক্ষীরায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এক দোকানদারকে ২৫০০০ (পঁচিশ হাজার) টাকা জরিমানা করেছে ভ্রা¤œম্যান আদালত।
জেলাম্যাজিস্ট্রেট জনাব এস এম মোস্তফা কামাল জানান, শনিবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সাতক্ষীরার পিএন স্কুল মাঠের কাঁচা বাজার, বহ্মরাজপুর বাজার, ফিংড়ি বাজার ও শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বাজার মনিটারিং করা হয়েছে। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
আবু সাইদ বিশ্বাস

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।