প্রাণ বাঁচবে লকডাউনে ॥ এখনও আবিষ্কার হয়নি করোনার প্রতিষেধক

ক্রাইমর্বাতাবাতা রিপোট:  বৈশি^ক মহামারীতে রূপ নেয়া কোভিড-১৯ প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত প্রতিষেধক আবিষ্কারের খবর নেই। করোনার ভয়াল ছোবলে কুপোকাত ক্ষমতাধর দেশগুলোও। নানা পদক্ষেপের পরও ঠেকানো যাচ্ছে না মৃত্যুর মিছিল। ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে মৃত্যু ঠেকাতে পারে লকডাউন বা জরুরী অবস্থার মতো দৃশ্যমান পদক্ষেপ। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা না গেলে আরও ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে পড়তে পারে গোটা বিশ^। তাই বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাসহ আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থাগুলো পরামর্শ দিয়ে বলছে, এই মুহূর্তে লকডাউন বা মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে নেয়া কোন পদক্ষেপ থেকেই সরে আসা যাবে না। লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব, কার্ফু বা জরুরী অবস্থাই মানুষকে বাঁচানোর একমাত্র পথ। করোনা প্রতিরোধে অন্যান্য দেশের মতো দেশেও সরকারের পক্ষ থেকে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। প্রাণঘাতী ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চীন ছাপিয়ে অন্যান্য দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় বিশ^ব্যাপী স্বাস্থ্য জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয় বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে। এরপর থেকেই সতর্ক বাংলাদেশ। আট মার্চ প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। করোনা প্রতিরোধে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়েছে। নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। একই সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সকল প্রকার গণপরিবহন। সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত বাড়ি থেকে বের হতে নিষেধ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে নেয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা। এদিকে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। কার্যত সারাদেশে লকডাউন চলছে। সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত কাঁচাবাজার ও পাড়া-মহল−ার দোকান খোলা। সন্ধ্যা ছয়টার পর থেকে ফার্মেসি থেকে শুরু করে সব ধরনের দোকানপাট বন্ধের নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। করোনায় এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের মধ্যে ঢাকায় ৫২ শতাংশ। এরপরই রয়েছে নারায়ণগঞ্জের স্থান। মৃত্যুর সংখ্যার দিক থেকেও রাজধানী এগিয়ে। এই পরিস্থিতিতে বাঁচার একমাত্র পথ হলো ঘরে থাকা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশে^র আক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় বাংলাদেশের স্থান। আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বিবেচনায় এই আভাস বিশেষজ্ঞদের। তাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তারা বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে পারে। বিশে^র বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে আক্রান্ত শুরুর একমাস পর তা দ্রুত ছড়িয়ে যায়। ফলে বাড়ে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। বৈশি^ক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখনই সময় সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়ার। তাহলেই মৃত্যু ও আক্রান্তের হার রোধ করা সম্ভব হবে। বাঁচবে প্রাণ। লকডাউন বাঁচাতে পারে প্রাণ ॥ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রোস আধানম গ্রেব্রেয়েসাস সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, বিশ্বের দেশগুলো যদি সামাজিক দূরত্বের কড়াকড়ি খুব তাড়াতাড়ি তুলে নেয়, তাহলে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ বিস্তার ঘটতে পারে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন দেশ লকডাউন তুলে নেয়ার পরিকল্পনা করছে। যার প্রেক্ষিতে চূড়ান্ত সতর্কবার্তা দিল বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা। তিনি বলছেন, অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়লেও বিধিনিষেধ শিথিল করার ক্ষেত্রে দেশগুলোকে সতর্ক হতে হবে। লকডাউন অব্যাহত থাকলেও ইউরোপের দেশ ইতালি ও স্পেন বেশ কিছু পদক্ষেপ শিথিল করেছে। জেনেভায় একটি সম্মেলনে টেড্রোস বলেছেন, খুব দ্রুত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়া হলে করোনাভাইরাস ভয়ঙ্করভাবে ফিরে আসতে পারে। তিনি বলছেন, মানুষের জীবন-যাপনের ওপর থেকে কড়াকড়ি তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে দেশগুলো পর্যায়ক্রমে আরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কৌশল নিতে হবে। টেড্রোস বলছেন, অন্য সবার মতো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও কড়াকড়ির অবসান চায়। কিন্তু একই সময়ে এটাও মনে রাখতে হবে, খুব তাড়াতাড়ি এসব বিধিনিষেধ তুলে নেয়া হলে ভাইরাসের আবার ভয়াবহ বিস্তার দেখা দেবে। তখন হয়তো এতটাই ভয়াবহ হবে যে, আর সামলানো যাবে না। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অন্য অনেক দেশে ভাইরাসটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পৌঁছে গেছে প্রাণঘাতী কোভিড-১৯। লকডাউন নিয়ে ব্রিটেনের গবেষণা ॥ ব্রিটেনের এক গবেষণা অনুযায়ী করোনা সঙ্কটের কারণে লকডাউনের ফলে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। সংক্রমণের আসল চিত্র পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও সরকারী পদক্ষেপ সফল হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যারা করোনা সঙ্কটের কারণে কার্যত গৃহবন্দী, তাদের মনে প্রশ্ন জাগছে, লকডাউনের ফলে কি আদৌ কোন লাভ হচ্ছে? নাকি ঘর থেকে বের হয়ে সাবধানে থাকলেই চলত? লন্ডনের ইম্পিরিয়াল কলেজের গবেষণা অনুযায়ী লকডাউনের মাধ্যমে সত্যি অনেক মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে। মার্চের শেষ পর্যন্ত ইউরোপের ১১টি দেশে ৫৯ হাজার মানুষ প্রাণে বেঁচে গেছেন বলে গবেষণা রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। তাছাড়া লকডাউনের কারণে ভাইরাসের প্রসার নাটকীয় মাত্রায় কমেছে। এমনকি স্বাস্থ্য পরিষেবা অবকাঠামোর ওপর চাপ সত্ত্বেও লকডাউনের ফলে আখেরে উপকার হচ্ছে। ইউরোপে ইতালি ও স্পেনের মতো করোনা সঙ্কটে জর্জরিত দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গবেষকরা দুই পরিস্থিতির মধ্যে তুলনা করেছেন। বর্তমান পরিস্থিতি এবং স্কুল-কলেজ, বড় অনুষ্ঠান ইত্যাদি বন্ধ না করলে কী হতো, সেই অবস্থার সম্ভাব্য পরিণাম খতিয়ে দেখা হয়েছে। গবেষণা অনুযায়ী স্পেনে প্রায় ১৬ হাজার মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। ফ্রান্সে সেই সংখ্যা আড়াই হাজার। বেলজিয়ামে ৫৬০, জার্মানিতে ৫৫০, ব্রিটেনে ৩৭০ জন প্রাণে বেঁচে গেছেন। গবেষণার রিপোর্টের ভিত্তিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার একেবারে কমে আসা পর্যন্ত লকডাউন চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এভাবে আরও মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে বলে উলে−খ করা হয়েছে। বিশ্বের বাকি অংশে লকডাউনের ফলে কত মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হচ্ছে, সে বিষয়ে এখনও কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। দেশে দেশে পদক্ষেপ ॥ করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে জরুরী অবস্থা, কার্ফু, লকডাউন, বিমানবন্দর বন্ধ, ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, সীমান্ত যোগাযোগ বন্ধসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। দেশের সীমান্ত পর্যটকদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। পর্যটকদের জন্য সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে ব্রাজিল। ১৮ মার্চ থেকে দুই দেশের মধ্যবর্তী সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। ক্রোয়েশিয়াও দেশের বাইরে যাত্রী প্রবেশে আরোপ করেছে কড়া নিষেধাজ্ঞা। ডেনমার্ক সব পর্যটক আর বিদেশীদের দেশের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আশপাশের ইউরোপিয়ান বিভিন্ন দেশ থেকে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে জার্মানি। একই পদক্ষেপ নিয়েছে গ্রিস। এরই মধ্যে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের ভিসা বাতিল করেছে ভারত।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।