হাসপাতালে ভর্তি হতে গর্ভবতী নারীসহ ৫ করোনা রোগীর রাতভর লড়াই (ভিডিও)

ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট:  রাত এগারোটা। কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের লবিতে অপক্ষো করছিলেন পাঁচ ব্যক্তি। তদের মধ্যে একজন নারী। যিনি গর্ভবতী। এই পাঁচজনেরই নভেল করোনা ভাইরাস পজিটিভ। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেস্টে করোনা শনাক্ত হওয়ার পরই তারা ভর্তি হতে এসেছিলেন। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় ছিল না। আক্রান্ত অবস্থায় রাতভর হাসপাতাল থেকে হাসপাতালের দরজায় কড়াই নেড়েছেন।

প্রাণঘাতি ভয়াবহ এই সংক্রমণ নিয়ে ঘুরতে হয়েছে তাদের। এই পাঁচজনের দেহেই গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় করোনার সংক্রমণ পাওয়া যায়। শনাক্ত হওয়ার পরই তাদের স্থানান্তর করা হয় করোনার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল রাজধানীর উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে। রাতেই কথা হয় তাদের মধ্য থেকে দুজনের সঙ্গে। এদের মধ্যে যে প্রসুতি করোনা পজিটিভ ছিলেন তিনি মানবজমিনকে বলেন, সন্ধ্যার দিকে আমাদের করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে।  আমাদের  কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে পাঠান ডাক্তররা। ওই নারী জানান, যে অ্যাম্বুলেন্সে করে আমাদের কুয়েত মৈত্রীতে পাঠানোর কথা সেখানকার ড্রাইভার কুয়েত মৈত্রী না নিয়ে কুর্মিটোলায় নামিয়ে যান। এরপর সেখানে সন্ধ্যা সাতটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করি। হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে বসেই ছিলাম। কেউ এগিয়ে আসেননি। আমাদের বলা হয়, ‘আপনাদের কুয়েত মৈত্রীতে রেফার করা হয়েছে। সেখানে যান। আমাদের এখানে ভর্তি করানো যাবে না।’ আমরা এতবার রিকোয়েস্ট করার পরও কেউ শুনেনি। বারবার বলেছি আমি প্রেগনেন্ট। আমার খুব খারাপ অবস্থা। ভয়াবহ ওই পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে তিনি আরো বলেন, পৃথিবীতে এতটা অসহায় কখনো হইনি। এমন অসহায় অবস্থায় কোথায় যাবো। কি করবো বুঝতে পারছি না। আমাদের কি হবে। কুর্মিটোলায় অবস্থানকালেই ওই নারী আরো জানান, আমরা এখন কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে যাচ্ছি। এখানে আমাদের কেউ একটা অ্যাম্বুলেন্সও ঠিক করে দিলো না। কত অমানবিক মানুষ। এই অসুস্থ অবস্থায় নিজেরাই একটা অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করেছি। রাত পৌনে বারোটার দিকে কুয়েত মৈত্রী হাসাপাতালে পৌছান ওই পাঁচজন। সেখানে গিয়ে আরো বিপাকে পড়তে হয় তাদের। হাসপাতালের ফটকে অবস্থান নেন। কিন্তু ভেতর থেকে কেউ সাড়া দেননি। কিছুক্ষণ পর হাসপাতালের কর্মরত এক ব্যক্তি দূর থেকে এসে তাদের অবস্থার কথা শোনেন। তবে কুয়েত মৈত্রীতে কোনো শয্যা খালি নেই বলে সাফ জানিয়ে দেন। অবশ্য হাসপাতালের একটি সূত্র মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছে, কুয়েত মৈত্রীর করোনা ইউনিটের জন্য ২’শটি শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছিল। সোমবার রাত পর্যন্ত ১৯২টি শয্যা পরিপূর্ণ ছিল। এরপর আর নতুন কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি করানো হয়নি। রাতে  হাসপাতালের পরিচালক ডা. সারোয়ার আলমকে ফোন করলে তিনি ব্যস্ততার কথা জানিয়ে পরে ফোন করার পরামর্শ দেন। জরুরি কথা আছে অনুরোধ করলে তিনি কথা বলতে রাজী হন। সন্ধ্যা থেকে ওই পাঁচজনের বিষয়ে যাবতীয় তথ্য জানানোর পর ডা. সারোয়ার আলম বলেন, আচ্ছা আমি দেখছি। এরই মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে রোগীদের না গ্রহণ করার ঘটনাটির একটি ভিডিও মানবজমিনের কাছে আসে। সেখানে দেখা যায়, ওই পাঁচজন বারবার আকুতি জানাচ্ছেন। একজন গর্ভবতী নারী রয়েছেন এমনটা জানিয়ে আকুল আবেদন করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। ফটক না খুলেই হাসপাতালের কর্মরতরা ভেতর থেকে বলে দেন কোনো সিট খালি নেই। এভাবেই রাত সাড়ে ১২টা অবধি কাটে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের ফটকের সামনে। তবে এই পাঁচ ব্যক্তির চারজন শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেন ঢামেকেই ফিরে যাবেন। রাতেই সেখানে ফিরে যান। তাদের মধ্যে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের এক কর্মীও রয়েছেন। তিনি আজ মঙ্গলবার সকালে বিস্তারিত জানান। মানবজমিনকে ওই ব্যক্তি বলেন, আমি এখানে চাকরি করি। আমার গ্রামের বাড়ি ফেনীর পশুরামে। গতকাল সন্ধ্যায় করোনা ভাইরাস ধরা পড়ার পর আমাদের এক অ্যাম্বুলেন্সে করে পাঠানো হয়। রাতের সব কথা তো জানেন। কুয়েত মৈত্রী থেকে আমাদের বিদায় দেয়ার পর আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। পরে রাতেই ঢাকা মেডিকেলে চলে আসি। এখানে ভর্তি হতে হতে রাত তিনটা বাজে। সারারাত মনে হয় একটা যুদ্ধের মধ্যে ছিলাম। কারো সহযোগিতা পাইনি। রোগীদের ফটক থেকে ফিরিয়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে আবারো মঙ্গলবার সকালে কুয়েত মৈত্রীর পরিচালককে ফোন দেয়া হয়। কিন্তু একাধিকবার কল দিলেও ডা. সারোয়ার আলম তরিসিভ করেননি। তবে পরে কল ব্যাক করলেও পরিচয় পাওয়ার পর তিনি পরে কথা বলবেন বলে জানান।

জানান।

Please follow and like us:

Check Also

২৫ হাজার সরকারি টিউব অয়েলে উঠছে না পানি: দুষ্পাপ্য পানযোগ্য পানি: সাতক্ষীরার জনজীবনে হাঁসফাঁস

আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরাঃ তীব্র খরা: বৃষ্টি হীনতা ও পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় জেলা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।