শ্যামনগরে ফিরে আসা ইটভাটা শ্রমিকদের মানবেতন জীবন

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ: এলাকায় ফেরার পর থেকে দিন রাত ঘরে কাটাচ্ছি। কোম্পানী টাকা না দেয়ায় শ্রমিক সর্দার বাকি টাকা দিচ্ছেনা। চেয়ারম্যান মেম্বরের থেকে এখনও কোন সাহায্য পায়নি। বাধ্য হয়ে পাশের দোকান থেকে বাকি নিয়ে দিন পার করতি হচ্ছে। কর্মহীন হয়ে ঘরে আটকে থাকা কৈখালী ইউনিয়নের পুর্ব কৈখালী গ্রামের আব্দুল্লাহ গাজীর দাবি এমনই।
বরিশালের হিজলা এলাকার ইট ভাটায় শ্রমিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন তিনি। করোনার কারনে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে সম্প্রতি সহযোগীদের সাথে তিনিও এলাকায় ফিরেছেন। অন্য জেলা থেকে আসায় ঘর ছেড়ে কাজের সন্ধানেও যেতে পারছে না। এদিকে কাজ সম্পুর্ণ করে না আসায় মালিক পক্ষ আপাতত বকেয়া টাকা দিচ্ছে না। এমতাবস্থায় চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে দিন কাটানোর কথা জানালেন ছয় সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী।
কেবল আব্দুল্লাহ নয়। বরং ধুমঘাট ঈশ^ীরপুর ইউনিয়নের গ্রামের মোঃ শাহাজান আলীর অভিযোগ অভিন্ন। পাঁচ জনের সংসার তাকে টানতে হয় জানিয়ে সদ্য বরিশালের ইট ভাটা থেকে বাড়িতে ফেরা শাহাজান জানায় ভিন্ন জেলা থেকে আসায় আপাতত ঘরে স্বেচ্ছা বন্দি। মালিক হিসাব শেষ না করায় সর্দারের কাছে পাওনা পঁিচশ হাজার টাকা আটকে গেছে। কাজ বন্ধ থাকার পর থেকে ধার দেনা করে সংসার চলছিল জানিয়ে তিনি জানান বাড়িতে ফেরার পর থেকে পাওনাদারের তাগাদা বেড়ে গেছে। এদিকে সরকারি কোন সহায়তা না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে।
এমন দুর্দশা নেমে এসেছে উপকুলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার বিভিন্ন অংশে বসবাসরত হাজারও ইট ভাটা শ্রমিকের পরিবারে। দেশের বিভিন্ন অংশে ইট ভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাওয়ার পর সম্প্রতি তারা এলাকায় ফিরতে বাধ্য হয়েছে। মৌসুম শেষ না করার পাশাপাশি মালিকের সাথে শ্রমিক সর্দারদের হিসাব সম্পন্ন না হওয়ায় আটকে গেছে তাদের চুক্তির টাকা। এলাকায় ফিরেও তারা কাজের সুযোগ না পাওয়ার পাশাপাশি বঞ্চিত হচ্ছে সরকারি বেসরকারি সাহায্য সহায়তা থেকে। ফলে সদ্য ইট ভাটা থেকে ফেরা এসব শ্রমিক চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে।
ধুমঘাটের সাইফুল ইসলাম ও সালমা বেগমসহ কয়েক শ্রমিক জানায় বাইরের ইট ভাটায় কাজ করতে যাওয়ায় সরকারি সহায়তার জন্য তৈরী তালিকায় তাদেরকে অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি। সেকারনে শুরু থেকে তাদেরকে অদ্যবধি কোন সহায়তা দেয়া হয়নি। এলাকায় ফিরে ঘরবন্দি হওয়ার পাশাপাশি কাজকর্মে যেতে না পারায় পরিবারের সদস্যরা নিদারুন খাদ্য সংকটে পড়েছে বলেও দাবি তাদের।
কালিঞ্চি গ্রামের আব্দুর রহিম, কাশিমাড়ির মোস্তাফাসহ অসংখ্য শ্রমিক জানায়, এক জেলার সাথে অপর জেলায় যোগাযোগ বন্ধ থাকায় চার পাঁচগুন বেশী ভাড়া গুনে লুকিয়ে এলাকায় ফিরতে হয়েছে। শ্রমিক সর্দার আর ভাটা মালিকরা ভাটার টাকা কেটে নেয়ায় বকেয়া পাওনা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় অর্ধ্বাহারে অনাহারে অনেকের দিন কাটছে বলেও তারা জানায়।
কৈখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল রহিম জানান, বাড়িতে ফেরার পর থেকে ইট ভাটা শ্রমিকরা হোম কোয়ারেন্টিনে। কাজের টাকা বকেয়া থাকার দরুন তারা চরম অসহায়ত্মের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

Check Also

উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তুলব: পরিদর্শন বইয়ে প্রধানমন্ত্রী

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।