যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টার ৬৫টি নমুনার মধ্যে ১৩টিতে করোনার জীবাণু

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:   যশোরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভয়ানকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে মরণব্যাধী করোনাভাইরাস । যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে পঞ্চম দিনের পরীক্ষায় ৬৫টি নমুনার মধ্যে ১৩টিতে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে। যার মধ্যে নড়াইলের চারজন ডাক্তারের নমুনাও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আর যশোরের সিভিল সার্জনও নিশ্চিত করেন যে, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় নতুন করে চারজন চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত  হয়েছেন। এই ঘটনার পর আজ সকাল থেকে লোহাগড়া উপজেলাকে লকডাউনের আওতায় এনেছেন জেলা প্রশাসক।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের সহকারী পরিচালক প্রফেসর ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, মঙ্গলবার এখানে দক্ষিণ-পশ্চিমের সাত জেলার সন্দেহভাজন রোগীদের ৬৯টি নমুনা আসে। তার মধ্যে ৬৫টি নমুনা পরীক্ষার ফল নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর ১৩টিই পজেটিভ।

বাকি ৫২টি ছিল নেগেটিভ।
তিনি জানান, ১৩টি পজেটিভ নমুনার মধ্যে যশোর জেলার চারটি, কুষ্টিয়ার দুটি, মেহেরপুরের একটি, মাগুরার একটি এবং নড়াইলের পাঁচটি রয়েছে। নড়াইলের পাঁচটি নমুনার মধ্যে চারটিই চিকিৎসকের। এর মধ্য দিয়ে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের প্রায় সব জেলা করোনা আক্রান্তের আওতায় এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নড়াইলের এই চার চিকিৎসক লোহাগড়ায় একই হাসপাতালে কর্মরত। আর যশোরের যে চার করোনা রোগী শনাক্ত হলেন, তাদের মধ্যে একজন শার্শার, একজন সদরের চুড়ামনকাটি ও বাকি ২ জন চৌগাছা অঞ্চলের বাসিন্দা। চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বলছেন, নতুন আক্রান্তদের মধ্যে তার এলাকার দুইজন রয়েছেন বলে তিনি প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছেন। যাদের একজন ৮ম শ্রেণীর ছাত্র ও অপরজন গৃহবধু (৪৮)।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত শুক্রবার থেকে করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রথম চার দিনের নমুনাগুলোতে একটিও পজেটিভ রিপোর্ট আসেনি। পঞ্চম দিনে হঠাৎ করে ১৩ করোনা রোগী শনাক্ত হলেন।
এই বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) ও জেনোম সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন বুধবার সকালে সাংবাদিকদের বলেন, ‘ কোন গুচ্ছ (ক্লাস্টার) থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে, তার ওপর নির্ভর করে রিপোটর্রে ফলাফল। কালেকশনে যদি ত্রিটি না থাকে, তাহলে ফলাফল অ্যাকিউরেট হওয়ার কথা।’
তিনি জানান, মঙ্গলবার নতুন কিট দিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এদিন সরকারের পক্ষ থেকে ৪৮০টি কিট পায় যবিপ্রবি। এর আগে শুক্রবার নমুনা পরীক্ষার শুরুতে ৪০০টি কিট সরবরাহ করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টিকে।
তাহলে কি প্রথম দফায় আসা কিট ত্রুটিপূর্ণ ছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে ভিসি ড. আনোয়ার বলেন, ‘না, তা বলা যাবে না। ত্রুটিপূর্ণ কোনো কিটে পজেটিভ বা নেগেটিভ- কোনো রিপোর্টই পাওয়া যায় না।’
‘তা সত্তেও সন্দেহ দূর করার জন্য আমরা প্রথম চার দিনের নমুনাগুলোর মধ্যে থেকে র‌্যান্ডমলি রিচেক করবো,’ বলছিলেন ভিসি।
পঞ্চম দিনের পরীক্ষার ফলাফল চূড়ান্ত হয় মঙ্গলবার দিনগত রাত তিনটার দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি জানিয়েছেন, ফলাফল হাতে পাওয়ার পর পরই তা ই- মেইল ও অন্য মাধ্যমে আইইডিসিআর এবং স্ব স্ব জেলার সিভিল সার্জনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আজ বুধবার সকালে যোগাযোগ করা হলে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন এই জেলায় নতুন করে চারজনের করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার কথা নিশ্চিত করেন। তবে তারা কোন এলাকার লোক, তা তখনই নিশ্চিত করতে পারেননি সিএস। বলেন, অফিসে গিয়ে তালিকা দেখে নিশ্চিত হওয়া যাবে। পরবর্তীতে তিনি টেলিফোনে করোনা শনাক্ত রোগীদের এলাকা নিশ্চিত করেন।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মঙ্গলবার পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা, নড়াইল এবং বাগেরহাটে একজন করে করোনা রোগীর সন্ধান মেলে। আর খুলনার এক মৃত ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায় মঙ্গলবারই।
আজ যবিপ্রবি থেকে পাওয়া ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, এই অঞ্চলের নড়াইল ও যশোরে করোনাভাইরাস বেশ ছড়িয়েছে। এছাড়া কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, মাগুরা এতোদিন করোনামুক্ত মনে করা হলেও এখন সেখানে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি আছেন, তা নিশ্চিত হলো। এদিকে সম্প্রতি নারায়নগঞ্জ থেকে ট্রাকে ও কাভার্ড ভ্যানে করে কয়েকশ’ ইট ভাটার শ্রমিক রাতের অন্ধকারে সাতক্ষীরায়  ফেরেন। তাদের একটি গ্রুপকে যশোর পুলিশ ও অপর একটি গ্রুপকে মাগুরা সদর থানা পুলিশ আটক করে। পরে সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসকে অবহিত করে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। এছাড়া ঢাকা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ ও সাভার এলাকার গার্মেন্টেসে কর্মরত কয়েক শ’ শ্রমিক বিভিন্ন পন্থায় গত এক সপ্তাহে যশোরের চৌগাছা, ঝিকরগাছা, সদর ও বাঘারপাড়া এলাকায় বাড়ি ফিরেছে। এছাড়া প্রায় প্রতি দিনই বেনাপোল , ভোমরা  ও দর্শনার গেদে বর্ডার দিয়ে ভারতে আটকে পড়া বৈধ নাগরিকরা দেশে ফিরে আসছেন। যাদের অনেককে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে ও বাকিদের হোম কোয়ারেইন্টানে পাঠানো হচ্ছে। এসব আগতদের রক্তের নমুনা পরীক্ষার কোন উদ্যোগ নেই । ফলে আশংকা করা হচ্ছে নমুনার প্রসার বৃদ্ধি  পেলে এসব জেলা বা উপজেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা জ্যমিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে।
যবিপ্রবির উপাচার্য জানিয়েছেন, সরকার এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আরএনএ আইসোলেশন কিট সরবরাহ করেনি। এখনো পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের আরএনএ আইসোলেশন কিট পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। যেহেতু এখানে জেনোম সেন্টার রয়েছে, তাই রিএজেন্টও থাকে।
দ্রিত আরএনএ আইসোলেশন কিট সরবরাহের দাবি জানিয়ে ভিসি প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, না হলে এখানে করোনা পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

Please follow and like us:

Check Also

চট্টগ্রামে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের নির্দেশনায় পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগ এর বৃক্ষরোপন কর্মসূচি

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নির্দেশনায় তীব্র তাপপ্রবাহ থেকে মুক্তি ও SDG অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ১০ দিনে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।