আম্পান উপদ্রুব এলাকায় জলবায়ু সুবিচারের দাবি তরুণদের

পদ্মপুকুর (শ্যামনগর) প্রতিনিধি ॥ শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নে সুপার সাইক্লোন আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ বিশ্ব হেরিটেজ খ্যাত সুন্দরবন ও তার প্রাণবৈচিত্রের সুরক্ষার পাশাপাশি প্রকৃতি নির্ভর সমাধান গ্রহণের মাধ্যমে উপকূলীয় এলাকায় জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানিয়েছে তরুণরা। বিশ্ব^ পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সুইডিস কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গের নেতৃত্বাধীন ফ্রাইডেস ফর ফিউচার আন্দোলনে অংশ নিয়ে তরুণ জলবায়ু কর্মীরা এ দাবি জানায়। গণ-অংশীদারিত্বে টেকসই বাঁধ নির্মাণ, আম্পানের ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত কাটিয়ে ওঠার জন্য মানব-মর্যাদা অক্ষুন্ন রেখে অনতিবিলম্বে পুণর্বাসন এবং করোনা মহামারীকে মাথায় রেখে এখন থেকেই পরবর্তী ঘুর্ণিঝড় মোকাবিলায় যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের আহবান জানান আন্দোলন কারীরা। গত শুক্রবার সকাল ৯টায় পদ্মপুকুর ইউনিয়ন ছোট চন্ডিপুর বেড়ি বাঁধের পাশে ক্লাইমেট স্ট্রাইক অনুষ্ঠিত হয়। একশন এইড বাংলাদেশের সহযোগিতায় এ কর্মসূচির আয়োজন করে যুব নেটওর্য়াক ইয়ুথনেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিস এতে অর্ধশত তরুণ প্লাকার্ড হাতে নিয়ে ও স্লোগান দিয়ে ক্লাইমেট জাস্টিসের দাবি তোলে। আয়োজক সংস্থা ইয়ুথনেটের সাতক্ষীরা জেলা সমন্বয়ক এসএম শাহিন আলম বলেন, জলবায়ু সংকট আমাদের উপকূলীয় মানুষের জীবন জীবিকায় খুবই নেতিবাচকভাবে প্রভাব ফেলছে। করোনা মহামারীর মধ্যে জলবায়ু সংকট আমাদের জীবন বিশেষ করে বিশ্ব হেরিটেজের খ্যাতি পাওয়া সুন্দরবন লাগোয়া উপকূলীয় মানুষের জীবনযাত্রার মরার উপর খাড়ার ঘা হিসেবে জেঁকে বসেছে। একদিকে করোনায় বহুদিনের কর্মহীনতা আবার অন্যদিকে ‘আম্পানে’ স্বজন হারা, ঘর হারা, ফসল হারা এই সব মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হওয়ার চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে পদ্মপুকুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এসএম আতাউর রহমান বলেন, করোনাকালীন এই সময়ে উপকূলীয় জীবনযাত্রায় আম্পানের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার সমাধান খোঁজার আগে স্থানীয় মানুষের কথা শোনা গুরুত্বপূর্ণ। উপদ্রুব এলাকায় সরকারি সকল কার্যক্রমে সাধারণ জনগণের কৃষক, মাছ চাষি, শিক্ষক ও স্থানীয় রাজনৈতিক ও এনজিও প্রতিনিধি এলাকাভিত্তিক সমন্বয় কমিটিতে যুক্ত করা জরুরী। তরুণ, নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গকেও সম্পৃক্ত করতে হবে। বাঁধ মেরামত দেখভালের দায়িত্ব গণশুনানী করে স্থানীয় জনগণের হাতে ন্যস্ত করা, জলবায়ু কমিশন ও উপকূল উন্নয়ন বোর্ড স্থাপন করা, জাতীয় বাজেটে জলবায়ু সংকট কবলিত এলাকার জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি তোলেন বক্তারা। এসময় তারা বলেন, দূর্যোগকালীন সময়ে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার প্রয়োজনে আশ্রয়কেন্দ্র বাড়ানো, স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর আগাম যথাযথ সরবরাহ, পারস্পরিক মানবিকতাবোধ ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে হবে। সমাজভিত্তিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্ব^ সম্প্রদায়কে সাইক্লোন উপদ্রুব এলাকার পুর্ণগঠনে ‘ক্ষতিপূরণ’ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। উপকূলীয় মানুষ অভিযোজনের অবস্থায় আর নেই। তাই গ্লোবাল ক্লাইমেট ইমাজেন্সি ঘোষণা করে অঙ্গীকারকৃত নির্গমণ কমাতে জরুরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ফ্রাইডেস ফর ফিউচার বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সোহানুর রহমান বলেন, করোনা মহামারীতে জলবায়ু সংকট থেমে নেই। বিপদাপন্ন মানুষের জন্য জলবায়ু ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে এখনই! জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় বৈজ্ঞানিক গবেষণায় গুরুত্ব দিতে হবে এবং বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এ সংক্রান্ত তথ্য বিনিময়সহ আন্তর্জাতিক নদীর পানি বিনিময়ে একসাথে কাজ করতে হবে। জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় সার্ককে সক্রিয় করা যেতে পারে। করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে মানুষের জন্য নেয়া সরকারের প্রণোদনার ধরন ও বাস্তবায়ন, সুবিধাভোগী নির্বাচন, বিভিন্ন বিষয়ে নেয়া নীতি নিয়ে যে প্রশ্ন সমূহ সামনে এসেছে এখন আরও অধিকতর সংকটে সেগুলো নিয়ে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। এই মহা দুর্যোগকালীন সময়ে সরকারী কার্যক্রমে শুধু স্বচ্ছতাই নয় বরং ন্যায্যতা নিশ্চিত করা আরও বেশি জরুরী বলে তিনি উল্লেখ করেন। তাই উর্ধ্বাতন কর্মকর্তাদের নিকট অকুল আবেদন সচেষ্ট হয়েছে আন্দোলনটি। বাংলাদেশে এই আন্দোলনের দাবির মুখে গত বছরের ১৩ নভেম্বর বিশ্বে প্রথমবারের মত প্লানেটরি ইমার্জেন্সি প্রস্তাব গ্রহণ করে জাতীয় সংসদ।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।