ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে সাতক্ষীরায় ধান থেকে চাল সংগ্রহে ব্যস্ত গ্রামের কিষান কিষানি

আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমর্বাতা রিপোট: সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় ধান থেকে চাল সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কিষান কিষানিরা। বছর জুড়ে ঘরের খোরাকি গোছাতে ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ধান সিদ্ধ শুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে তারা। তবে বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের। এদিকে ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ আশাশুনির শোভনালী,প্রতাপনগর,শ্যামনগরের গাবুরাসহ কয়েকটি ইউনিয়ন এখনো পানি বন্ধ থাকায় তারা ধান সিদ্ধ শুকাতে পারছে না। এছাড়া ঘুর্ণিঝড় আম্ফান ও দেরিতে লাগানোর কারণে অনেক চাষী এখনো ক্ষেত থেকে ধান তুলছে।
জেলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে মহিলাদের ধান সিদ্ধের ব্যস্ততা উঠে আসে চোখে পড়ার মত।
বর্ষা মৌসুমে মৎস্য ঘেরে চিংড়ি চাষ হওয়ার কারণে বোরো মৌসুমে জেলাতে ব্যাপক হারে ইরি বোরো চাষ হয়ে থাকে। গত কয়েক বছর ধরে জেলাতে বোরো ধানের আবাদ বৃদ্ধি পেতে আছে। চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় ৭৫ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। এসব আবাদের পিছনে প্রত্যক্ষও পরোক্ষ ভাবে ১০ লক্ষ নারী ও পুরুষ জড়িত। এছাড়া জেলাতে বসবাসরত ২৪ লক্ষ মানুষের প্রধান খাদ্য ও ধান থেকে আসে।
জেলা কৃষি বিভাগের হিসাব মতে জেলাতে ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৩০ হেক্টর ফসলি জমি আছে। এসব জমিতে ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫৫০টি পরিবার কৃষি কাজ করে থাকে। এর মধ্যে ভুমিহীন চাষী রয়েছে ৬৭ হাজার ২৩০টি,প্রান্তিক চাষী রয়েছে এক লক্ষ ৩১ হাজার ৩৭টি,ক্ষুদ্র ্রচাষী রয়েছে এক লক্ষ ৯৫৭টি, মাঝারি চাষী রয়েছে ৪৪ হাজার ৮৪২টি এবং বড় চাষী রয়েছে ১৪ হাজার ৪৮৪টি। মোট ১৪ লক্ষ ৩৪ হাজার ২শ ব্যক্তি সরাসরি কৃষির সাথে জড়িত। এসব কৃষকের মধ্যে বর্তমান বোরো চাষের সাথে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ জড়িত।
সদরের দহখুলা গ্রামের নাছির উদ্ধনি জানান, বৃষ্টির কারণে তিনি ক্ষেত থেকে ধান তুলতে পারছে না। এর পরও গতকাল তিনি ৯ বিঘা জমি থেকে ধান তুলে ঝাড়া শুরু করেছে। দিন রাত পরিশ্রম কর ধান ঘরে তুলতে ব্যস্থ সময় পার করছে তিনি। ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে তার ক্ষেতে বোরো ধানে ক্ষতি হয়েছে। এর পরও ধানের দাম তুলনা মূলক একটু বেশি বলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।
এ সময়টায় গ্রামের হাজার হাজার নারী খুব ব্যস্ত থাকলেও নতুন ধানের ঘ্রাণে তাঁদের মনে বেশ আনন্দ থাকে। কোনো কাজে ক্লান্তি মনে করে না।
গতকাল সাতক্ষীরা সদর, তালা ও কলারোয়া, উপজেলার অন্তত ১০টি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, সব গ্রামেই এখন নতুন ধানের উৎসব। তাঁদের এখন দম ফেলার সুযোগ নেই। খতা বলারও সুযোগ পাচ্ছে না। রৌদ্র ও বৃষ্টির সাথে তাল মিলিয়ে ধান শুকাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে তারা। কারণ আষাঢ় মাস আসার আগেই ধান থেকে চাল বের করার সব প্রক্রিয়া তাদেও শেষ করতে হবে।
টানা ঝড়-বৃষ্টি, কৃষক সংকট ও করোনা ভাইরাস ও আম্ফান ঝড়ের কারণে বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম শঙ্কয় ছিল সাতক্ষীরার বোরো চাষিরা। এরই মধ্যে ধান ঘরে তোলা শেষ পর্যায়।
সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় ৭৫ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। যে খানে গত বছর আবাদ হয়ে ছিল ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫ হাজার ৪৭০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১২ হাজার ৬৭১ হেক্টর, তালায় ১৬ হাজার ৯০০ হেক্টর, দেবহাটায় ৬ হাজার ৬০ হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার ৮২০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৬ হাজার ২৭০ হেক্টর ও শ্যামনগরে ১ হাজার ৬০৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে সারাদেশে এবছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন । এর মধ্যে সাতক্ষীরা জেলাতে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৫শ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদরে এক লক্ষ ৮ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জে ২২ হাজার ৯৯০ মেট্রিক টন, শ্যামনগরে ৮ হাজার ১১০ মেট্রিক টন, দেবহাটায় ২৫ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন, আশাশুনিতে ৩০ হাজার ৬৬০ মেট্রিক টন, তালায় ৮৬ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন এবং কলারোয়াতে ৫৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ঝড় বৃষ্টির কারণে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা অর্জন বাধা হয়ে দাড়িয়েছে।
সাতক্ষীরা কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নূরুল ইসলাম এ জানান, ঘুর্ণিঝড় আম্ফান ও করোনায় জেলায় বোরো ধানের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে সমস্যা হয়নি। চাষিরা বোরো ধান ঘরে তোলা শেষ করেছে। এখন আউশের আবাদ নিয়ে তারা কাজ করছে।
আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: ৬/৬/২০২০

Please follow and like us:

Check Also

ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় সুদমুক্ত ঋণ বিতরণ

রাকিবুল ইসলাম, আলিপুর,২৩শে এপ্রিল ২০২৪:সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন সাতক্ষীরার আয়োজনে ইমাম ও মুয়াজ্জিন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।