বিপন্ন সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষকে রক্ষার দাবীতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ    ঝড়-জলোচ্ছাস, নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙন, লবনাক্ততা ও জলাবদ্ধতায় বিপন্ন সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় এলাকার মানুষকে রক্ষার দাবীতে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটি। ১৫ জুন সোমবার বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা কালেকটরেট চত্বরে এক বিশাল মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উক্ত স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মোঃ আনিসুর রহিম।

মানববন্ধনের বক্তারা বলেন, ঝড়-জলোচ্ছাস ছাড়াও দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার মানুষ নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়া, লবণাক্ততা বৃদ্ধি এবং জলাবদ্ধতা সমস্যার সাথে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করে চলেছে।
অন্য জেলা থেকে লোক না এলে যে এলাকার ধান কাটা হতো না সেই এলাকার লাখ লাখ মানুষ এখন কাজের সন্ধানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যেতে বাধ্য হচ্ছে। সরকারের নানামুখি উদ্যোগ সত্বেও এই এলাকায় দারিদ্র পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হচ্ছে না। শিক্ষাসহ অন্যান্য সূচকেও এই এলাকা পিছিয়েই থাকছে কেবলমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে।

মানববন্ধনের বক্তারা আরো বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ মে প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় আয়লার পর ২০১০ সালের ২৩ জুলাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও খুলনার কয়রা এলাকা পরিদর্শূন করেন। তিনি দুর্গত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানান। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং বাঁধ কেটে, পাইপ ঢুকিয়ে এলাকার লোনা পানি তোলা বন্ধ করার নির্দেশ দেন। কিন্তু সমন্বয়হীনতা ও দুর্ণীতির কারনে দীর্ঘ ১১ বছরে প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে অনেক কম গতিতে বাংলাদেশে আঘাত হানলেও বেড়িবাঁধের ক্ষতি ভারতের চেয়ে বাংলাদেশেই বেশি হয়েছে।
মানববন্ধন থেকে সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকাকে দুর্যোগ প্রবন এলাকা হিসেবে ঘোষণা, এলাকার উন্নয়নে পৃথক অথরিটি গঠন এবং সেই অথরিটিকে পর্যাপ্ত বরাদ্দসহ বিভিন্ন দাবী-দাওয়া পেশ করা হয় এবং দাবী সম্বলিত একটি স্মারকলিপি জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রদান করা হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও দুর্যোগকে মাথায় রেখে স্থায়ী, মজবুত ও টেকসই বেড়িবাঁধ পুন:নির্মাণ, বাঁধের নদীর সাইটে পর্যাপ্ত জায়গা রাখা এবং লোকালয় সাইটে বেড়িবাঁধকে চিংড়ি ঘেরের বাঁধ হিসেবে ব্যবহার বন্ধ করাসহ নদীর চর, বেড়িবাঁধ ও ঘেরের বাঁেধর মধ্যবর্তি স্থানে বৃক্ষরোপন করা।
যেসব স্থানে বারবার বাঁধ ভাঙছে সেইসব স্থান চিহ্নিত করে সেখানে ব্লকের মাধ্যমে কংক্রিটের বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব জমি না থাকলে ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি অধিগ্রহণ করা। বাঁধের নিচে ১০০ ফুট এবং সেই অনুপাতে উচ্চতা ও উপরে চওড়া করা। বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জরুরী তহবিল গঠন ও বাঁধ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় সরকারকে সম্পৃক্ত করা। বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে সবধরণের দুর্নীতি বন্ধ করা।
দাবীর মধ্যে আরো রয়েছে, উপকূলীয় সকল মানুষের খাবার পানির টেকসই ও স্থায়ী সমাধান এবং অন্যান্য প্রাণিকূলের জন্য মিষ্টি পানির আধার গড়ে তোলা। দুর্যোগ প্রবণ এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্রসহ মাটির কেল্লা তৈরী করা।
এ বছর বর্ষা মৌসুমে সাতক্ষীরা শহরসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় যাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয় সেজন্য এক্ষুণি উদ্যোগ গ্রহণ করা। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর নির্মাণে সরকারী সহায়তা দ্রুত প্রদান ও চিংড়িসহ অন্যান্য ফসল ও আমসহ মৌসুমি ফলের ক্ষয়ক্ষতির শিকার চাষিদের আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দ্রুত সংস্কার করা।
প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রেরণকৃত স্মারকলিপিতে করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া জেলার লাখ লাখ মানুষের মাঝে ইতোমধ্যে সরকারীভাবে যে ত্রাণ সামগ্রি বিতরণ করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত রেশন কার্ডের মাধ্যমে নিয়মিত পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ কর। করোনা পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরার সরকারী হাসপাতালে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা কার্যক্রম আরো জোরদার করা এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপন এবং High Flow Nasal Canul (HFNC) করোনা রুগির চিকৎসায় অপরিহার্য। কারন আইসিইউতে ভেন্টিলেটরে দিলে বেশিরভাগ রুগিই মারা যাচ্ছেন। সে তুলনায় HFNAC সফলতার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই থাকায় HFNC ব্যবহারে কোন সমস্যা হবেনা। অতিব জরুরি এই অক্সিজেন ক্যানুলা সংগ্রহ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবী জানানো হয়।

মানববন্ধনে সংহতি জ্ঞাপন করেন ও বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ, সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ, দক্ষিণের মশাল সম্পাদক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মমতাজ আহমেদ বাপী, জেলা বাসদের সমন্বায়ক এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, জেলা জাসদের সভাপতি ওবায়দুস সুলতান বাবলু, জেএসডির সুধাংশু শেখর সরকার, জেলা জাতীয় পাটির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার জাহিদ তপন, সিপিবির আবুল হোসেন, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী ও এম কামরুজ্জামান, বাসদ মার্কসবাদীর এড. খগেন্দ্র নাথ ঘোষ, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের এড. আল মাহামুদ, স্বদেশের নির্বাহী পরিচালক মধাব চন্দ্র দত্ত্ব, বাংলাদেশ জাসদের প্রভাষক ইদ্রিশ আলী, উদীচীর সভাপতি শেখ সিদ্দিকুর রহমান, জেএসডির আব্দুল জব্বার, উত্তরণের মনিরুজ্জামান জোয়াদ্দার, সুশীলনের দেব রঞ্জন, লির্ডাসের আমজাদ হোসেন, জেলা কারিগরি কলেজ শিক্ষক সমিতির তপন কুমার শীল, জেলা অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুনসুর রহমান, মটর শ্রমিক ইউনিয়নের রবিউল ইসলাম রবি, শ্যামনগর জাগ্রত যুব সহনশীল দলের শাহিদা খাতুন, শ্যামনগর যুব ফোরামের মোঃ মমিনুর রহমান, গাবুরা ইউনিয়ন ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট ফোরামের মোঃ আমজাদ হোসেন ও শরবানু, গ্রাম্য ডাক্তার সমিতির শহিদুল ইসলাম, হোমিও প্যাথিক চিকিৎসক সমিতির হাবিবুর রহমান, আসাদুজ্জামান লাভলু, পানি কমিটির মফিজুর রহমান, ভূমিহীন নেতা কওসার আলী, আব্দুস সামাদ, আব্দুস সাত্তার, দুষ্টি প্রতিবন্ধী সংস্থার আবুল কালাম আজাদ, জলবায়ু পরিষদের পিযুষ বাউলিয়া পিন্টু, প্রগতির পাপিয়া আহমেদ, শ্যামল বিশ্বাস, লুইস রানা গাইন, শেখ আফজাল হোসেন, বর্ষার নাজমুল আলম মুন্না প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এড. আবুল কালাম আজাদ ও যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবলু। প্রেস বিজ্ঞপ্তি

Please follow and like us:

Check Also

কলারোয়া  উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি আবুল কাশেমের ইন্তেকালঃ বঙ্গবন্ধু বিশেষ সুপারিশে  যিনি কারা মুক্ত হন

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।