ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩৮ সাংবাদিক গ্রেফতার দুই মাসেই

ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ  : গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলার সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে বলে পুলিশ ও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। গত বছর এই আইনে ৭৩২ টি মামলায় ১১৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে ১৬৫ মামলায় ৩৩৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে ৩৮ জন সাংবাদিক।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দশটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরের ভিত্তিতে মামলার পরিসংখ্যান রাখে। গত বছর মানবাধিকার সংগঠনটি ২৪ টি মামলার খবর সংগ্রহ করেছে। এ বছর প্রথম ছয় মাসে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ টিতে। পর্যালোচনায় দেখা যায়, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর মামলার আসামেিদর বড় একটি অংশ ত্রাণ চুরি, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার অনিয়ম, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মন্তব্য করেছেন বা কার্টুন এঁকেছেন। তাদের কাউকে কাউকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রথমে তুলে নিয়ে যায়। পরে ডিজিটাল প্রযুক্তি মামলায় তাদের আদালতে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপাপরে ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া একটি গণমাধ্যমকে বলেন, এই আইনের মূল উদ্দেশ্যই হলো মানুষকে হয়রানি করা। ত্রাণ চুরির অভিযোগ উঠলে চোরের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পরিবর্তে, যিনি চুরির কথা বলেছেন তাকে ধরা হচ্ছে। অনেকে যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করেন, নারীরা যখন প্রতারণার শিকার হবেন তখন এই আইন তাকে রক্ষা করবে। অথচ, এই অন্যায়ের প্রতিকার পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে হতে পারে। এমনকি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬ সংশোধন করার সুযোগ ছিল। যে যে ধারায় মামলাগুলো হচ্ছে সেগুলোর কোনোটিই নারীর সুরক্ষার জন্য ব্যবহার হয় না।
মানবাধিকার সংগঠন ও আইনজীবীরা বলছেন, মামলাগুলো হচ্ছে মূলত আইনের ২৫, ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায়। এই ধারাগুলোয় সরাসরি নারীদের সুরক্ষা সম্পর্কে কিছু বলা নেই। কোনো তথ্য প্রকাশ বা প্রচারের কারণে কেউ অপমানিত বা অপদস্থ বোধ করলে মামলা করতে পারবেন। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ন করা, বিভ্রান্তি ছড়ানো, জেনেশুনে মিথ্যা বলা, সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত করাও আইন অনুযায়ী এই ধারার অভিযোগ। মানহানি হলে বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর আশঙ্কা থেকে মামলা করতে পারবেন যে কেউ। অন্য কারও তথ্য সংগ্রহ, বিক্রি, দখল, সরবরাহ ও ব্যবহারের অভিযোগেও মামলা হচ্ছে। আইনের ২৬ ধারায় এগুলোকে অপরাধ বলা হয়েছে।
ডিজিটাল প্রযুক্তি আইনে মামলা গ্রহণের ক্ষেত্রে পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা আছে। এতে বলা হয়েছে, মামলা নেওয়ার আগে পুলিশ সদস্যদের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হবে। নাম না প্রকাশ করার শর্তে কমপক্ষে তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, পুলিশ মাঝে মাঝে নিরুপায় হয়ে মামলা নিচ্ছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায়, সংসদ সদস্য বা নেতাদের মানহানি হয়েছে এই অভিযোগ নিয়ে কেউ এলে তারা মামলা নিতে অনেক সময় বাধ্য হন।
পুলিশের তথ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে এখন প্রতিদিন গড়ে তিনটি করে মামলা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর এই মামলার সংখ্যা ৬০ ভাগ পর্যন্ত বেশি হতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘কটূক্তিমূলক’ পোস্ট দেওয়া, পোস্ট শেয়ার করা, কার্টুন বা ব্যঙ্গাত্মক চিত্র আঁকা, ই-মেইলে যোগাযোগ করা এবং নিজেদের মধ্যে চ্যাট করার দায়ে শিশুসহ বিভিন্ন শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষ এ বছর গ্রেফতার হয়েছেন।

Please follow and like us:

Check Also

আবুল কাশেম কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি,তাই জনগণ তাকে বার বার নির্বাচিত করতেন: সাতক্ষীরায় মিয়া গোলাম পরওয়ার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।