সৌদি, রাশিয়া, মিয়ানমার, উ. কোরিয়ার ব্যক্তি ও সংগঠনের বিরুদ্ধে অবরোধ বৃটেনের

ক্রাইমর্বাতা রিপোট :   সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যা সহ মানবাধিকার ভয়াবহভাবে লঙ্ঘনকারী হিসেবে সৌদি আরব, রাশিয়া, মিয়ানমার ও উত্তর কোরিয়ার কয়েক ডজন ব্যক্তি ও সংগঠনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়েছে বৃটেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব সোমবার বলেছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নৃশংসভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের টার্গেট করে এই অবরোধ দেয়া হয়েছে। এর উদ্দেশ্য রক্তের বিনিময়ে অর্থ দেয়ার রীতি বন্ধ করা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। উল্লেখ্য, সৌদি আরবে কোনো খুনি যদি খুনের দায়ে অভিযুক্ত হয়, সে নিহতের পরিবারকে অর্থ দিয়ে রাজি করাতে পারলে, শাস্তি লাঘব হয়। একেই রক্তের বিনিময়ে অর্থ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।
বৃটিশ এই অবরোধে টার্গেট করা হয়েছে রাশিয়ার ২৫ জন নাগরিক। এরা আইনজীবী সের্গেই ম্যাগনিতস্কির সঙ্গে অশোভন আচরণ ও তাকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত।

এ ছাড়া এই অবরোধের তালিকায় আছে সৌদি আরবের ২০ জন নাগরিক। তারা সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যার জন্য দায়ী। অবরোধ ঘোষণা করে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাব বলেন, এই সরকার বৃটিশ জনগণের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে, দস্যু নিপীড়ক, স্বৈরাচার ও তার সহযোগিতাকারী- যাদের হাতে রক্ত লেগে আছে তারা বৃটেনের কিংস রোডে সম্পত্তি কিনতে পারবে না, নাইটব্রিজে ক্রিসমাসের শপিং করতে পারবে না অথবা বৃটিশ ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের নোংরা অর্থ অবাধে অন্যত্র সরিয়ে নিতে পারবে না। এর আওতায় থাকবে সাংবাদিক জামাল খাসোগির নৃশংস খুনিরাও।
জানুয়ারিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করার পর বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন প্রথমবার স্বাধীনভাবে বৃটেনের পররাষ্ট্রনীতি, বাণিজ্য বিষয়ে ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছেন। সেই উদ্যোগে এটাই লন্ডনের প্রথম প্রচেষ্টা, যার অধীনে বৃটেন একান্ত নিজের ইচ্ছায় সম্পদ জব্দ বা ভিসা বাতিল করতে পারে। তাদের অবরোধের তালিকায় আছে সৌদি আরবের সাবেক রাজকীয় উপদেষ্টা সাউদ আল কাহতানি এবং সাবেক গোয়েন্দা বিষয়ক ডেপুটি প্রধান আহমেদ আল আসিরি। জামাল খাসোগি হত্যায় ১১ সন্দেহভাজনের বিচার শুরু হয় গত ডিসেম্বরে। ৫ জনের বিরুদ্ধে দেয়া হয় মৃত্যুদন্ড। তবে ওই দু’জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রত্যাহার করে সৌদি আদালত। উল্লেখ্য, ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাসোগিকে ২০১৮ সালের ২রা অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে অবস্থিত সৌদি আরবের কনসুলেটের ভিতর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তুরস্কের গোয়েন্দারা বলেছেন, তার দেহকে টুকরো টুকরো করা হয়েছে। এখনও তা কি করা হয়েছে তার কোনো হদিস মেলেনি। এই হত্যাকান্ড সারা বিশ্বকে আলোড়িত করে। হত্যায় সৌদি আরবের ২০ নাগরিককে অভিযুক্ত করেছে তুরস্কের প্রসিকিউটররা। এর মধ্যে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে কয়েকজনের সংশ্লিষ্টতা আছে বলে তারা জানিয়েছেন। পশ্চিমা কিছু সরকার এমনকি সিআইএ দাবি করেছে এই হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। কিন্তু সৌদি আরবের কর্মকর্তারা এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।
অবরোধের তালিকায় রাশিয়ার যেসব নাম আছে তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কর্মকর্তা হলেন আলেকজান্দার বাসত্রিকিন। তার ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি সরাসরি রিপোর্ট দেয় প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের কাছে। রাশিয়ান আইনজীবী ম্যাগনিতস্ক্রিকে ২০০৮ সালে গ্রেপ্তারের পর তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। রাশিয়ান কর্মকর্তারা বিপুল পরিমাণ ট্যাক্স প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত এমন অভিযোগ করার পরে ম্যাগনিতস্কিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে রাখা হয় মস্কোর এক জেলে। সেখানে তার ওপর নির্যাতনের অভিযোগ আছে। সেই জেলেই তিনি মারা যান। এমন অবরোধের লন্ডনে রাশিয়া দূতাবাসের এক মুখপাত্র বলেছেন, রাশিয়ার জেনারেল প্রসিকিউশন, ইনভেস্টিগেটিভ কমিটি অব রাশিয়ান ফেডারেশন, এবং বিচারকদের এই অবরোধের তালিকায় রাখা ক্ষোভের বিষয়।
এই তালিকায় রয়েছেন মিয়ানমারের সেনা প্রধান মিন অং হ্লাইং, সেনাবাহিনীর কমান্ডার সোয়ে উইন। মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক নৃশংসতায় জড়িত তারা। উত্তর কোরিয়ার যেসব সংগঠনের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে মিনিস্ট্রি অব স্টেট সিকিউরিটি ব্যুরো।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।