প্রতাপনগর বিধ্বস্ত প্লাবিত বানভাসি মানুষের কান্না যেন থামাছে না

তারিকুল ইসলাম: প্রত্যাপনগর:  (আশাশুনি) থেকে ॥ আজ থেকে ৫০ দিন পূর্বে উপকূলীয় প্রতাপনগর অঞ্চলে মহা প্রলয়ঙ্কারী জ্বলোচ্ছাস ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আঘাত হেনে বিধ্বস্ত হয়ে প্লাবিত করে দেয়। সেই বিগত ২০ মে বুধবার রাত থেকে আজ পর্যন্ত অর্ধশত দিন পার হলেও বানভাসি প্লাবিত উপকূলীয় প্রতাপনগর অঞ্চলের মানুষের কান্না থামেনি। সময়ের দাবি টেঁকসই বেড়ীবাঁধ নির্মাণ। উপকূলীয় এ অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার পর থেকে স্থানীয় বানভাসি সর্ব শ্রেণী পেশার এলাকাবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে হাজার হাজার মানুষ কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর লবনাক্ত জোয়ার ভাটার স্রোত ধারার শা শা শব্দ তথা প্লাবিত অবস্থার অবসান ঘটাতে রিং বাঁধ নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে শ্রীপুর-কুড়িকাহুনা লঞ্চ ঘাটের দক্ষিণ পাশের অংশটি বানভাসি ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর অর্থে ড্রেজার ভেকো মেশিনের সাহায্যে জোয়ার ভাটার স্রোত ধারা আটকানো সম্ভব হয়েছে। দুর্ভাগ্য জনক সত্য শ্রীপুর-কুড়িকাহুনিয়া লঞ্চ ঘাটের উত্তর পাশে স্থানীয়দের অর্থে ড্রেজার ভেকো মেশিনের সাহায্যে অনেকাংশ রিং বাঁধ দেওয়া হলেও মূল প্রায় ৩০/৪০ ফুট গভীর খালটি আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। যার প্রেক্ষিতে পুরা এলাকাবাসী লবনাক্ত বিষাক্ত জ্বলে ডুবে আছে। উল্লেখ্য যে, শ্রীপুর-কুড়িকাহুনিয়া লঞ্চ ঘাটের উত্তর পাশের জেলেখালির গভীর মূল খাল অংশে কয়েকশ বল্লি, হাজার হাজার বাঁশ, কয়েক হাজার জিয়ো ব্যাগ, হাজার হাজার বালু-মাটি ভরাট বস্তা এবং হাজার হাজার স্বেচ্ছাশ্রমিক ছাড়া জোয়ার ভাটার পানি আটকানো সম্ভব নয়। এদিকে প্রতাপনগর হরিশখালির ভাঙ্গন স্থানে পশ্চিম অংশে প্রতি নিয়ত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের প্রচেষ্টায় শতশত ভুক্তভোগী মানুষের স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রিং বাঁধ নির্মাণ কাজ করে যাচ্ছে। বানভাসি এলাকাবাসীর প্লাবিত অবস্থার অবসান ঘটাতে হরিশ খালির মূল গভীর ভাঙ্গন স্থানে বাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীদের দুর্ভাগ্য যে, বাঁধ নির্মাণ কাজে নিয়োগ কৃত ঠিকাদার বাঁধ নির্মাণ কাজে চরমভাবে গাফিলতি করছে, এমটি অভিযোগ শোনা যাচ্ছে বানভাসি এলাকাবাসীর নিকট থেকে। এহেন পরিস্থিতিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড তথা উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা ছাড়া এলাকাবাসীর বানভাসি অবস্থার অবসান ঘটানো সম্ভব নয় বলে মন্তব্য সর্ব শ্রেণী পেশার সচেতন ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর। প্লাবিত এ এলাকাবাসীর রান্ন, খাওয়া, গোছল, প্রসাব, পায়খানা, বিশুদ্ধ খাবার পানিসহ নানাবিধ সমাস্যায় জর্জরিত বানভাসি মানুষ। এ অঞ্চলের মানুষের দুঃখ, দুর্ভোগ যেন পিছু চাড়ছে না, কোন অংশে। জীবন যাপনে অস্বস্তিকর পরিবেশ অবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটার সম্ভাবনাই ক্ষীণ হয়ে আছে। দুর্বিষহ মানবিকতার শেষ শিমায় পৌঁছে গেছে এই অঞ্চলের হাজার হাজার বানভাসি প্লাবিত মানুষ। সেই ২০ মের প্রলয়ঙ্কারী জ্বলোচ্ছাস ঘূর্ণিঝড় আম্ফান পর থেকে কোন কোন পরিবার টোং বেঁধে করছে বাস। কোন কোন পরিবার তাদের আয়ের শেষ সম্বল নৌকায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেক পরিবার তাদের সহায় সম্বল হারিয়ে বিভিন্ন উঁচা রাস্তায় দু-চালার তাবু করে দিন কাটাচ্ছে। বসবাসের অনুপযোগী পরিবারগুলো বিভিন্ন সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নেওয়ার ৫০ দিন পার হলেও পরিবারগুলো আজও কোন দিশা খুঁজে পাচ্ছে না। অনেকের বসত ঘরবাড়ি গুলা নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় অনিশ্চিত চিন্তায় ভুগছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রচেষ্টায় উপকূলীয় অঞ্চলের প্লাবিত মানুষের কান্না থামাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও তা শতভাগ সাফল্যের মুখ দেখেনি বানভাসি ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। নদীর লবনাক্ত জ্বলে আর কতো দিন ভাসতে হবে উপকূলীয় অঞ্চল তথা প্রতাপনগর ইউনিয়ন বাসীর। অজানা পরিত্রাণের সম্ভবনায় জোয়ার ভাটার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হচ্ছে প্লাবিত বানভাসি ভুক্তভোগী মানুষের। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তারা বরং বরই প্লাবিত ভাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেই যাচ্ছেন কিন্তু প্লাবিত অবস্থার অবসান ঘটছেই না। এহেন পরিস্থিতিতে টেঁকসই বেড়ীবাঁধ নির্মানের বিকল্প নাই। তাই ভুক্তভোগী বিধ্বস্ত প্লাবিত বানভাসি মানুষের কান্না থামাতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে টেঁকসই বেড়ীবাঁধ নির্মান চায় উপকূলীয় এলাকার মানুষ।

Please follow and like us:

Check Also

পৃথিবীর যেসব দেশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিরও উপরে

জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ভয়াবহতার সাক্ষী হতে যাচ্ছে সারাবিশ্ব। প্রতিদিনই একটু একটু করে বৈরি হচ্ছে আবহাওয়া, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।