ইসলামের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া যুদ্ধ সমূহ

১.বদর যুদ্ধ

বদর যুদ্ধ দ্বিতীয় হিজরীর ১৭ রমযান মোতাবেক ৬২৪ খ্রীঃ ১৪ মার্চ, শুক্রবার দিন সংঘটিত হয়। আবু জেহেলের নেতৃত্বে মক্কার কাফির মুশরিকরা ১০০০ সৈন্য নিয়ে মদীনা আক্রমণের জন্য আসছে এই সংবাদ পেয়ে রাসূল (সঃ) সকলের পরামর্শক্রমে ৩১৩ জন সাহাবীর একটি দল নিয়ে মদীনা থেকে ৮০ মাইল দূরে বদর প্রান্তরে উপনীত হন। উভয় পক্ষের মাঝে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

যুদ্ধের ফলাফলঃ

১. কাফিররা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।

২. মুসলমানরা এক সর্বাত্মক বিজয় লাভ করে।

৩. মুসলমানদের ১৪ জন শহীদ হন।

৪. কাফেরদের ৭০ জন নিহত হয় এবং ৭০ জন বন্দী হয়।

৫. প্রসিদ্ধ কুরাইশ নেতৃবৃন্দ নিহত হন।

৬. মুসলমানরা প্রচুর গণীমত লাভ করে।

২.উহুদ যুদ্ধ

বদর যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য হিজরী তৃতীয় বর্ষে আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে ৩০০০ সৈন্যের (৩০০ উষ্ট্রারোহী ও ২০০ অশ্বারোহী) একটি দল মদীনা আক্রমণের জন্য মদীনা থেকে ৫ মাইল পশ্চিমে উহুদ উপত্যকায় উপস্থিত হয়। সকলের পরামর্শক্রমে রাসূল (সঃ) ১০০ বর্মধারী ও ৫০ জন তীরন্দাজসহ ১০০০ সৈন্যের একটি দল নিয়ে উহুদ প্রান্তরের দিকে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে মুনাফিকরা ৩০০ সৈন্য নিয়ে বাহিনী ছেড়ে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত ৭০০ মুজাহিদ নিয়ে রাসূল (সঃ) উহুদ প্রান্তরে কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন।

যুদ্ধে প্রথমে মুসলমানরা বিজয় লাভ করেন। রাসূল (সঃ) পিছনের দিক সুরক্ষিত রাখার জন্য ৫০ জন তীরন্দাজের একটি দলকে পাহাড়ের উপর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মুসলমানদের বিজয় হয়ে গেছে ভেবে তীরন্দাজদের ঐ দলটি তাদের জায়গা ছেড়ে চলে আসেন। এই সুযোগে সুচতুর খালিদ বিন ওয়ালিদ তার দল নিয়ে মুসলমানদের উপর পিছন দিক থেকে আক্রমণ করেন। যার ফলে মুসলমানদের মাঝে বিপর্যয় দেখা দেয়। কিন্তু তার পরেও কাফিররা বিজয় অর্জন করতে পারেনি।

যুদ্ধের ফলাফলঃ

১. উহুদ যুদ্ধ মুসলমানদের জন্য ছিল ধৈর্য্যের অগি্নপরীক্ষা।

২. উহুদ যুদ্ধের ফলে মুসলমানদের ঈমান আরো খাঁটি হওয়ার সুযোগ আসে।

৩. এই যুদ্ধে উভয় পক্ষেরই অনেক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। মুসলিম বীর হামযা (রাঃ)

শাহাদাত বরণ করেন। উমর ও আলী (রাঃ) সহ অনেক সাহাবী আহত হন।

৪. এই যুদ্ধের ফলে মুসলমানরা আত্মনির্ভরশীল সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত হয়।

৩. খন্দকের যুদ্ধঃ

মহানবী (সঃ) এর নেতৃত্বে মুসলমানদের অগ্রগতি অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। তা দেখে মক্কার লোকেরা ৫ম হিজরীর যিলক্বাদ মাস, ৬২৬ খ্রীঃ এপ্রিল মাসে মদীনার ইহুদী ও অন্যান্য আরব গোত্রদের সাথে নিয়ে চূড়ান্তভাবে মদীনা আক্রমণের প্রস্তুতি নিল। এই সংবাদ পেয়ে রাসূল (সঃ) সাহাবীদের সাথে পরামর্শ করে অভিজ্ঞ সাহাবী সালমান ফারসী (রাঃ) এর পরামর্শক্রমে মদীনার অরক্ষিত দিকগুলোতে পরিখা খনন করলেন। কাফিররা ১০০০০ সৈন্যের বিশাল বাহিনী নিয়ে মদীনা আক্রমণ করল কিন্তু পরিখা দেখে তারা হতভম্ব হয়ে গেল। রাসূল (সঃ) মাত্র ৩০০০ সৈন্য নিয়ে এই আক্রমণ প্রতিহত করলেন। দীর্ঘ ২৭ দিন কাফিররা মদীনা অবরোধ করে রাখে।

যুদ্ধের ফলাফলঃ

১. এই যুদ্ধে কাফিররা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ও পরাজিত হয়।
২. উহুদ যুদ্ধে বিপর্যয়ের মনোকষ্ট দূর হয়।

৩. অভিশপ্ত ইহুদী সমপ্রদায়ের মুখোশ উম্মোচিত হয় এবং তাদের শাস্তি দেয়া হয়।

হুদায়বিয়ার সন্ধিঃ

রাসূল (সঃ) স্বপ্নে দেখলেন তিনি কাবা ঘর যিয়ারত করছেন। স্বপ্ন মোতাবেক ৬২৮ খ্রীঃ ১৪০০ সাহাবী নিয়ে রাসূর (সঃ) মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হন। কাফেলা যখন হুদায়বিয়া নামক স্থানে পৌছে তখন মক্কার কাফিররা তাদের গতিরোধ করে এবং মক্কায় প্রবেশ করতে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। অবশেষে তারা রাসূল (সঃ) এর সাথে এক সন্ধি চুক্তিতে আবদ্ধ হয়। এটাই হুদায়বিয়ার সন্ধি নামে পরিচিত।

সন্ধির শর্তাবলীঃ

১. এ বছর মুসলমানরা হজ্জ্ব না করেই ফিরে যাবে।

২. পরবর্তী বছর মাত্র তিন দিনের জন্য মক্কায় অবস্থান করে হজ্জ্ব পালন করতে পারবে।

৩. আত্মরক্ষার জন্য কেবলমাত্র কোষবদ্ধ তরবারী সাথে আনতে পারবে।
৪. কোন মক্কাবাসী মদীনায় আশ্রয় প্রার্থনা করলে তাকে মদীনায় আশ্রয় দেয়া যাবে না।
৫. কিন্তু কোন মদীনাবাসী মক্কায় আসলে তাকে ফিরিয়ে দিতে মক্কাবাসীরা বাধ্য থাকবে না।

৬. দশ বছরের জন্য মুসলমান ও মক্কাবাসীরা যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে বিরত থাকবে।

৭. হুদায়বিয়ার সন্ধি ১০ বছর স্থায়ী হবে।

সন্ধির ফলাফলঃ

১. মূলত হুদায়বিয়ার সন্ধি ছিল মুসলমানদের জন্য এক মহাবিজয় যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কোরআনে বর্ণনা করেছেন।

২. এ সন্ধির ফলেই মক্কা বিজয়সহ ভবিষ্যতে মুসলমানদের অগ্রযাত্রা অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলতে থাকে।

তাবুক যুদ্ধঃ

নবম হিজরীর রজব মাস, ৬৩০ সালের নভেম্বর মাসে এই অভিযান সংঘটিত হয়। সেই সময়ে রোমান সাম্রাজ্য ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শক্তি। মু’তার যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর থেকে রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস মুসলমানদের গতিবিধি লক্ষ্য রাখতে শুরু করেন। নবম হিজরীর সেই সময়ে আরবে দূর্ভিক্ষ ও বিশৃঙ্খলা চলছিল। সুতরাং এই সুযোগে আরব দখল সহজ হবে ভেবে রোম সম্রাট আরব দখল ও ইসলামকে চিরতরে মুছে ফেলার চক্রান্ত করেন। তখন রাসূল (সঃ) রোমানদের এক লক্ষ সৈন্যের বিপরীতে ১০ হাজার সৈন্যের এক বাহিনী নিয়ে তাবুক প্রান্তরে অবস্থান নেন।

যুদ্ধের ফলাফলঃ

১. এত সমস্যার পরেও মুসলমানদের যুদ্ধ প্রস্তুতি দেখে হিরাক্লিয়াস বাহিনী পেছনে হটতে থাকে।

২. অতি গরমের পরেও মুসলিম বাহিনী ঈমানী শক্তির প্রমাণ উপস্থাপন করেন।
৩. বিভিন্ন রসদ পত্রের সংকট সত্ত্বেও মুসলিম বীরগণ যে ত্যাগ ও কুরবানীর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তা ইতিহাসে আজও বিরল।

মক্কা বিজয়ঃ

হুদায়বিয়া সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করে কুরাইশদের মিত্র গোত্র বনু বকর মুসলমানদের মিত্র গোত্র বনী খোযায়ার উপর আক্রমণ করে। ফলে বনী খোযায়া রাসূল (সঃ) এর নিকট অভিযোগ পেশ করে। ফলে রাসূল (সঃ) কুরাইশদের নিকট তিনটি প্রস্তাব রাখেন। যথাঃ

১. অন্যায়ভাবে হত্যাকৃত বনু খোযায়া গোত্রের নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
২. আক্রমণকারী বনী বকর গোত্রকে সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা বন্ধ করে দিতে হবে।

৩. হুদায়বিয়ার সন্ধি বাতিল বলে ঘোষণা করা হোক।

মক্কাবাসীরা শেষোক্ত প্রস্তাব গ্রহণ করে। তাদের সিদ্ধান্তের কথা অবগত হয়ে রাসূল (সঃ) মক্কা অভিযানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং ১০০০০ সৈন্যের

Please follow and like us:

Check Also

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১৩

ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।