মরহুম শেখ আনসার আলী চাচা স্মরণে……….

মরহুম শেখ আনসার আলী চাচা স্মরণে……….
লিখেছেন ঃ Ali Ahmad Mabrur ভাই

একটা সময় ছিল যখন দলীয় বা জাতীয় পর্যায়ের যেকোনো কার্যক্রমের একেবারে সম্মুখভাগে মরহুম শেখ আনসার আলীকে দেখা যেতো। যাদের কাছে ৯০ এর এরশাদ বিরোধী আন্দোলন কিংবা ৯৪-৯৬ সালের কেয়ারটেকার আন্দোলনের আন্দোলনের ছবি আছে, তারা দেখবেন, লিয়াঁজো কমিটির এমন কোনো বৈঠক নেই, যেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন না।

মাগুরার উপনির্বাচন পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতির চালচিত্র পালটে যায়। মরহুম শেখ আনসার আলী তখন জামায়াতের প্রতিনিধি দলের অন্যতম সক্রিয় সদস্য হিসেবে আবির্ভুত হন। তিনি আইনজীবী হিসেবেও ছিলেন সফল, সুপ্রীম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সহকারী সেক্রেটারীও ছিলেন।

তিনি ছিলেন জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য। তখনো অবধি নির্বাহী পরিষদ নামক কোনো কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। কর্মপরিষদের সদস্য হিসেবেই তিনি সংগঠনকে সর্বোচ্চ সেবাটুকু দিয়ে গেছেন। নির্বাচন কমিশনে দলীয় সাক্ষাতেও তিনি ছিলেন কমন মুখ। কর্মপরিষদ সদস্য হয়েও তিনি শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি পর্যন্ত হয়েছেন। একটা সময়ে দলের কাঠামোতে সে সুযোগ ছিল। তাছাড়া তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন শ্রম ও শ্রমিকবান্ধব নেতা।

এমপি হিসেবেও তিনি ছিলেন সফল। সাতক্ষীরায় ইসলামী আন্দোলনের বিকাশে কাজী শামসুর রহমান পরবর্তী অন্য কারো নাম বলতে হলেও তাকে স্মরণ করতে হয়। তালা-কলারোয়ায় উন্নয়নের সূচনাও তিনি করেছিলেন।

এরকম একটি সক্রিয় লোক হঠাৎ করে সিন থেকে হারিয়ে গেলেন। তার মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ জাতীয় সমস্যা হলো। ২০০০ সালের আগে থেকেই তিনি অনিয়মিত হতে শুরু করেন। মাঝে কিছু দিন স্মৃতিও মনে রাখতে পারতেন না। তিনি যখন অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন, তা আরো ২০-২২ বছর আগের ঘটনা। আজ তিনি ৭৮ বছর বয়সে ইন্তেকাল করলেন। সে হিসেবে তিনি ৫৮-৬০ বছর থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আমরাও তার সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলাম।

তার সাথী যারা ছিলেন, যাদের সাথে তার আত্মার সম্পর্ক ছিল, তাদের বেশিরভাগই আর জীবিত নেই। আজ তিনিও চলে গেলেন। আমার সাথে কথা হয়েছিল মোবাইলে। এ বছরের শুরুর দিকে। আব্বার কথা বলতে গিয়ে কেঁদে দিলেন। বললেন, বাসায় যেতে। এরপর করোনা শুরু হয়ে গেলো। বয়স্ক মানুষ। তাই তার ঝুঁকির কথা ভেবেই আর যাওয়া হয়নি। জীবিত অবস্থায় শেষ সাক্ষাতও হলো না।

গত পরশু সেক্রেটারী জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সাহেব তাকে দেখতে গিয়েছিলেন। ছবিটা দেখে ভাবছিলাম, যদি হায়াতে থাকেন, তাহলে দেখতে যাবো, তাও আর হলো না। তার স্ত্রী বেগম রোকেয়া আনসারও মহিলা সাংগঠিনক অঙ্গনে খুবই পরিচিত মানুষ।

আল্লাহর কাছে দুআ করি, আল্লাহ তার সকল নেক আমলগুলো কবুল করে তাকে জান্নাত নসীব করুন। এরকম স্বচ্ছ মনের মানুষ আমাদেরকে বারবার অভিভাবক হিসেবে দান করুন। আমিন।

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।