করোনাকালেও কৃষকের মাথায় মামলার খক্ষ:পালিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার কৃষক

ক্রাইমবাতা ডেস্করিপোট:   করোনাকালেও থেমে নেই কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা। শুধু সেপ্টেম্বর মাসেই ৪৫ কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। যদিও মামলা না করে বিকল্প উপায়ে অর্থ আদায় করতে পরিষ্কার নির্দেশনা জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো মামলা করছে। খাদ্য উৎপাদনের জন্য নেয়া ঋণের অর্থ পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় কৃষকের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর আগে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর দেয়া দেড় লাখ মামলায় এখনও ঝুলে আছে অনেক কৃষক। এর মধ্যে ওয়ারেন্ট মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার কৃষক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। সম্প্রতি ওই প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী হোসেন প্রধানিয়া যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হচ্ছে না। কৃষকদের বুঝিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করার কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কৃষকের ভেতর এখনও সততা আছে। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ফেরত দেয়ার মানসিকতা আছে। যদি টাকা ফেরত না দিতে পারে তাহলে প্রকৃতপক্ষে সে সমস্যাগ্রস্ত। আমাদের ব্যাংকে সেভাবে নির্দেশনা দেয়া আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কৃষকের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মামলা রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। যদিও সেপ্টেম্বর মাসে অর্থাৎ করোনাকালে কৃষকের বিরুদ্ধে ব্যাংকটির পক্ষ থেকে মামলা করা হয়নি। কিন্তু বর্তমান ৭১ হাজারের বেশি কৃষকের বিরুদ্ধে এই ব্যাংকের করা মামলা রয়েছে। আর ব্যাংকটির মামলায় সাড়ে চার হাজার কৃষক ওয়ারেন্ট মাথায় নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের দাবি আগে টাকা আদায়ের জন্য মামলা দেয়া হতো। এখন সে কৌশল বাদ দেয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকে কৃষকের খেলাপি ঋণের হার ২৪ শতাংশ থেকে নেমে ১২ শতাংশে ঠেকেছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কৃষকের বিরুদ্ধে ৬টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪৯৮টি মামলার বিপরীতে অর্থ পাওনার পরিমাণ প্রায় ৪৯১ কোটি টাকা। এসব মামলায় আদালত থেকে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে ১৩ হাজার ৬৪১ কৃষকের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মামলা হচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। কৃষকের বিরুদ্ধে এই ব্যাংক মামলা করেছে ৭১ হাজার ৬১৩টি, এর বিপরীতে অর্থ জড়িত ২৫৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এসব মামলার কারণে ৪ হাজার ৩০১ কৃষকের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে।

মামলা দায়েরের দিক থেকে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। প্রায় ১২৫ কোটি টাকা পাওনার অনুকূলে ২৩ হাজার ৮৯৮ কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আর ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে ২ হাজার ৮৩৭ কৃষকের বিরুদ্ধে। তৃতীয় অবস্থানে আছে অগ্রণী ব্যাংক। এই ব্যাংক ১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পাওনার অনুকূলে ২০ হাজার ৩৪৬ কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আর ওয়ারেন্ট বের হয়েছে ১ হাজার ৫৮৯ কৃষকের বিরুদ্ধে।

সোনালী ব্যাংকের মামলার সংখ্যা ১৩ হাজার ৮৩৮টি, এর বিপরীতে অর্থ পাওনা প্রায় ৪৪ কোটি টাকা। এসব মামলায় ওয়ারেন্ট বের হয়েছে ৮১৯ কৃষকের বিরুদ্ধে। আর রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে কৃষকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় ৩ হাজার ৫০৩টি। এসব মামলার অনুকূলে অর্থ জড়িত ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। পাশাপাশি এই মামলার কারণে ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে ৩৬৯ কৃষকের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপন জারি করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে কৃষকের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট মামলা না করে আপস বা সমঝোতার মাধ্যমে ঋণ আদায়ের পরামর্শ দেয়। একই সঙ্গে কৃষি ঋণ আদায়ে তদারকি জোরদার এবং প্রয়োজনে আলাদা সেল গঠনের পরামর্শ দেয়া হয়। কিন্তু এসব পরামর্শ মানছে না অনেক ব্যাংক। অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বরে (করোনাকালীন) ৩৬ লাখ টাকা আদায়ের জন্য ৪৫টি মামলা দেয়া হয়। এর মধ্যে সাড়ে চার লাখ টাকা আদায়ের জন্য অগ্রণী ব্যাংক মামলা দিয়েছে ৯টি, রূপালী ব্যাংক ২৬ লাখ টাকার বিপরীতে মামলা দিয়েছে ২৮টি। এছাড়া ১ লাখ ২০ হাজার টাকার জন্য রাজশাহী কৃষি ব্যাংক মামলা করেছে ৩টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, সরকার চায় কৃষকের বিরুদ্ধে যাতে সার্টিফিকেট মামলা না হয়। এ কারণে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়, সার্টিফিকেট মামলা কোনোভাবেই যাতে না বাড়ে।যুগান্তর।

Please follow and like us:

Check Also

আলিপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী জিয়ার মোটর সাইকেল বহরে হামলার ঘটনায় মামলা

নিজস্ব প্রতিনিধি: সন্ত্রাসী জনপদ আলিপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী জিয়াউল ইসলাম জিয়ার মোটর সাইকেল বহরে বোমা হামলার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।