সাতক্ষীরায় নদ-নদী খননে হ-জ-ব-র-ল : শত শত কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন প্রশ্নবৃদ্ধের মুখে: নদী খনন করে খাল আর খাল খনন করে নালা করার অভিযোগ

আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরায় নদ-নদী খননে হ-জ-ব-র-ল পরিস্থিত সৃষ্টি হয়েছে। খননের পর পূর্বের চেয়ে আরো খারাপ হয়েছে বলে দাবী উঠেছে। ফলে নদ-নদী খননের নামে সরকারের নেয়া শত শত কোটি টাকার বাজেট বাস্তবায়ন প্রশ্নবৃদ্ধের মুখে পড়েছে। নদী খনন করে খাল আর খাল খনন করে নালা করার অভিযোগ উঠেছে। জনগণের পকেটের টাকা সরকার এভাবে নষ্ট করতে পারেনা বলে দাবী সংশ্লিষ্টদের।
গত ২ জুন ২০২০ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের বৈঠকে ‘সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং ১, ২, ৬-৮, ৬-৮ (এক্সটেনশন)-এর নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন’ শীর্ষক ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ ১৬ হাজার টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সাতক্ষীরা শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর ৮১ কি.মি. পুনঃখনন ও ড্রেজিং এবং ৮২টি খালে ৩৪৪.২২ কি.মি. সংস্কার ও পুনঃখনন করা হবে।এছাড়া ২৭টি রেগুলেটর ও স্লুইস গেট মেরামত, পুণর্গঠন, পুনরাকৃতিকরণ, ১১৩.১২ কি.মি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার, বেতনা নদীর ডান তীরের ১.৭০ কিমি ঢাল প্রতিরক্ষামূলক কাজ এবং ৪টি আরসিসি ঘাটলা নির্মাণ করা হবে।এসব কাজ বাস্তবায়ন হলে জেলাবাসি খুববেশি উপকৃত হবেনা বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাতক্ষীরা শহর ও পাশ্ববর্তী এলাকার নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্প কার্যকর করতে জেলা নাগরিক কমিটি ১৩ দফা প্রস্তাবনা পেশ করেছে। রোববার বেলা ১২টার সময় সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের কাছে উক্ত প্রস্তবনা পেশ করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক মো. আনিসুর রহিম, যুগ্ম আহবায়ক এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল, সদস্য সচিব এড. আবুল কালাম আজাদ, যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবুল, সদস্য শেখ বায়দুস সুলতান বাবলুসহ অনেকে।
জেলা নাগরিক কমিটির প্রস্তবনায় বলা হয়েছে, গত ১০ বছরের মধ্যেই গ্রহীত উক্ত প্রকল্পের অধিকাংশ কাজই পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, কর্মসৃজন প্রকল্পসহ বিভিন্ন এনজিও এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু তার কোন ফলাফল পাওয়া যায়নি। বরং পরিস্থিতি পূর্বের চেয়ে আরো খারাপ হয়েছে। বিশেষ করে ৩/৪শ’ফুট চওড়া বেতনা ও মরিচ্চাপ নদীর মাঝ বরাবর ৫০/৬০ ফুট খাল খনন করে নদী ভরাট করার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
নাগরিক কমিটি এই পরিস্থিতি নিরসনের জন্য সাতক্ষীরা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত উজানের সাথে সম্পর্কযুক্ত একমাত্র প্রবাহমান নদী ইছামতির শাখা সাপমারা ও লাবন্যবতীর স্লুইস গেট অপসারণ করে মরিচ্চাপ-খোলপেটুয়া ও অন্যান্য নদী খালের জোয়ার ভাটার স্বাভাবিক প্রবাহ পুনুরুজ্জীবিত করাসহ ১৩ দফা সুনিদিষ্ঠ প্রস্তবনা পেশ করেন।
প্রস্তবনা সমূহঃ
০১. ইছামতি নদীর সাথে মরিচ্চাপ নদীর সংযোগ পুর্নস্থাপনে লাবন্যবতীর দু’মুখে স্থাপিত শাখরা-টিকেট এবং সাপমারার দু’মুখে স্থাপিত হাড়দ্দহা-কামালকাটি স্লুইসগেট অপসারণ অথবা দুই নদীর সরাসরি সংযোগ স্থাপনের জন্য স্লুইসগেটের পার্শ্ব দিয়ে বেড়িবাঁধ কেটে বিকল্প চ্যানেল তৈরী করতে হবে। ০২. সাতক্ষীরা শহরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত প্রাণসায়র খালের সাথে বেতনা নদীর পুর্নসংযোগ স্থাপনে খেজুরডাঙ্গী স্লুইসগেট এবং মরিচ্চাপ নদীর পুনঃসংযোগ স্থাপনে এল্লারচার স্লুইসগেট (বর্তমানে অস্তিত্বহীন) অপসারণ অথবা পার্শ্ব দিয়ে বেড়িবাঁধ কেটে বিকল্প চ্যানেল তৈরী করতে হবে। ০৩. কোলকাতার খাল এবং শ্রীরামপুর-বাকাল খালের দু’মুখের সকল বাঁধা অপসারণ করতে হবে। ০৪. ইছামতির পানি প্রবাহ পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার পূর্বেই লাবন্যবতী, সাপমারা, মরিচ্চাপ, কোলকাতার খাল ও শ্রীরামপুর-বাঁকাল খালের বেড়িবাঁধ যেখানে প্রয়াজন সেখানে উঁচু ও মজবুত করতে হবে এবং বিলের পানি নিষ্কাশনের খালের মুখে থাকা স্লুইস গেটগুলো সংস্কার করতে হবে। ০৫. প্রকল্পভুক্ত সকল নদী-খালের সিএস ম্যাপ অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে সীমানা পিলার স্থাপন করতে হবে। নদী খালের ম্যাপ তৈরির ক্ষেত্রে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। ০৬. প্রকল্পভুক্ত নদী খাল খননের সকল মাটি নদী খালের সীমানার বাইরে অবক্ষেপণ করতে হবে। কোন আবস্থাতেই নদী-খালের মধ্যে ডাম্পিং করে নদী বা নদীর পাড় ভরাট করা যাবে না। ০৭. গ্রাম-শহরের বর্ষার পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রেখে মাছ চাষের জন্য পরিকল্পিতভাবে নিদিষ্ট জোন সৃষ্টি করতে হবে। ০৮. শালিখা নদীর সাথে বেতনা নদীর পুর্নসংযোগ স্থাপনসহ প্রকল্পের বাইরে থাকা অন্যান্য নদীগুলোর আন্তঃসংযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ০৯. ইছামতি নদীর পানি প্রবাহ নিশ্চিত হওয়ার পর লাবন্যবতী, সাপমারা, কোলকাতার খাল, শ্রীরামপুর-বাঁকাল খাল, মরিচ্চাপ ও খোলপেটুয়া নদী খনন ছাড়াই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। ১০. ইছামতির পানিতে নদী-খালের সুবিধাজনক স্থানে টিআরএম চালু করতে হবে। ১১. নদী খাল খনন এলাকায় জন্য মনিটরিং ব্যবস্থা করতে হবে। ১২. প্রকল্পের জন্য একটি টেকনিক্যাল এডভাইজারি গ্রুপ তৈরী করতে হবে। ১৩. ‘সকল নদী খালর ইজারা বাতিল’ এর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে।

Please follow and like us:

Check Also

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১৩

ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।