শান্তির ছদ্মবেশে অশান্তির দাবানল

মোঃ মোকাররম হোসাইন:  যাদুবিদ্যা ও প্রযুক্তিবিদ্যা, নামে একই হলেও কাজে তেমন কোনো গড়মিল নেই। যাদু যেমন চোখের পলকে কিছু কাজ সমাধা করতো ঠিক তেমনি আধুনিক টেকনোলজি তরিৎ কিছু কাজ অবিকল করে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে যাদুকে বেশ অতিক্রম করে দুর্বার গতিতে ছুটে চলছে জনপ্রিয় এই আধুনিক টেকনোলজি। পৃথিবীতে এমন একসময় ছিলো যখন যাদু ছাড়া অন্য কিছু ভাবা বেশ কঠিন ছিলো। যেমন এখন আমরা প্রযুক্তির বিকল্প অন্য কিছু ভাবতে পারি না। আমরা ভুলেই বসেছি সুলাইমান আলাইহিসসালাম প্রযুক্তি ছাড়াই বিশ্ব শাসন করেছে। আমরা কেবল বাহ্যিক দৃষ্টিকোন থেকে কোন কিছুর বিচার বিশ্লেষণ করে থাকি। যে কোন বিষযে ইন্টারনাল এক্সটার্নাল না জেনে ফয়সালা করা শুধু বোকামিই নয় বড় ধরনের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। আমরা নিঃশ্বাসে বিশ্বাসে যেভাবে প্রযুক্তিকে গ্রহন করেছি একসময হয়তো ভুলেই যাবো আমাদের পূর্বপুরুষরা মানুষ ছিলো। মনে হবে তারাও আমাদের মতো মমত্বহীন, মানবতাহীন, মানুষরুপি রোবট (যান্ত্রিক মানুষ) ছিলো। রোবটের যেমন দয়ামায়া, প্রেম ভালবাসার কোনো অনুভূতি নেই বর্তমান দুনিয়ার যান্ত্রিক মানুষগুলো তেমন নির্দয়, বিবেকহীন,মনুষ্যত্বহীন। আমাদের জানতে হবে আমরা কি? কেন? কিভাবে? আমাদের সৃষ্টির প্রকৃতিই হলো দয়া ভালবাসা, আমাদের আদি অন্ত ভালবাসায় পরিপূর্ণ। আপনারা হয়তো বলবেন এগুলোর সাথে প্রযুক্তির কি সমপর্ক? আমি বিনয়ের সাথে বলতে চাই,একটু তদন্ত করুন দেখবেন এর সাথে প্রযুক্তি কতটুকু সম্পৃক্ত। পবিত্র কুরআনের তথ্যমতে যাদুবিদ্যা দিয়ে প্রধান যে কাজটি করা হতো তাহলো স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো। স্বামী স্ত্রীর পবিত্র ভালবাসার মধ্যে সংশয় সৃষ্টি করা। তাছাড়া কাউকে আহত বা যে কোনো ক্ষতি করার জন্য যাদু প্রয়োগ করা হতো। বিশ্ব মানবতার মহান শিক্ষক আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ(সঃ) ও যাদু থেকে নিস্তার পায়নি। মুসা (আঃ) এর প্রতিও সে সময়ের বড় বড় যাদু নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এখনতো আর যাদু নেই তবে কেন এত স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ? কেন এত ঘর ভাঙার ঘটনা? আমাদের থানাগুলোতে কেনএত নারী ও শিশু আইনের মামলা? উত্তর একটাই,আমাদের ছেলেমেয়েদের অবৈধ প্রেম,স্বামী স্ত্রীর ভিন্ন নারী পুরুষের সাথে পরকিয়া, একপর্যায়ে তা হত্যাকান্ডে রুপ নেয়, কিন্তুু কেন? এত সহজে এসব কিভাবে ঘটে? একসময় ছিলো যখন বড়দের ভয়ে আমরা সিনেমা হলে যেতে পারতাম না। মেয়েরাতো কখনও কল্পনাও করতে পারতো না। কিন্তুু এখন! প্রতিটি ছেলেমেয়েই যেন এক একটি সিনেমা হল। ঘন্টার পর ঘন্টা পর্র্ণগ্রাফিতে বুঁদ হয়ে থাকে। ফলে অহরহ ঘটে ধর্ষনের মত ঘটনা। চরিত্র হয়ে পড়ে কুৎসিত, বিভৎস, ঘোর অন্ধকার। প্রযুক্তি ছাড়া এসব কি এত সহজেই হতে পারে। যাদু যদি তার কর্মের কারনে কুফরি হয় তবে প্রযুক্তি কিভাবে রহমত হতে পারে। আপনারা হয়তো বলবেন প্রযুক্তির অনেক উপকার আমরা কিভাবে অস্বিকার করতে পারি। আমি আপনাদের সাথে একমত, কোনো ভাবেই তা অস্বীকার করতে পারিনা। শুধু বলতে চাই কোনো কিছুর মধ্যে কিছু উপকার থাকলেই তা সার্বিক কল্যানময় হয় না। বরং প্রতিষেধকের চেয়ে ক্ষতের সৃষ্টি বেশি হতে পারে। আল্লাহর নিতি হলো এমন,যার মধ্যে অপকারিতার চেয়ে উপকারিতা বেশি সেটিই কেবল বৈধ।উল্লেখ্য মাদকের ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত। মাদক হারাম করা হয়েছে এজন্য নয় যে তা সম্পূর্ণক্ষতিকর।বরং তার কিছু উপকারিতা স্বীকার করে নিয়েই তা হারাম করা হয়েছে। বলা হয়েছে মদ ও জুয়া মস্তবড় পাপ। এবার যদি আপনি নিজেই প্রযুক্তির উপকারিতা ও উপকারিতা নিয়ে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন তাহলে সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য কারো ফতোয়ার প্রয়োজন হবে না।
এখন আপনাদের সাথে সহমত পোষণ করে প্রযুক্তির কিছু উপকারিতা বলতে চাই। তথ্য ও যোগাযো, শিক্ষাও সংস্কৃতি,শিল্প ও বানিজ্য,চিকিৎসা,কৃষি সকল ক্ষেত্রে প্রযুক্তি এক বিস্ময়কর বিপ্লব সাধন করেছে। মানুষের জীবন যাত্রার মান বদলে দিয়েছে। চারিদিকে শুধু উন্নতি আর উন্নতি। এসব কিছু স্বীকার করেই আমি এর ঘোর বিরোধিতা করি। জানি এ ক্ষেত্রে আমি সংখ্যালঘুদের মধ্যে একজন। আমি বিশ্বাস করি সত্যযেখানে শক্তি ও সাহস সেখানে। কেউ যদি মনে করেন উন্নতির মানেই হলো অর্থনৈতিক উন্নয়ন,তাহলে মনে রাখবেন আপনার পূর্ববর্তিরাও কম উন্নত ছিলো না। আপনার পূর্ববর্তিদের মধ্য কতক সম্প্রদায় পাথর কেটে কেটে প্রাসাদ নির্মান করতো। তাছাড়া কারুন সাদ্দাদের মত উন্নতি আপনি কস্মিনকালেও করতে পারবেন না। কারুনের সম্পদ রাখার যে গোডাউন ছিলো তার চাবি বহন করতে একদল লোকের প্রয়োজন হতো।পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে পূর্ববর্তিদের দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেছেন, তোমাদের চেয়ে তোমাদের পূর্ববর্তিরা আরো অধিক উন্নত ও শক্তিশালি ছিলো। তোমরা কি দেখ না কিভাবে তাদের সকল শক্তিকে চুর্নবিচুর্ন করেছি। আসলে উন্নতির মানে হলো চারিত্রিক উন্নয়ন।যে জাতি যত উন্নত হবে সে জাতির লোকদের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা ততো কমে যাবে।যাকে বলে( ংঁংঃধরহধনষব ফবাবষড়ঢ়সবহঃ.) । এবার চিন্তা করুন সারা পৃথিবীতে অপরাধ কমেছে না কি ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের চরিত্রের উন্নতি হয়েছে না অবনতি? আগে ধর্ষন হয়ে থাকলে এখন হয় গনধর্ষন, আগে হত্যা হলে এখন হয় গনহত্যা। আমরা যেটাকে জাহেলিয়াতের যুগ বলে জানি সে যুগে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো আর এখন হত্যার পূবে ধর্ষন করা হয়। বাবাকে বেঁধে রেখে মেয়েকে গনধর্ষন, স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষন এগুলো যেন এই বর্বর আধুনিক যুগের নিত্যদিনের ঘটনা। এরকম চরিত্র আবু জেহেলের মধ্যেও পাওয়া যায় না।আগে মাদকের নাম শুনতাম আর এখন মাদক স¤্রাটদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার গল্প শুনি,আগে জুয়ার কথা শুনতাম আর এখন ক্যাসিনো স¤্রাটদের ন্যাক্কারজনক খবর শুনতে হয়। এই হলো আধুনিক টেকনোলজির উন্নত জীবনের মর্মকথা। তার পরেও বিশ্বের রাজনৈতিক নেতাদের, বুদ্ধিজিবিদের, সুশীল সমাজের উচ্চবর্গের ব্যাক্তিদের মুখে নির্লজ্জভাবে আধুনিকতার জয়গান শোনা যায়।এমনকি মুসলিম বিশ্বের ওলামাগন যাদেরকে আমরা পথপ্রদর্শক হিসেবে মান্য করি তারাও তাদের সুরে সুরমিলিয়ে বলতে থাকে প্রযুক্তি হলো আল্লাহর পক্ষথেকে রহমত। তারা বলতে চান প্রযুক্তির কোনো দোষ নেই,মানুষই তাকে ভালো অথবা মন্দ পথে ব্যাবহার করে। তাদের মুখরোচক কথাগুলোকে জাতির লোকেরা ধর্মিয়দৃষ্টিকোন থেকে গ্রহন করে।যার ফলাফল হলো ঐ ব্যাক্তির মত যে তার সন্তানকে মদের বোতল দিয়ে বলে বেড়ায় আমার কোনো চিন্তা নেই আমার ছেলে ওখান থেকে ভালোটাগ্রহন করবে। এটা কি আদৌও সম্ভব?আপনি তাকে কি বলবেন? তবে যারা প্রযুক্তির ব্যাপারে জাতিকে উৎসাহিত করে আর বলে এখান থেকে তোমরা ভালোটা গ্রহন করবে তারা কি সেই ব্যক্তির মতো নয় যে তার সন্তানকে মদের বোতল দিয়েছিল?প্রযুক্তি জড়পদার্থ তার কোনো দোষ থাকতে পারে না। তবে কেউ যদি এমন কিছু সৃষ্টি করে যার উপকারের চেয়ে ক্ষতিকর দিক থাকে বেশি তাহলে এমন কিছু আবিস্কারের জন্য আবিষ্কারক ও ব্যাবহারকারি উভয়েদোষী হবে। আশা করি এ বিষয়ে কেউ ভিন্নমত পোষণ করবেন না। আর যারা এ সকল বিষয়ের পক্ষে ওকালতি করে তাদের বিচারের ভার আপনাদের উপর।
আমরা যারা সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি তারাও ভাবি যে পর্যন্ত না আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তাদেরকে হারাতে পারবো সে পর্যন্ত আমাদের বিজয় অসম্ভব। চিন্তাটা বেশ চমকপ্রদ মনে হলেও আসলে তা অন্তঃসারশুন্য। আমি কোনো ভাবেই এর সাথে একমত হতে পারি না। যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য আল্লাহর সুন্নাহ হলো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করা। যেমন আঁধার তাড়াতে আলো,মন্দ তাড়াতে ভালো। কেউ যদি আঁধার তাড়াতে এমন চিন্তা করে যে, যতদিন না আমরা অন্ধকারের দিক দিয়ে শক্তিশালি হবো ততোদিন পর্যন্ত আমাদের বিজয় অসম্ভব, আপনি কি তার সাথে একমত হতে পারবেন? নিশ্চয় নয়। দেখুন মুসা(আঃ) যাদুকে প্রতিহত করেছে কিন্তু যাদু দিয়ে নয়। কারণ সমস্যাকে অনুরূপ দিয়ে সমাধান করা যায় না। সহজ বিষয়টাকে কঠিন করা যেন আমাদের স্বভাবে পরিনত হয়েছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এ্যান্টিবায়টিকের ব্যাবহার নিশ্চয় সবাই জানেন। আপনার জ্বর হয়েছে? আপনার শরীরের তাপমাত্রা অনেক বেশি? তাহলে এখনই এর উল্টোটা অর্থাৎ এ্যান্টিবায়টিক ব্যাবহার করুন দেখবেন তাপমাত্রা কমে গেছে। সুত্র একটাই যা সমস্যা তার বিপরীতটাই সমাধান।যারা প্রযুক্ততির মাধ্যমে সারাদুনিয়া শোষন করছে আপনিও যদি তাদের মতো প্রযুক্তি নির্ভর হন তাহলে আপনি তাদেরই মতো একজন শোষক হতে পারবেন, অন্য কিছু নয়। আপনি প্রযুক্তি নিয়ে তাদের পেছনে হাঁটবেন আর তারা হাজার মাইলবেগে আপনার সামনে দৌড়াবে। আপনাকে অবশ্যই তাদের সামনে দাঁড়াতে হবে এমন কিছু নিয়ে যা হবে প্রযুক্তির বিপরিত। তবেই যদি তাদের গতিরোধ করতে পারেন। তারা যেটার উপর নির্ভর করে সেটা যদি আপনার কাছে পরিমানে বেশিও থাকে তবুও আপনি তাদের উপর বিজয়ী হতে পারবেন না। আপনি তখনই বিজয় অর্জন করতে পারবেন যখন আপনার কাছে এমন কিছু থাকবে যা তাদের কাছে থাকবেনা। আমাদের পূর্ববর্তিদের বিজয়গাঁথা ইতিহাস থেকে সেটাই পাওয়া যায়। আমাদের পূর্ববর্তিরা কখনও অস্ত্র, অর্থ, অথবা জনশক্তি দ্বারা বিজয় অর্জন করতে পারেননি। কারণ এর সবগুলোই তাদের কাছে পূর্ণমাত্রায় ছিল। শুধু তাদের কাছে ছিল না গায়েবি মদদ যা ছিল সত্যপথের পথিকদের কাছে।যারা প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রকৃতিকে বিপর্যস্থ করেছে, আল্লাহর প্রাকৃতিক ব্যাবস্থাপনার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, আপনিও কি তাই করবেন?।আমাদের বেঁচে থাকার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা সবই আল্লাহ প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে রেখেছেন।অথচ আমরা প্রকৃতিকে সেভাবেই ধ্বংস করছি যেভাবে করছে অত্যাচারিরা। প্রযুক্তিপ্রকৃতিকে কতটুকু ধ্বংস করেছে কয়েকমাস লকডাউনে তা আরো স্পষ্ট হয়েছে। সারা পৃথিবীতে লকডাউনের কারনে যখন স্কুল কলেজ ও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছিল তখন প্রকৃতি তার আপনস্বত্বা নিয়ে জেগে উঠেছিল। বিবিসি বাংলাসহ অনেক সংবাদ মাধ্যম তা প্রচার করেছিল। গাছের পাতা তুলনামূলক বেশি সবুজ, সমুদ্রে ডলফিনের ব্যাপকভাবে আতœপ্রকাশ, বন্যপ্রানিদের বেশি আনাগোনা এসবই ছিল প্রযুক্তির অভিশাপের এক একটি প্রত্যাক্ষ স্বাক্ষী।
আমি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে বলছি পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্র যেভাবে পাল্লা দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্রতৈরি করছে তা কারো প্রতি প্রয়োগ না করলেও শুধু তৈরি আর পরিক্ষা অব্যাহত থাকলে পৃথিবী নরকে পরিনত হবে।জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন থেকে চীনকে তিনটি শর্তদেওয়া হয়েছিল, যে শর্তগুলো মানলে চীনের কার্বননিঃসরণের মাত্রা অনেক কমে যেতো। কিন্তুু চীন সাথে সাথে তা প্রত্যাখ্যান করে,কারণ এটা মেনে নিলে চীনের টেলিভিশন, এয়ারকন্ডিশন,ও ফ্রিজ উৎপাদন কমে যেতো ফলে তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভাটা পড়তো। দেখুন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে গেলেও তারা তাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে ধরে রাখবে যার মূল হলো টেকনোলজি।যারা এখনও মনে করেন টেকনোলজি ছাড়া পৃথিবী অচল, তাদেরকে দ্ব্যার্থহীন ভাবে বলছি টেকনোলজিই আপনাকে ধিরে ধিরে অচল করে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠে যেটাকে আপনি সুন্দর জীবন যাপনের জন্য প্রধান উপায় মনে করেন সেটাই আপনার জীবনের জন্য সবচেয়ে বড় অশান্তির কারণ। আজকে পৃথিবীতে যত বড় রোগ ব্যাধি আছে সবগুলোর মূল উৎস হলো টেকনোলজি।সেটা আমরা বুঝতে পরিনা কারণ সেটা আমদের দ্রুত শেষ করে না। কর ধিরে ধিরে এক একটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অকেজো করার মাধ্যমে। হার্ড,কিডনি,ফুসফুস, শ^াসকষ্ট,ডায়াবেটিসসহ প্রভৃতি রোগের জন্য প্রযুক্তি কিভাবে দায়ী আসুন একটু বুঝার চেষ্টা করি। আমাদের দৃষ্টিশক্তি, শ্রবন শক্তি, চিন্তাশক্তি কিভাবে দুর্বল হয় একটু বুঝার চেষ্টা করি। এখনো যারা বয়োবৃদ্ধ পুরোনো মানুষ বেচে আছে অর্থাৎ যারা আমাদের মত প্রযুক্তির মহামারি দেখতে পাননি তাদের শারিরীক সক্ষমতা দেখে অভিভূত হই। চশমা ছাড়াই তারা কুরআন পড়ছেন, পত্রিকা পড়ছেন, কিছু বললে তা শুনতে পাচ্ছেন। অথচ এ প্রজন্মের শিশুরা জন্মের পরপরই চশমা ছাড়া যেনো দেখতেই পায় না। স্কুল কলেজের অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীদেরকে চশমা পরতে দেখা যায়। যদিও সংখ্যাটা গ্রামের তুলনায় শহরে অনেক বেশি। আগে খালি কন্ঠে আযান হতো দুর থেকে তা শোনা যেতো। এখন ঘনঘন মসজিদ তবু মাইক ছাড়া চলেনা। দুই থেকে তিনশ লোকের মিটিং মাইক ছাড়া চলেনা অথচ লক্ষাধিক সাহাবিদের সমাবেশে রাসুলুল্লাহ(সঃ) ভাষন দিতেন আর মাইক ছাড়াই সবাই তা শুনতে পেতেন। কেন এই ভিন্নতা একটু বুঝার চেষ্টা করুন। যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নতির কথা বলবেন!তাহলে শুনুন, সাতশত কোটি মানুষের ক্ষতি করা ছাড়া মটরগাড়ির একটি চাকাও ঘোরে না। আপনি মনে করছেন বিমান আপনাকে দেশ থেকে দেশান্তরে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে অথচ সেটাও পৃথিবীর সকল মানুষের ক্ষতিকরা ছাড়া তার একটি পাখাও ঘুরাতে পারে না। বিজ্ঞানিরাই বলেছেন কেউ যদি একলিটার পেট্রোল পোড়াতে চায় সে যেনো আগে অন্তত দশটি গাছ লাগায়। এবার হিসাব করুন একলিটার = দশটি গাছ, তাহলে সারা পৃথিবীতে প্রতিদিন কতলিটার জ্বালানি পোড়ানো হচ্ছে। আগে যারা ঘোড়া হাঁকিয়ে পৃথিবী কাঁপিয়ে বেড়াতো তাদের না ছিলো কালো ধুঁয়া না ছিলো শব্দদূষণ। তাছাড়া ঘোড়া এক্সিডেন্ট করে বহুলোক মারা গেছে এমন নজির নেই। এর কারণ কি? কারণ ঘোড়া ছিলো আল্লাহর সৃষ্টিপ্রাকৃতিক যানবাহন। যার শক্তি ও গতি বেগ নিয়ে আল্লাহ সুবহানাহুতাআলা আল আদিয়াত নামে একটি সুরাই নাজিল করেছেন। আর প্রযুক্তি মানুষের তৈরী তাই দেখা যায়৫০০ যাত্রী নিয়ে বিমান উধাও, ১০০০ যাত্রী নিয়ে জাহাজ পানির নিচে, এছাড়া সরকদুর্ঘটনা ও রেল দুর্ঘটনায় সারা পৃথিবী যেনো মৃত্যকূপ এছাড়া বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, ও মাটি দুষণে সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রান হারায়। চিন্তা করে বলুনতো এতো মৃত্যুর জন্য কে দায়ী? আপনার আদরের সন্তান যখন স্কুলে যায় শব্দদূষণের স্বীকার হয়। কে শব্দকে দুষিত করলো?।আপনি যখন বাসা থেকে বের হন বিষ মিশ্রিত বাতাস শাস নালী দিয়ে গ্রহন করেন। কে বাতাসে বিষ মেশালো? বুড়িগঙ্গা,শীতলক্ষ্যা, তুরাগের পানি কে দুষিত করল?। আমরা কিভাবে ভুলে যেতে পারি আল্লাহ আমাদেরকে প্রকৃতির উপর সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক মানুষকে যদি ক্ষুদ্রক্ষুদ্র করে ভাগ করেন তবে মাটি, পানি, আগুন, বাতাস ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাবে না। তার মানে হলো যতদিন মাটি, পানি, আগুন, বাতাস ঠিক থাকবে ততদিন পৃথিবীতে মানুষসহ সকল প্রানিজগত ঠিক থাকবে। আর এগুলো যদি দুষিত হয় তাহলে পৃথিবী জীবজগৎ এর জন্য জাহান্নামের একটি টুকরা ছাড়া আর কিছুই নয়। এবার বলুন উন্নত জীবনের মানে কি? আপনি যদি ভালোভাবে বেঁচে থাকতে না পারেন তাহলে কিসের উন্নত জীবন। আপনি কি এখনও স্বীকার করবেন না এতো ক্ষতির পেছনে প্রধান খলনায়কের ভূমিকায় প্রযুক্তি।
আপনি কি এখনও বলবেন প্রযুক্তি আমাদের শান্তিপূর্ন যোগাযোগ ব্যাবস্থা উপহার দিয়েছেন।বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নাম ফেসবুক। আপনারা সবাই হযতো এর সুফল কুফল ভালোভাবে অবহিত আছেন। ফেসবুকের আবিষ্কারক মার্কজাকারবার্গ নিজেই ফেসবুক নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচার হয়েছে। তিনি বলেছিলেন মানুষ ফেসবুককে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনে করে,আর আমি মনে করি তা মানুষের সামাজিক বন্ধনকেই ছিন্ন করে দিয়েছে। কত ভয়ংকর কথা!অথচ আমরা সেটাকে এমনভাবে নিযেছি স্ত্রী না থাকলে চলবে কিন্তুু ফেসবুক ছাড়া চলা যাবেনা। যেখানে মুসলিম পরিবারগুলো ইসলামের জন্য এক একটি দুর্গ হওয়ার কথা ছিলো সেখানে পরিবারগুলোর কি অবস্থা একটু চিন্তা করুন। পূর্বে পরিবারগুলোর সন্তানেরা বাবা মায়ের দুআ পাওয়ার প্রত্যাশা নিয়ে বড় হতো এবং তাদের বদদুআকে ভীষনভাবে ভয় পেতো, আর এখন?।খুব কম পরিবারই আছে যাদের ছেলেমেয়েদের স্বাভাবিক বিয়ে সম্পন্ন হয়। ভাইবোন একে অপরের প্রতি ভক্তি ভালোবাসা বিশ্বাস নেই বললেই চলে। শান্তিতো নেই ই বরং এক একটি পরিবারকে মেেন হয় এক একটি জাহান্নাম। ( আল্লাহ আমাদের ক্ষমা৷ করুন)। আধুনিক কৃষির কথা বলবেন? অবশ্যই স্বীকার করি আগের চেয়ে খাদ্য উৎপাদনের হার অনেক বেশি। জমিতে আগে যা ফলন হতো এখন তার চেয়ে অনেক বেশি ফলন হয়,এ যেনো যাদুর ছোঁয়া। কিন্তুু খাদ্যের কোয়ালিটি কোথায়?। ১৩৩ জাতের ধান গবেষণা করে সবগুলোর মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত শিশা ও আর্সেনিক পাওয়া যায়। গাভির দুধে মাত্রাতিরিক্ত শিশা ওআর্সেনিক পাওয়া যায়। আগে অসাধু ব্যাবসায়িরা খাদ্যে ভেজাল মেশাতো আর এখন উৎপাদিত খাদ্যই ভেজাল।জমিতে কীটনাশক ব্যাবহারের ফলে মাটির গুনগত মান নষ্ট হয়। সেই মাটিতে বৃষ্টির পানি পরে তা নদী নালা খাল বিলে মিশে যায় ফলে মাছের প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। এপর্যন্ত কত প্রজাতির মাছ যে বিলুপ্ত হয়েছে তার সঠিক কোনো হিসেব নেই। বিলুপ্ত হওয়ার কারণ একটাই তাদের বেঁচে থাকার পরিবেশ নেই।আপনারা হয়তো বলবেন মৎস্য উৎপাদনে আমাদের সাফল্য ব্যাপক। তা অবশ্যই স্বীকার করি, তবে টেকনোলজির মাধ্যমে চাষ করা মাছ আর প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া মাছ কি একইরকম? আমরা দেশি মোরগ ও পোল্ট্রির মধ্যে পার্থক্য কেমন তা ভালোভাবেই বুঝি। পোল্ট্রির খামারে যদি কিছু সময়ের জন্য ইলেক্ট্রিক ফ্যান বন্ধ করা হয় তাহলে দেখবেন মূহুর্তের মধ্যে সব হাসফাস করে মারা যাবে। মানুষও এখন প্রযুক্তির যাদুর ছোঁয়াতে পোল্ট্রির রুপ ধারন করেছে।আগে যারা এসি রুমে বসে কলমবাজি করে আয়েশি জীবন যাপন করতো তাদের বেশিরভাগ লোককেই ডায়াবেটিসে ধরতো।আর এখন! রিক্সাচালক ব্যাটারী ছাড়া তার রিক্সার চাকা ঘোরে না। কায়িকশ্রম যেনো উঠেই গেছে।এখন অপেক্ষা করো ডায়াবেটিস তোমাকে অনেক উন্নত জীবন উপহার দিবে।
বর্তমানে পৃথিবীতে সবচেয়েবড় সমস্যা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। বিজ্ঞানীরা বলতে শুরু করেছেন আমাদের আর একে অপরের সাথে যুদ্ধ করে মরতে হবে না। আমাদের প্রধান যুদ্ধ হবে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে। এই যুদ্ধে হেরে গেলে পৃথিবীর সবাইকে নিয়ে একসাথে মরতে হবে। বিজ্ঞানীরা রেড এ্যালার্ট জারি করেছেন, বলেছেন আমাদের হাতে আর সময় নেই,এখনই যদি আমরা আমাদের কৃতকর্ম থেকে ফিরে না আসি তাহলে পৃথিবী আমাদের ধ্বংস ছাড়া আর কিছুই দিবে না। তারা সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য মানুষকেই দায়ী করেছেন।একটু খতিয়ে দেখতে হবে এই ধ্বংসলীলার জন্য মানুষ কিভাবে দায়ী। আমি আগেই বলেছি প্রযুক্তিহলো জালিমদের শোষণের হাতিয়ার। যেদিন এই হাতিয়ার ভোতা হয়ে যাবে সেদিনই মজলুমদের বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ। সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ কলকারখানা থেকে প্রতিদিন যে হারে কার্বননিঃসরন হচ্ছে তা বায়ুমন্ডলকে মহা বিপজ্জনক করে তুলেছে। ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বরফগলা, ঝর, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা ও অগ্নিপাতের মতো বড় বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় সংগঠিত হচ্ছে। যেদিন থেকে শিল্পবিপ্লবের সূচনা সেদিন থেকেই পরিবেশবাদি আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। কারণ শিল্পকারখানা বেঁচে থাকার পরিবেশ নষ্ট করে। প্রযুক্তিনির্ভর লক্ষ লক্ষ কলকারখানা ব্যাঙের ছাতার মতো সারাপৃথিবী ব্যাপি গড়ে উঠেছে। তার কোনটি আছে এমন যে পরিবেশের ক্ষতি করে না। আপনি মাটির ঘরে শান্তি খুঁজে পান না, আপনার চাই আকাশছোঁয়া ভবন। আপনাকে ভবন উপহার দিতে গিয়ে ইটভাটাগুলোকে যে পরিমান বিষ ছড়াতে হয়েছে তা কিন্তুু শুধু আপনি নন, আপনার পরিবার,আপনার প্রিয় স্বদেশ এবং গোটা দুনিয়াকে বিষাক্তকরে তুলেছে।অনেকবার জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন থেকে সিএফসি(ক্লোরোফ্লোরোকার্বন) নিঃস্বরণ কমাতে উৎপাদিত বিভিন্ন দ্রব্যের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে কিন্তুু তাতেও তেমন কোনো লাভ হয়নি। তাদের উচ্চাভিলাষী আকাঙ্ক্ষার কাছে পৃথিবী যেনো মুল্যহীন।আমাদের বিবেক যেনো কোনো ভাবেই জাগ্রত হয় না। উন্নতি নামের ধ্বংসের পেছনে আমরা খুব দ্রুত ছুটে চলেছি। হয়তোবা কোনো দিন প্রমান হবে প্রযুক্তিশান্তি নিয়ে নয় বরং শান্তির ছদ্মবেশে অশান্তির দাবানল হয়ে এসেছিলো। শুধু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা সেদিন যেনো আমাদের হারানোর অংকটা বেশি বড় না হয়। 🌷🌷🌷

Check Also

শিকড়ের সন্ধানে : হজরত নূহ আ.-এর জ্যেষ্ঠপুত্রের বাংলাদেশ

॥ হারুন ইবনে শাহাদাত ॥ আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের সাথে ঐতিহাসিকভাবে জড়িয়ে আছে হজরত নূহ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।