একসঙ্গে পথচলার ঘোষণা দিল ড. কামালের গণফোরাম

বিভক্তি ভুলে অবশেষে ঐক্যের পথেই হাঁটতে শুরু করেছেন গণফোরামের শীর্ষ নেতারা। দীর্ঘদিন পর একসঙ্গে বসে ঐক্যবদ্ধভাবে পথ চলার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

শনিবার রাজধানীর বেইলি রোডে নিজ বাসভবনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলে আর কোনো সমস্যা নেই উল্লে­খ করে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, দলে কোনো সমস্যা নেই। সে রকম সমস্যা যদি থেকে থাকে, এখন তা নেই। সবাই আছি, থাকব। এগুলো নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কোনো কিছু হলে তুলে ধরা হবে।

ড. কামালের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান গণফোরামের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণফোরামের কাউন্সিল সামনে ঘোষণা দেয়া হবে। কাউন্সিলে পূর্ণ সিদ্ধান্ত হবে, কী কী সমস্যা আছে, সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। আর এসব তুলে ধরা হবে ৯ জানুয়ারির সংবাদ সম্মেলনে।

গণফোরামে নতুন নেতৃত্ব আসবে কিনা- এমন এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, দলের একদম ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নতুন নেতৃত্ব বেরিয়ে আসুক এটাই আশা। প্রতিবছরই বলছি, আমি আর না। বলে, আরেকটু থেকে যান। এবার নতুন নেতৃত্ব করতে হবে।

গণফোরাম সভাপতি বলেন, প্রতিটি জেলায় গিয়ে মানুষকে সঙ্গে নিয়ে সমাবেশ করা হবে, কর্মী সমাবেশ হবে, সবাইকে কাজে লাগানো হবে। গতানুগতিকভাবে এ পরিস্থিতিকে মোকাবেলা করা যাচ্ছে না। যে ঘুষ-দুর্নীতি লক্ষ করা যাচ্ছে, এগুলো জনগণকে নিয়ে অর্থপূর্ণভাবে আমাদের মোকাবেলা করতে হবে।

ভাস্কর্যের বিরোধিতার ইস্যু প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, এটা ধর্মের অপব্যবহার, আর কিছু না। জাতিকে বিভক্ত করার জন্য এটা করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য শারীরিক অসুস্থতার কারণে গণফোরামের তিন শীর্ষ নেতা ড. রেজা কিবরিয়া, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এবং অধ্যাপক আবু সাইয়িদ অনুপস্থিত ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে গণফোরামের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোস্তফা মোহসীন বলেন, ড. রেজা কিবরিয়া, সুব্রত চৌধুরী, আবু সাইয়িদ আইসোলেশনে আছেন। আমাদের কাউন্সিলের কোনো তারিখ নেই। দুইটা তারিখ পড়েছিল, প্রত্যাহার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি যেটা ছিল, সেটা ঘরের মধ্যে ভাই-ভাইয়ের মধ্যে ঝগড়া হতেই পারে। আবার নিজেরা একসঙ্গে হয়ে যায়। আমাদের অভিভাবক আছেন, তাকে সামনে রেখে আমরা সমাধান করে ফেলেছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান, গণফোরামের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওম শফিক উল্লাহ, মোহসীন রশীদ, এ আর জাহাঙ্গীর, মহিউদ্দিন আবদুল কাদের, মোস্তাক আহমেদ ও সেলিম আকবর।

২০১৯ সালে ২৬ এপ্রিল গণফোরামের সর্বশেষ কাউন্সিল হয়। সেখানে একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে দলে যোগ দেয়া ড. রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। সে কাউন্সিলের পর থেকেই গণফোরামে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। দলে পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার চলে।

গত ২৬ সেপ্টেম্বর গণফোরামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীনের নেতৃত্বে একটি সভা হয়। সেখান থেকে ২৬ ডিসেম্বর কাউন্সিলের ঘোষণা দেয় গণফোরামের এই অংশ। তারা সেদিন সংগঠনের শৃঙ্খলা ও গঠনতন্ত্র অমান্য করে সংগঠনের ঐক্য ও স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য গণফোরামের আহ্বায়ক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া, সদস্য মোহসীন রশীদ, আওম শফিক উল্লাহ ও মোশতাক আহমেদকে বহিষ্কার করেন।

এ ছাড়া ১৭ অক্টোবর দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ ও গঠনবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব না দেয়ায় গণফোরামের ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন অংশ মোহসীন, সুব্রতসহ আটজনকে বহিষ্কার করে এবং ১২ ডিসেম্বর কাউন্সিলের ঘোষণা দেয়।

পাল্টাপাল্টি বহিষ্কারের মধ্যেই দুই পক্ষ এক হওয়ার গুঞ্জন শোনা যায় এবং গত ১১ নভেম্বর ড. রেজা কিবরিয়া এক বিবৃতিতে তাদের কাউন্সিল স্থগিতের কথা জানান। এরপর ১৩ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, দলের মধ্যে এযাবৎ যেসব বহিষ্কার পাল্টা-বহিষ্কার হয়েছে, তা এখন থেকে অকার্যকর হিসেবে গণ্য হবে। চলমান সমস্যার সমাধানে জাতীয় কাউন্সিল হবে।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।