অভয়নগরে সহকারী প্রোগ্রামারকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

বিলাল মাহিনী (অভয়নগর)  : যশোরের অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) বিরুদ্ধে উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামারকে যৌন হয়রানি ও মানসিক নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী নারী কর্মকর্তা প্রতিকার চাওয়ায় তাকে ‘রক্ষা করতে’ বদলির আদেশ দিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর। অথচ বহাল তবিয়তে রয়েছেন ওই দুই কর্মকর্তা। অভিযোগ রয়েছে, যৌন প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় মানসিক নিপীড়নের পাশাপাশি তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। অবশ্য, অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তা।
এদিকে, জেলা প্রশাসক বলছেন, বিষযটি তদন্ত করে সত্যতা পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিযোগের একদিন পরই প্রথম শ্রেণির ওই নারী কর্মকর্তাকে মানিকগঞ্জ শিবালয় উপজেলায় বদলি করা হয়েছে।
অভয়নগর উপজেলার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরেরর সহকারী প্রোগ্রামার উত্তরা শতদ্রু প্রাচী। গত ২২ ডিসেম্বর অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর কর্মস্থলে যৌন হয়রানি ও জীবননাশের হুমকির অভিযোগ দাখিল করেন তিনি। বলেন, গত ৪ মার্চ তিনি অভয়নগর উপজলায় সহকারী প্রোগ্রামার হিসেবে যোগদান করেন। কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকে সততার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু শুরু থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হুসেইন খান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সম্পর্কে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তাকেসহ অন্য সহকর্মীদের গালিগালাজ করেন; যা ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য। এছাড়া অফিসের নির্ধারিত সময়ের পর গভীররাত পর্যন্ত তাকে অফিসে থাকতে বাধ্য করেন। একপর্যায়ে তিনি প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শরিফ মোহাম্মদ রুবেলের মাধ্যমে কুপ্রস্তাব পাঠান। তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সর্বশেষ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন। যে কারণে তিনি সম্মান ও আত্মমর্যাদা নিয়ে চাকরি করতে মহাপরিচালকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিআইও শরিফ মোহাম্মদ রুবেল তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, ‘’আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আমি কোনো কুপ্রস্তাব দিইনি। ওনাকে ট্যাগ অফিসার নিয়োগ করেছেন ইউএনও স্যার। আমি কাজ বুঝে নিতে চাইলে কাজ বুঝিয়ে দিতেন না। অফিস ফাঁকি দিতেন। আমি তাকে ‘বোন’ বলে সম্বোধন করতাম। আমি তাকে কোনো ধরনের বাজে কথা বলিনি।
জানতে চাইলে ইউএনও নাজমুল হুসেইন খান বলেন, সহকারী প্রোগ্রামার কর্মস্থলে যোগদানের পর থেকে অফিসে সময় দিতেন না। মহান বিজয় দিবসের দায়িত্ব, করোনার দায়িত্ব তিনি পালন করেন না। সর্বশেষ তাকে ৪০ দিনের কর্মসৃজনের কাজে ট্যাগ অফিসার নির্ধারণ করা হয়। এতে তিনি ফাঁকি দিতে পারছিলেন না। এছাড়া, প্রধানমন্ত্রীর ঘর দেওয়ার প্রকল্পের একটি চিঠি দেওয়ার শেষ দিন ছিল ২৩ ডিসেম্বর। ২২ ডিসেম্বর পিআইও তাকে ফোন দিয়েছিলেন। তাকে কাজটা করে দিতে সহযোগিতার অনুরোধ করেন। কিন্তু পাঁচটা বাজায় সহকারী প্রোগ্রামার উত্তরা শতদ্রু অফিস ত্যাগ করেন। এ নিয়ে তাদের কথাকাটাকাটি হয়েছে। এসময় উভয়ে কিছু আপত্তিকর কথা বলেছে। কিন্তু উত্তরা অডিও এডিট করে অপপ্রচার শুরু করেছে। কোনো প্রমাণ ছাড়াই আমাকে জড়িয়েও আপত্তিকর অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
ইউএনও আরো বলেন, ‘অবারিত ছুটি কাটাতে না পারায় তিনি আমাকে জড়িয়ে এসব অভিযোগ করছেন। আমার জানা মতে, পিআইও তাকে কখনো উত্ত্যক্ত করেননি। তারপরও বিষয়টি তদন্ত হোক। তাহলে বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে। এছাড়া এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন আমি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠিয়েছি।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি অভিযোগটি শুনেছি। এটা তদন্ত না করে কিছু বলা যাবে না। তবে তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
Please follow and like us:

Check Also

কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি

সনদ বাণিজ্য চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে স্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পর এবার বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।