যুবলীগ নেতা কাজী আনিসের দুর্নীতি ১২৯ কোটি টাকা সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য দুদকের হাতে

যুবলীগ নেতা (বহিষ্কৃত) ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কাজী আনিছুর রহমানের ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৩৬ টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া তার স্ত্রী সুমি রহমানের বিরুদ্ধে ২ কোটি ৬১ লাখ টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য মিলেছে। তদন্তকালে কাজী আনিছের বিরুদ্ধে ২৫টি ব্যাংক হিসাবে ১২৯ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পেয়েছে। দুদক থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

দুদকের জনসংযোগ শাখা জানায়, ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ১২ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকা মূল্যের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর কাজী আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। একইদিন তার স্ত্রী সুমি রহমানের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৩১ লাখ ১৬ হাজার ৫০০ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আরও একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর মামলা দুটির তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয় দুদকের উপ-পরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধানকে। তিনি দীর্ঘ তদন্ত শেষে চার্জশিট দাখিলের জন্য কমিশনে গতকাল বৃহস্পতিবার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজী আনিছুর রহমানের নামে ১৮ কোটি ৮৯ লাখ ১ হাজার ৩৩৫ টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে মাত্র ৩ কোটি ৯৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৯ টাকা মূল্যের সম্পদই বৈধ। বাকি ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৩৬ টাকার সম্পদের বৈধ কোনো উৎস পাওয়া যায়নি। এছাড়া তার নিজ ও প্রতিষ্ঠানের নামে ২৫টি ব্যাংক হিসাবে ২০১১ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ১২৯ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার ২১৩ টাকা জমা করেন। যার মধ্যে শেয়ার ব্যবসাসহ অন্যান্য খাত থেকে আয় হয়েছে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৭১ হাজার ৩৬৫ টাকা। অর্থাৎ ১২৯ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার ২১৩ টাকার মধ্যে ১২৩ কোটি ৫৪ লাখ ৪৫ হাজার ৮৪৮ টাকা টাকা সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে, যা অপরাধলব্ধ আয়ের উৎস গোপন বা আড়াল করার অসৎ উদ্দেশ্যে তা স্থানান্তর, হস্থান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এসব বিষয় তুলে ধরে চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিতে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান কমিশনে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

কমিশন তদন্ত কর্মকর্তার সুপারিশের আলোকে আসামি কাজী আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪ (২) ও ৪ (৩) ধারায় চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দেয়।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাজী আনিছুর রহমানের স্ত্রী মোছা. সুমি রহমানের নামে ২ কোটি ৬৩ লাখ ৬২ হাজার ২১৮ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে। এ সম্পদের মধ্যে বৈধ আয় পাওয়া গেছে মাত্র ২ লাখ টাকার। বাকি ২ কোটি ৬১ লাখ ৬২ হাজার ২১৮ টাকা মূল্যের সম্পদের কোনো বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি। তার স্বামী কাজী আনিছুর রহমান অবৈধ অর্থ বিভিন্ন উপায়ে স্ত্রীর হিসাবে স্থানান্তর করে স্ত্রীকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তা করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এসব অপরাধের দায়ে তদন্তকারী কর্মকর্তার সুপারিশের ভিত্তিতে আসামি মোছা. সুমি রহমান ও তার স্বামী কাজী আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় কমিশন একটি চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন দিয়েছে।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।