উৎপাদনে যেতে পারছে না অধিকাংশ হ্যাচারি

এফএনএস : গভীর সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশের সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি শিল্প। পোনা উৎপাদনকারী হ্যাচারি গুলোতে মাদার (মা বাগদা চিংড়ি) সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করায় সমুদ্র থেকে মাদার চিংড়ি আহরণকারী জাহাজ থেকে সম্প্রতি কক্সবাজারভিত্তিক গড়ে ওঠা হ্যাচারিগুলোতে মাদার সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে প্রয়োজনীয় মাদার না পেয়ে পোনা উৎপাদনে যেতে পারছে না কক্সবাজারের অধিকাংশ হ্যাচারি। আর কক্সবাজারের অধিকাংশ হ্যাচারিতে বাগদা চিংড়ি পোনার উৎপাদন না হওয়ায় সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটসহ আশপাশের এলাকায় পোনা সরবরাহ উলে­খযোগ্য হারে কমে গেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় পোনার দামও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন অবস্থায় মৌসুমের শুরুতেই পোনা সংকটের কারণে চাষিরা তাদের ঘেরে পোনা ছাড়তে পারছে না। আর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ঘেরে পোনা ছাড়তে না পারলে চাষিদের মোটা অঙ্কের টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এমন অবস্থায় যারা ব্যাংক লোন নিয়ে যারা চিংড়ি চাষ করে তারা বিপাকে পড়েছে। চিংড়ি খাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বাজারে পোনা সরবরাহ কম হলেই দাম বেড়ে যায়। এমনিতে মড়কের কারণে চিংড়ি চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত। তারপর নিজেদের স্বার্থে এভাবে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হলে ঘেরে পোনা ছাড়তে না পেরে চাষিরা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে চাষিদের ঘেরে পোনা ছাড়তে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাতে চিংড়ির উৎপাদনও কমে যাবে। একই সঙ্গে কমে যাবে রপ্তানিও। বাজারে মানসম্মত পোনা সরবরাহ নিশ্চিত করতে মাদার সরবরাহ যাতে স্বাভাবিক থাকে সে বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ জরুরি। সূত্র জানায়, চিংড়ি রপ্তানি থেকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার একটি বড় অংশ আসে। কিন্তু পোনা সংকটের কারণে চিংড়ির উৎপাদন কম হলে রপ্তানিও কমে যাবে। দেশের অর্থনীতির ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। একই সঙ্গে চিংড়ি শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে হ্যাচারিগুলোতে মাদার সাপ্লাই বন্ধ থাকার কারণে অধিকাংশ হ্যাচারিই পোনা উৎপাদনে যেতে পারছে না। মূলত মাদার সাপ্লাইকারী জাহাজ ব্যবসায়ী, মাদার বহনকারী কার্গো অ্যাসোসিয়েশন ও ফিড ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগসাজশে পুরো ব্যবসাটা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে। তারা কোটা করে প্রতিটি মাদারে কমিশন নেয়ার জন্য পরিকল্পিতভাবে হ্যাচারিতে মাদার সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। যে কারণে কক্সবাজার ভিত্তিক ৫৬টি হ্যাচারির মধ্যে বর্তমানে মাত্র ২৩টি চালু আছে। এভাবে ১৫ দিন মাদার বন্ধ থাকার কারণে চাষিরা আগামী এক মাস পোনা পাবে না। ফলে বাজারে পোনা সরবরাহ না হলে ঘের মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদিকে হ্যাচারিগুলোতে মাদার সরবরাহকারীদের মতে, হ্যাচারিগুলোতে মাদার ফুলফিল হয়ে গেছে। এখন স্টকিং করার জায়গা নেই। যে কারণে জাহাজগুলো মাদার আহরণ না করে সাদা মাছ আহরণে চলে গেছে। তাছাড়া মাদারের দামও একটু বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। অন্যদিকে মৎস্য অধিদপ্তর খুলনার সহকারী পরিচালক রাজকুমার বিশ্বাস জানান, বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে ১ লাখ ৫২ হাজার ৪৯৬ হেক্টর আয়তনের জমিতে ১ লাখ ১১ হাজার ৯৪০ চিংড়ি ঘের রয়েছে। প্রতি মৌসুমে ওসব ঘেরে মোট পোনার চাহিদা রয়েছে ৩৫১ কোটি। যদি কোটার মাধ্যমে বাজারে পোনা সরবারহ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হলে ওই অঞ্চলে পোনা সংকটের সৃষ্টি হবে। ফলে ঘেরে পোনা ছাড়তে না পেরে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মাছের উৎপাদনও কমে যাবে। তখন পুরো চিংড়ি শিল্পের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।