মামুনুল হক ও বাবু নগরীদের দ্রুত গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের- জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, দুধ কলা দিয়ে গোখরো সাপ পুষতে নাই। যে পুষবে গোখরো সাপ দিন শেষে তাকেই ছোবল মারবে। তাই রাখঢাক না করে মামুনুল হক ও বাবু নগরীদের দ্রুত গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করতে হবে।
রোববার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্যের সুযোগ নিয়ে ইনু এই দাবি জানান। তিনি বলেন, প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে হেফাজত ইসলামী স্বাধীন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠিন-কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
রোববার জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্যের সুযোগ নিয়ে ইনু এই দাবি জানান। তিনি বলেন, মামুনুল হক বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে প্রকাশ্যে হুংকার দিয়ে বক্তব্যে দিয়েছেন, বাবুনগরী চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বক্তব্যে দিয়েছেন। তাদের ধরার জন্য দূরবীণ দিয়ে খোঁজা লাগবে না। ডিজিটাল সমাজে প্রত্যেক ঘরে ঘরে তাদের ভাষণ আছে। সুতরাং মামুনুল হক এবং বাবুনগরীকে কেন প্রধান উসকানিদাতা হিসেবে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য গ্রেফতার করা হচ্ছে না, সেটাই বড় প্রশ্ন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনি রাগ-ঢাক না করে মামুনুল হক ও বাবু নগরীদের গ্রেফতার করেন, কারাগারে নিক্ষেপ করেন। জঙ্গিদের যেমন সফলভাবে দমন করেছেন, সেভাবে এখানেও সফল হবেন। আপনার সক্ষমতা ও যোগ্যতা আছে, আপনি দমন করেন। রাষ্ট্রকে নিরাপদ করেন।
সাবেক এই তথ্যমন্ত্রী বলেন, হেফাজতের রাষ্ট্র, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে অস্বীকার করার এই দুষ্কর্ম কার্যতঃ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার সামিল। ঢাকাতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার হুমকি, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার হুমকি, কুষ্টিয়াতে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য আক্রমণ করে ভাঙার ঘটনা, এ সবই নজরে নেয়া উচিত। কারণ বঙ্গবন্ধুকে আক্রমণ করা মানে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা। রাষ্ট্রকে অস্বীকার করা। এটা শুধুমাত্র ছোট-খাটো আইন-শৃঙ্খলা ব্যত্যয়ের ঘটনা নয়।
তিনি আরও বলেন, সাম্প্রতিককালে হেফাজতে ইসলাম স্ব-নামে সুনামগঞ্জের শাল্লায় সংখ্যলঘু সম্প্রদায়ের বাড়িতে আক্রমণ পরিচালনা করেছে। এটা সংবিধান অনুযায়ী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার একটা মহাচক্রান্ত এবং দুষ্কর্ম। এটা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।
হেফাজতের পেছনে বিএনপি আছে দাবি করে হাসানুল হক ইনু বলেন, ফেরেস্তার নেতা ছিলেন ইবলিশ, আল্লাহর নির্দেশ না পালন করে ইবলিশ, ইবলিশে পরিণত হয়। উনি ফেরেস্তাগিরি ছেড়ে দোযখের ঠিকাদারি নেয়। ঠিক তেমনি বীরউত্তম জিয়াউর রহমান আর কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার কাজ বাদ দিয়ে রাজাকারের ঠিকাদারি নেন। সেই রাজাকারদের ঠিকাদারির দল বিএনপি। সেই বিএনপি আজকে সরাসারি হেফাজতকে সমর্থন দিচ্ছে। অর্থাৎ হেফাজত ইসলাম বিএনপির ভাড়াটে খেলোয়ার হিসেবে রাজাকার ও পাকিস্তানপন্থার পক্ষে খেলছে।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজত সশস্ত্র তাণ্ডব চালিয়েছিল, সেদিন বিএনপি সরাসরি সমর্থন দিয়েছিল। এবারও স্বাধীনতা দিবসে যে তাণ্ডব চালাল, বিএনপি প্রকাশ্যে রাগ-ডাক ফেলে দিয়ে সরাসরি সমর্থন দিল এবং এখনো বিএনপি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। এতে পরিষ্কার হেফাজতে ইসলাম, বিএনপি-জামায়াত-জঙ্গি, একই চক্র-একই গোষ্ঠী। এরা একাত্তরের রাজাকারের উত্তরসূরি।
হেফাজতের তাণ্ডবকালে পুলিশের নীরবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জাসদ সভাপতি বলেন, দুঃখের সঙ্গে বলছি ওই তাণ্ডবের মধ্যে পুলিশ প্রশাসনের অসহায়ত্ব প্রকাশ পেয়েছে। এই দুর্বলতা কেন? কিসের সমস্যা? পুলিশের গাড়িতে আগুন, আসামি ছিনতাই। পুলিশ কি তার নৈতিক বল হারিয়ে ফেলেছে? পুলিশের কি জনবল কম হয়ে গিয়েছে? আমি তো দেখেছি, পুলিশকে চমৎকারভাবে শাপলা চত্বর মোকাবেলা করেছে। সুতরাং পুলিশ কেন অসহায়, এটা সংসদ নেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।