দেশে দরিদ্র মানুষের হার বেড়েছে

  • জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড) সংক্রমণ বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দফায় দফায় সরকারের বিধিনিষেধ বাড়ায় দেশের শ্রমজীবী মানুষের কর্মহীন হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এর ফলে নগরে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয় না বাড়ানোয় অর্থনীতিবিদরা বলছেন, হঠাৎ করে না আস্তে আস্তে মরতে থাকবে শ্রমজীবী মানুষ। আন্তর্জাতিক শ্রমসংস্থার (আইএলও) তথ্যনুযায়ী, কোভিডের কারণে দেশে প্রতি চারজন যুবকের একজন বেকার হয়েছেন। আনুষ্ঠানিকখাতে চাকরি করেন এমন তের ভাগ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। বেতন কমেছে পচিশভাগ মানুষের। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের হিসেবে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আড়াই কোটি। বর্তমানে পরিস্থিতিতে সংখ্যা বাড়লেও তাদের কাছে এ মুহূর্তে কোনো পরিসংখ্যান নেই। আর বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির হিসেবে কোভিডের কারণে কাজ হারিয়ে গত একবছরে এককোটি চৌষন্ট্রি লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে গেছে। অর্থনীতিবিদরা আরও জানান, স্বল্প আয়ের কর্মহীন শ্রমজীবীদের সামান্য কিছু টাকা দিলে মূল সমস্যার সমাধান হবে না। বিশেষ করে কর্মহীন শ্রমজীবী মানুষ যাতে অতিদরিদ্রের কাতার থেকে বের হয়ে আসতে পারে এ পথ সুগম করা। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার কারণে আমি লকডাউনের বিপক্ষের লোক। আর লকডাউন মানে অর্থনীতিকে লকডাউন করে রাখা। এই শ্রেণির মানুষ কাজ করতে না পারলে তাদের খাবার আসবে কোথা থেকে ? সমাজে এদের সংখ্যা ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ শতাংশ। তিনি বলেন, শ্রমজীবীদের কাজ থেকে দূরে রাখলে তাদের চ্যারিটি বা সরকারের অনুদান দিয়ে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। বাংলাদেশের মানুষের পক্ষে লকডাউন এ্যার্ফোড করা সম্ভব না। তাই শিথিল করে শ্রমজীবী মানুষের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়ায় শ্রেয়। যারা লকডাউনের পক্ষে শক্ত অবস্থান নিয়েছে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন সমাজের এই শ্রমজীবী মানুষের খাবারের ব্যবস্থা কোথা থেকে হবে। ইতিমধ্যে দারিদ্র বেড়েছে। তিনি বলেন, ট্রাকে লম্বা লাইনে টিসিবির পণ্য কিনছে। তাই সরকারকে লকডাউনের বিকল্প ভাবতে হবে। আমার অর্থনীতি যদি ঠিক না থাকে এবং শ্রমজীবী মানুষ কাজ থেকে দূরে থাকে তাহলে এই শ্রেণির মানুষ হঠাৎ করে না আস্তে আস্তে মরতে থাকবে। এটা করে তাদের প্রতি সবচেয়ে বেশি অবিচার করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেছেন, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরে যখন চরম চাপ পড়ে এবং এটা যখন হ্যান্ডেলিং করা সম্ভব হয় না; তখন চরম ব্যবস্থা হিসেবে লকডাউন ঘোষণা করা যা কারফিউ সমতূল্য হবে। এটা সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ হতে পারে। এ সময়ে শ্রমজীবী মানুষের কাছে আর্থিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া যেতে পারে যা সরকারের জন্য কঠিন কোনো কাজ না। কিন্তু আমাদের এখানে সেটা সম্ভব হয় না। ফলে গণপরিবহন ছাড়াই সড়কে যানজট তৈরি হয়। অপরদিকে লম্বা সময় লকডাউন থাকার কারণে শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন থাকছে। তাই লকডাউনের বিকল্প চিন্তা করা সরকারের কাছে সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে। কারণ লকডাউন লকডাউন খেলাতেই সর্বনাশ হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের। কেননা মানুষের কষ্টের কথা ভেবে কিছু ছাড় দিচ্ছেন। আবার দোকান খুলে দিচ্ছেন এতে শ্রমজীবী মানুষের কাজের চাহিদা ফিরে আসে না। স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে মানুষজন যতটুকু কাজ করতে পারে। তার মধ্যে সংক্রমণ হয়ত ততটা কমবে না। কিন্তু শ্রমজীবী মানুষ বেচে যাবে। তিনি বলেন, যারা দিনে এনে দিনে খায় তাদের কোনো সঞ্চয় নেই এবং নেই অন্য কোনো উপায়। তাদেরকে কাছে সহায়তা পৌছানোর একটা ব্যবস্থা করা। গত একবছরে আমাদের কিছু শেখার কথা থাকলেও আমার শিখেনি। অর্থনীতি পুরো সচল না হলে তাদের দুর্দিন চলতে থাকবে। ওদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার সক্ষমতা আমাদের নেই। অন্যদিকে আমরা যখন মোটা অংকের সহায়তা কর্মসূচি দেখি তখন অর্থের যোগানে কোনো ঘাটতি দেখি না। গত বছরের লকডাউনে যে ছয়ত্রিশ লাখ সরকারের সহায়তা পেয়েছিল এবারো তারাই আর্থিক অনুদান পাবেন। সংখ্যা বাড়েনি। অথচ খাদ্েয মূল্েযরস্ফূতি বেড়েছে -সেখানে টাকা অ্যাডজাস্টমেন্ট করা হয়নি। আবার তালিকাভুক্তদের সময়মতো ওই টাকা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা আড়াই কোটি সেখানে ছয়ত্রিশ লাখ সহায়তা পাচ্ছে এটাতো দুংখজনক। এতে নগর দরিদ্ররা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এদের চিহ্নিত করা কঠিন কোনো কাজ না। শহরের বস্তি কোথায় আছে এবং শ্রমজীবী মানুষ কোথায় থাকে এসবই সবইর জানা। শ্রমজীবী মানুষের তাৎক্ষণিক সহায়তা দেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। এদিকে ফরিদপুরের বাসিন্দা শহীদ রাজধানীর মিরপুরে মুটের কাজ করেন। করোনা সংক্রমণের কারণে কাজে সেভাবে ডাক পারছেন না তিনি এখন। সংসার খরচ চালানো এখন তার জন্য নিদারুণ কষ্টের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। আর বিহার ক্যাম্পের দিল­ু ওয়াসা ও বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ড্রেনেজ ও সোয়াজের কাজ করে জীবন ধারণ করে এলেও করোনার ধাক্কায় তার সবকিছুই এলোমেলো গেছে। কর্মহীন হয়ে পড়া দিল­ু অন্যের বাড়িতে পানি স্লালাই দিয়ে কোনো রকমে দিন পার করছে বলে জানান তিনি। আর কিশোরগঞ্জের নাসরিন কারচূপির কাজ করে সংসার চালালেও করোনায় মার্কেট থেকে কাজের অর্ডার না পেয়ে দিব্বি বেকার জীবনযাপন করছে। সংসার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে সে বলে জানিয়েছে।

Check Also

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইয়াছিন আলীকে গ্রেফতার করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।