মেয়েকে হত্যার পর লাশ নদীতে ফেলে দেন বাবা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি

মেহেরপুর ভৈরব নদী থেকে বস্তাবন্দি নারীর লাশ উদ্ধারের ৫৮ দিন পর তার পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। এ ঘটনায় তার বাবা বজলুর রহমানকে আটক করেছে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশ। লাশের গায়ে থাকা কামিজ দেখে অর্ধগলিত নারীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। পরিবারের অবাধ্য হয়ে চলাফেরা করার কারণে তার বাবা মেহেরপুর সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বাসিন্দা বজলুর রহমান শ্বাসরোধে হত্যার পর মেয়ের লাশ বস্তাবন্দি শেষে ভৈরব নদীতে ফেলে যান। লাশ উদ্ধারের ৫৮দিন পর অজ্ঞাত হিসাবে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশ লাশ দাফন করে।

অবশেষে নারীর পরিচয় জানার পর তার বাবা বজলুর রহমানকে আটকের পর মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে বজলুর রহমান তার মেয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেন।  পরে তাকে মেহেরপুর জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়। বজলুর রহমান তার মেয়ে ববিতা ইয়াসমিন শ্বাসরোধে হত্যার পর বস্তাবন্দি করে ভৈরব নদীতে ফেলে যান।

গত ২৫শে মার্চ দিবাগত রাতে অর্ধগলিত ববিতার লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের পর থেকে মেহেরপুর সদর থানার ইন্সপেক্টর রাসুল সামদানী বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেন। তদন্তের এক পর্যায়ে অর্ধগলিত নারীর গায়ের কামিজ দেখে নিখোঁজ হওয়া মেহেরপুর সদর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর গ্রামের বজলুর রহমানের মেয়ে ববিতা ইয়াসমিনের ছবি সংগ্রহ করেন। ছবির পোশাকের সঙ্গে উদ্ধারকৃত নারীর গায়ের পোশাকের মিল খুঁজে পান। এ নিয়ে নিখোঁজ হওয়া ববিতার বাবা বজলুর রহমানকে থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মেয়ে হত্যার কথা স্বীকার করেন।

বজলুর রহমান তার স্বীকারোক্তিতে জানান, আমার একপুত্র ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে। মেয়ে ববিতা ছোট। তিন বছর আগে মেহেরপুর সদর উপজেলার বেলতলা পাড়ার জনৈক রাসেল আহমেদের সাথে মেয়ে ববিতার বিয়ে দিই। বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে ববিতার ছাড়াছাড়ি হয়। স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ির পর থেকে ববিতা পরিবারের কথা অমান্য করে বেপরোয়া চলাফেরা করতে থাকে। সে মাঝে মাঝে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তার চরিত্র নিয়ে নানা কথা শুনতে হয়। তার এ অবাধ্য চলাফেরার কারণে তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিই। সে মোতাবেক গত ২০শে মার্চ সন্ধ্যায় গাংনী উপজেলার কাথুলী গ্রামের এক আত্মীয় মেয়ে ববিতাকে একটি লেগুনা গাড়িযোগে বাড়ি ফেরার কথা বলে রওনা দিই। মেহেরপুর সদর উপজেলার কুলবাড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাছাকাছি পৌঁছায়। এক পর্যায়ে হঠাৎ করে মেয়ে ববিতার গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা শেষে মাঠের একটি কলাবাগানে লাশ ফেলে রেখে বাড়ি ফিরে আসি। পরে দুই ঘণ্টা পর ওই রাতেই ভৈরব নদীতে মাছ ধরার নাম করে একটি বস্তা নিয়ে মাঠে যাই। সেখানে গিয়ে ববিতার লাশ বস্তায় ভরে কাঁধে নিয়ে ভৈরব নদীতে ফেলে আসি।

এদিকে হত্যার ৫ দিন পর গত ২৫শে মার্চ রাতে মেহেরপুর সদর থানা পুলিশ বস্তাবন্দি অর্ধগলিত লাশটি উদ্ধার করলেও ওই লাশের কোন পরিচয় মিলে ছিলো না। ফলে পুলিশ অজ্ঞাত লাশ হিসাবেই দাফন করে। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মেহেরপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

এদিকে শনিবার বজলুর রহমানকে আটকের পর বিকেলে মেহেরপুর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নেয়া হলে, বিচারক বেগম রাফিয়া সুলতানার কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন বজলুর রহমান। বিচারকের কাছে সে মেয়ে হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করেন। পরে তাকে মেহেরপুর জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়।

Please follow and like us:

Check Also

‘জলবায়ুু পরিবর্তন’ —– ঝুঁকিতে উপকূলের ৪০ শতাংশ কৃষিজমি

বাস্তুচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা দুই লাখ ৪০ হাজার কৃষকের আবু সাইদ বিশ্বাস,সাতক্ষীরাঃ ‘জলবায়ুু পরিবর্তনে সবচেয়ে বড় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।