জনপ্রতিনিধি ও পাউবো’র কর্তার মারপিটের শিকার তরুণ জলবায়ু এক্টিভিষ্ট

শ্যামনগর প্রতিনিধি: উপকূলবাসীকে রক্ষায় মানববন্ধন করে টেকসই বাঁধের দাবি জানানোর ‘অপরাধে’ শাহিন বিল্লাহ নামের এক তরুণ জলবায়ু এক্টিভিষ্টকে মারধর করেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও পাউবো কর্মর্কতা। ঘটনাটি ঘটে গত ২৯ মে বেলা সাড়ে নয়টার দিকে শ্যামনগর উপজেলার ঝাঁপা ভাঙন কবলিত বাঁধের উপরে। এসময় বাঁধ নিয়ে পরবর্তীতে কোন ধরনের কর্মসুচি পালন করলে ‘ভয়ংকর পরিনতি’ ভোগ করতে হবে বলেও শাহিনসহ তার সহযোগীদের হুমকি দেয়া হয়।

উল্লেখ্য লক্ষ লক্ষ জনগোষ্ঠীকে রক্ষার জন্য উপকূলবর্তী এলাকায় নুতনভাবে টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে গত শুক্রবার সকালে মানববন্ধন করে শ্যামনগরের বিভিন্ন অংশের সাধারণ মানুষ। ম্যানগ্রোভ ষ্টুডেন্ট সোসাইটির আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে বুধবার ইয়াস তান্ডবের শিকার উপকূলীয় জনপদের বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীসহ কয়েকশ সাধারণ মানুষ অংশ নেয়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ পাউবোর কর্তার মারধরের শিকার শাহিন বিল্লাহ জলবায়ু নিয়ে কাজ করা উক্ত সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাষ্টিস এর সাতক্ষীরা জেলার সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে।

জানা যায় শনিবার সকাল থেকে স্থানীয় গ্রামবাসীরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে ভাঙন কবলিত ঝাঁপা অংশের উপকূল রক্ষা বাঁধের সংস্কার কাজ শুরু করে। এসময় কাজে নিয়োজিত গ্রামবাসীদের উৎসাহিত করতে স্বেচ্ছাসেবী ঐ সংগঠনের কয়েকজন কর্মী একটি অনলাইন পোর্টালে লাইভ টেলিকাষ্ট করতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট বাঁধের দায়িত্বে থাকা আলমগীর হোসেন দ্রুত সেখানে উপস্থিত হয়ে শাহিনসহ তার সহকর্মীদের লাইভ টেলিকাষ্ট বন্ধ করতে বলে।

কিন্তু তারা শ্রমিকদের দাবির প্রেক্ষিতে ঐ পাউবো কর্তার নির্দেশ না মানার জেরে পাশের থেকে এসে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান শাহিনকে পাঁচ/ছয় শত গ্রামবাসীর সামনে তাকে মারতে শুরু করে। এসময় উপস্থিত গ্রামবাসীরা এগিয়ে এসে শাহিনসহ তার সহকর্মীদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যান।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুল্লাহ গাজী ও মুজিবর রহমান জানান, আগের দিন বাঁধ এর দাবিতে মানববন্ধন করায় চেয়ারম্যান সবার সামনে শাহিনকে মেরেছে। শাহিনকে মেরে পরবর্তীতে উপকূল নিয়ে কোন কর্মসুচি পালন করলে দেখে নেয়ারও হুমকি দেন তিনি।

আজগর আলী ও সোহরাব হোসেন নামের স্থানীয় দুই শ্রমিক জানান, সকাল থেকে আমরা প্রায় তিন হাজার গ্রামবাসী বাঁধ মেরামত করছিলাম। শাহিন তা ভিডিও করে প্রচারের সময় চেয়ারম্যান লোকজন নিয়ে সেখানে হাজির হয়ে তাকে মারধির করে। পরে অন্যরা এগিয়ে এসে তাকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যায়।

এবিষয়ে শাহিন বিল্লাহর কাছে জানতে শাহিন বিল্লাহকে বার বার ফোন করা হলেও তার মুটোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
পাউব্রো বার সেকশন অফিসার আলমগীর হোসেন জানান, আমার সাথে শাহিন বিল্লাহ এর কোন সমস্যা হয়নি। তবে চেয়ারম্যানের ভাতিজা হওয়ায় তিনি শাহিন বিল্লাহর সাথে কিছুটা খারাপ আচারণ করেছেন।
মারধরের অভিযোগের বিষয়ে পদ্মপুকুরের ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাডঃ আতাউর রহমানের মুটোফোনে বার বার কল দেয়া হলে তিনি সংযোগ কেটে বিচ্ছিন্ন করে দেন। এসময় তার মুটোফোনে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনভাবে যোগাযোগ করা যায়নি।

Please follow and like us:

Check Also

কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যা বললেন ডিবির হারুন

ভুয়া সনদ সরবরাহে জড়িত থাকার অভিযোগে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদ থেকে সদ্য অব্যাহতি পাওয়া …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।