রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দিবে মিয়ানমার ছায়া সরকার

মিয়ানমার সামরিক জান্তাকে সরিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারলে বাংলাদেশসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সসম্মানে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের ছায়া সরকার।

বৃহস্পতিবার মিয়ানমারের ছায়া সরকার রোহিঙ্গা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক মিয়ানমারে নিপীড়িত মুসলিম সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব ও প্রত্যাবাসন প্রতিশ্রুতি দিয়ে জান্তা উৎখাতের সহায়তা করার আহ্বান জানিয়েছে।

মিয়ানমারে জান্তাবিরোধী জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) বা ছায়া সরকার তাদের সম্ভাব্য সংখ্যালঘুনীতি নিয়ে তিন পৃষ্ঠার এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে সামরিক জান্তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে রোহিঙ্গাদের আহ্বান জানিয়েছে এনইউজি।

এর পাশাপাশি দেশটিতে বিদ্যমান ১৯৮২ সালের বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইন সংশোধন করে মিয়ানমারে জন্ম নেয়া সবাইকে বা বিশ্বের যেকোনো স্থানে জন্ম নেয়া বার্মিজ নাগরিকের সন্তানদের পূর্ণ নাগরিকত্ব দানের অঙ্গীকার করেছে এনইউজি।

এনইউজি এক বিবৃতিতে বলেছে, আমরা রোহিঙ্গাদের সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে এই আন্দলনে অংশ নিতে আমাদের ও অন্যদের সাথে হাত মিলিয়ে কাজ করার আমন্ত্রণ জানাই।

গত ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চির এনএলডি (ন্যাশনাল লি ফর ডেমোক্র্যাসি) সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করে দেশটির সামরিক বাহিনী। এর পরপরই জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে মিয়ানমার। বিক্ষোভ দমনে চড়াও হয় সামরিক সরকারও। এতে এ পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন আট শতাধিক মানুষ, বন্দী করা হয়েছে কয়েক হাজার

এ অবস্থায় অবৈধ জান্তাকে উৎখাতের ঘোষণা দিয়ে একটি ছায়া সরকার গড়ে তোলেন মিয়ানমারের রাজনীতিবিদরা, যার বেশিরভাগ সদস্যই সু চির এনএলডির। জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) নাম দিয়ে এটিকেই মিয়ানমারের বৈধ সরকার বলে দাবি করেন তারা। যদিও এনইউজি নামক এই সরকারকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে ঘোষণা দিয়েছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা।

সামরিক বাহিনীর সাথে সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকাকালে সু চির গণতান্ত্রিক সরকার রোহিঙ্গাদের ফেরাতে খুব একটা আন্তরিক ছিল না। কার্যত, তারা ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটিই ব্যবহার করত না, এদের ‘রাখাইনে বসবাসকারী মুসলিম’ বলে উল্লেখ করতেন সু চি সরকারের নেতারা। তবে সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে চোখ খুলেছে ওই নেতাদের একাংশের।

এনইউজির বিবৃতিতে তারা বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ওপর ‘গুণ্ডা’ সামরিক বাহিনীর সহিংসতা ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গত কয়েক দশক ধরে রাখাইনে চলা সহিংসতায় লাখ লাখ মানুষ ঘরছাড়া হওয়ার বিষয়টি খুব ভালোভাবে বোঝে জাতীয় ঐক্য সরকার। আমরা এর জন্য গভীরভাব দুঃখিত। আজ সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার শিকার মিয়ানমারের সকল মানুষ রোহিঙ্গাদের দুর্দশার প্রতি সহানুভিূতিশীল।

২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর ব্যাপক গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। বর্তমানে দেশে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছে।

 

Please follow and like us:

Check Also

এদেশের সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি: কাদের

বিএনপির সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এদেশের সাম্প্রদায়িকতার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।