বাজেটে উপকূল রক্ষায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই

আহসান কামরুল – ৩ জুন, ২০২১
বাজেটে প্রতিবারই কিছু চমক থাকে। তবে গতবারের মতো এবারও সেই চমকে থাবা বসিয়েছে মহামারি করোনাভাইরাস। এরপরও থমকে নেই কোনো কিছুই। এজন্যই এবার আসছে ৬ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার ম্যাজিক ফিগারের বাজেট।

এবার এমন এক সময়ে বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হবে, যখন একদিকে করোনাভাইরাস চোখ রাঙাচ্ছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে; আবার ঠিক এর কিছুদিন আগেই তাণ্ডব চালিয়ে গেছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। কিন্তু করোনার সংবাদ যেভাবে সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে, এর উল্টো চিত্র উপকূলের ক্ষয়ক্ষতির খবরে।

এরমধ্যেও সংবাদমাধ্যমের সীমিত কিছু প্রতিবেদন নজরে আসলো। একটি হলো: ঢালচরসহ উপকূলীয় অঞ্চলের চরগুলোতে এখনও গবাদিপশু মারা যাচ্ছে। এর কারণ হলো সেখানে সুপেয় পানির অভাব। পানির মধ্যে থেকেও সুপেয় পানির অভাবে সর্বশান্ত হচ্ছেন চরাঞ্চলের কৃষক ও মহাজনরা। সেখানে ঝড়ের সময় কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না পেয়ে গাছে উঠে জীবন বাঁচিয়েছেন বাসিন্দারা। ২০২১ সালে এসে নিজেদের জীবন এভাবে বাঁচাতে পারলেও গবাদিপশু বাঁচাতে পারেননি তারা।

উপকূলীয় জেলাগুলোর প্রাণি সম্পদ বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসে লাখ লাখ গবাদিপশু হারিয়ে গেছে। এখনও শত শত পশু মারা যাচ্ছে। চরাঞ্চলের মানুষের কাছে এসব পশুপালন এবং কৃষিই সব। এজন্য সংবাদমাধ্যমের কাছে তারা চরাঞ্চলগুলোতে মুজিব কিল্লা এবং পুকুর বা গভীর নলকুপের মাধ্যমে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন। প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের মানুষদের এসব চাওয়া কি খুব বেশি?

আরও একটি সংবাদ বলতে গেলে ভাইরাল হয়েছে। সেটা হলো খুলনার কয়রায় বাঁধ পরিদর্শনে গিয়ে এমপির গণরোষে পড়ার খবর। এই একটি বিষয় প্রতিবছরই দেখা যায়। দুর্যোগ এলেই সংবাদমাধ্যমে দৃষ্টিগোচর হয় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢোকার সংবাদ। এরপর দুর্যোগ কেটে গেলে আর সেই বেড়িবাঁধের খবর থাকে না। খুলনা-সাতক্ষীরা অঞ্চলে সেসব বাঁধ জীবনের প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে গড়ে তোলে। সরকারও হয়তোবা বাজেট দেয়। কিন্তু সেই বাজেট কাগজে কলমেই থেকে যায়। নাহলে প্রতিবছর উপকূলের মানুষ বেড়িবাঁধ নিয়ে দুর্ভোগ পোহাবে কেন? এবার যেহেতু এখনও উপকূলীয় জনগণ ইয়াস সংকটের মধ্যে রয়েছে, সেজন্য টেকসই বাঁধ নির্মাণের জন্য বাজেট বরাদ্দ এবং সেই বরাদ্দ যেন যথাযথভাবে ব্যয় হয় সেজন্য মনিটরিং সেল করা যেতে পারে।

উপকূলে আরও একটি সংকটের নাম নদী ভাঙন। এসব এলাকায় নদী ভাঙন যদিও নিত্যদিনের ঘটনা, তবুও ঘূর্ণিঝড় জলোচ্ছাসে এর মাত্রা বাড়ে। সরকার এক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা আন্তরিক। প্রায়ই এ বিষয়ে বাজেট হয়। কিন্তু সেখানেও দুর্নীতির কালো হাত থাকে। সেই কালো হাতের থাবার কারণেই বাপ-দাদার ভিটেসহ সর্বস্ব হারায় নদী পাড়ের মানুষ। এরমধ্যেই সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের উপকূলীয় থানা রামগতির কমলনগরেও ভাঙন রোধে প্রকল্প পাস করা হয়েছে। তবে এতে সেখানকার মানুষ কিছুটা খুশি হলেও তাদের শঙ্কা দুর্নীতি নিয়ে। এজন্য তারা ইতোমধ্যেই সেনাবাহিনীর অধীনে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতৃত্বের জন্য বিষয়টি দুঃখজনক হলেও এটাই এখন চরম বাস্তবতা। এ অনাস্থা দূর করতে ভাঙন কবলিত অন্যান্য জেলাগুলোতেও যথাযথ বরাদ্দ এবং তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে উপকূলে হাজার হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। জোয়ারের পানি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বহু ঘরবাড়ি। অথচ অদৃশ্য কোনো কারণে এ নিয়ে কারও তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। ঘরবাড়ি হারানো এ মানুষগুলো কোথায় থাকছে, কী খাচ্ছে, কীভাবে দিন কাটাচ্ছে সেই খবরাখবর রাখা যেন কারও দায়িত্ব নয়! এ দায়িত্বহীনতা এড়াতে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে।

ছবি: আফজাল হোসেন
খুলনা-সাতক্ষীরা-বাগেরহাট সহ এই বেল্টের উপকূলীয় অঞ্চল এখনও সিডর, আইলার ক্ষতি পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এরমধ্যেই কয়েকদফা ঘূর্ণিঝড় এসব জেলাগুলোর জন্য যেন মরার ওপর খাঁড়ার ঘা। করোনার আগে হয়তো প্রতিবছরই কোনো না কোনভাবে দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে পারতেন এ অঞ্চলের মানুষ। তবে এখন করোনার আঘাতে সেটাও আর সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও টেকসই সমাধান না করে দেশ সামগ্রিক বিবেচনায় কোনভাবেই এগিয়ে যেতে পারবে না। এজন্য উপকূলের ক্ষতিগ্রস্ত বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্ষয়ক্ষতি ও জীবনমানকে প্রাধান্য দিয়ে টেকসই সমাধানের জন্য বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতেই হবে।

Check Also

দেবহাটায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সভা

দেবহাটা প্রতিনিধি: দেবহাটার কুলিয়া ইউনিয়নের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।