পি কে হালদারের বেনামি ৯ কোম্পানির পেটে ১১১৮ কোটি টাকা

ফাস ফাইন্যান্সের মোট ঋণ বা লিজের পরিমাণ ১ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়েছে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

যা মোট লিজের ৭৩ শতাংশ। এর মধ্যে পি কে হালদারের বেনামি ৯ কোম্পানির নামে নেওয়া হয়েছে মোট ঋণের ৫৮ শতাংশ, যার পরিমাণ ১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। এসব ঋণ আদায় হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

আদায় অযোগ্য ধরেই প্রতিষ্ঠানটিকে পুনরুদ্ধার করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সহায়তায় ব্যাপক ছাড় দিয়েছে। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির আগের পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। এখন তারা প্রতিষ্ঠানটিকে পুনরুদ্ধারে কাজ করছে। বিশেষ অডিট করে জালিয়াতির টাকা কোথায় কীভাবে গেল তা বের করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফাস ফাইন্যান্সের ওপর সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি একটি বিশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি থেকে ১ হাজার ৩১১ কোটি টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে বের করে নেওয়া হয়েছে। এতে প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত সুদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮৪ কোটি টাকা। এ অর্থ আদায় করা যাচ্ছে না।

উলটো এর বিপরীতে খরচ বাড়ছে। আমানতকারীদের সুদ দিতে হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে প্রশাসনিক খরচ। কিন্তু আয় বাড়েনি। বরং কমেছে। এতে পরিচালন ব্যয়ে বড় ঘাটতি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। ঋণ আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমানতকারীদের টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে। আবার নতুন আমানতও পাওয়া যাচ্ছে। যারা জালিয়াতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকও নীতি সহায়তায় অনেক ছাড় দিচ্ছে। এভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত এর সুফল পাওয়া যাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটির মোট ঋণ বা তরল সম্পদের পরিমাণ ১ হাজার ৯২৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে মোট দেনার পরিমাণ ২ হাজার ২৩৯ কোটি টাকা। সম্পদের চেয়ে দেনার পরিমাণ বেশি ৩১২ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ ৭৫৮ কোটি টাকা। গ্রাহকের আমানত ৮৫৩ কোটি টাকা। আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণখেলাপি হলেও এখন নবায়ন করা হয়েছে।

সীমিত আকারে আমানতকারীদের অর্থও দেওয়া হচ্ছে। বিনিয়োগের সুদ থেকে প্রতিষ্ঠানের সুদ আয়ের পরিমাণ ১৮ কোটি টাকা। আমানত ও ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হচ্ছে ১৩৮ কোটি টাকা। ফলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২০ কোটি টাকা। ব্রোকারেজ হাউজ ও অন্যান্য খাতে আয় ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। ফলে নিট আয়ে ঘাটতি ১১৮ কোটি টাকা। মোট ব্যয়ের পরিমাণ ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রতি শেয়ারে লোকসান ৮ টাকা ৫৪ পয়সা। সার্বিক লোকসান ১৭৫ কোটি টাকা। ২০২০ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক এক চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটিকে ৪০০ কোটি টাকার প্রভিশন ঘাটতির মধ্যে ২০ কোটি টাকা রাখতে বলেছে। বাকি টাকা সমান কিস্তি সমন্বয় করতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, তাদের মূলধন ঘাটতি ১৪৪ কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পর্ষদের সদস্যদের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ শেয়ার থাকতে হয়। প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩০ শতাংশ শেয়ার না থাকায় গত ৩১ মে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) পর্ষদ বাতিল করে নতুন পর্ষদ গঠন করেছে। এনসিসি ও মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ নুরুল আমিনকে চেয়ারম্যান করে ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।