কুরবানির পশু কেনার জন্য খামারে ছুটছেন ক্রেতারা

# করোনার কারণে পশুর হাট নিয়ে সংশয়
# অধিকাংশ ক্রেতাই পছন্দের পশু বুকিং দিয়ে রেখেছে
স্টাফ রিপোর্টার : করেনার কারণে রাজধানীও আশে পাশে এলাকায় এবার কুরবানির হাট বসা নিয়ে সংশয় থাকার বেশির ভাগই কুরবানি দাতা ছুটছে খামারগুলোতে। আগেভাগে কুরবানির পশু ক্রয় করার জন্য যাচ্ছেন বিভিন্ন খামারে। পছন্দের গরু ছাগল ক্রয় করে আপতত খামারগুলোতে রাখছেন পশু। অনেকে কিছু টাকা জামানত দিয়ে পশু বুকিং দিয়ে রাখছেন। ঈদের  ২/৩দিন আগে কুরবানির পশু নিয়ে আসবেন এমনটাই জানিয়েছেন অনেক ক্রেতা।  খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানী পার্শ্ববর্তী কাছাকাছি এলাকাগুলোর খামার এখন ক্রেতার ভিড় বেশি। কেরানীগঞ্জে, নারায়নগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ ও রুপগঞ্জ ও সোনারগায়ের খামার গুলোতে রাজধানীর ক্রেতার বেশি ভিড় করছেন। আবার মুন্সিগঞ্জে মিরকাদিম এলাকায় কুরবানির পশু কেনার জন্য অনেক ক্রেতা আসছেন বিভিন্ন স্থান থেকে।
জানা গেছে, কয়েকদিন পরই মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। প্রতি বছর ঈদের কয়েকদিন আগে রাজধানীর কুরবানির হাটগুলো গরু-ছাগলে ভরে যায়। এবার করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহ আকার ধারণ করায় কুরবানির হাট বসা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সেজন্য অপেক্ষা না করে অনেকে খামার থেকেই কুরবানির পশু কিনে রাখছেন।
সাধারণ সময়ে খামারগুলোতে সরাসরি ক্রেতার আসেন না। আগে ঈদেও খামার থেকে গরু কিনতে খুব একটা দেখা যায়নি ক্রেতাদের। কিন্ত কয়েকবছর ধরে ঈদে খামার থেকে গরু কেনার প্রবণতা শুরু হয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে।  আর ক্রেতাদের অভ্যর্থনা জানাতে খামারগুলোকে সাজানো হয় বর্ণিলভাবে।
এবার মহামারি করোনাভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করায় সংক্রমণ এড়াতে কুরবানির পশু কিনতে উন্মুক্ত হাটের চেয়ে খামারের দিকে বেশি ঝুঁকছেন মানুষ। এক্ষেত্রে উচ্চ মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের আগ্রহই বেশি। ঈদ শুরুর কয়েকদিন আগে থেকেই খামারে গিয়ে গরু বুকিং দিচ্ছেন ক্রেতারা।
খামারজুড়ে নানান আকার ও দামের পশু মিলছে। এসব গরুর মধ্যে যেমন বৈধ গরু আছে, তেমনি আছে আমদানি নিষিদ্ধ গরুও। চাহিদা বেশি থাকায় এবার দামও কিছুটা বেশি বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। রাজধানীর কুরবানির পশু বিক্রির খামারগুলোতে মানুষের ঢল দেখা গেছে। এর মধ্যে কেউ কেউ কুরবানির পশু কিনতে এসেছেন, কেউবা এসেছেন দেখতে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদেক এগ্রো ঘুরে দেখা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ গবাদি পশুর খামারটি এবারের ঈদকে সামনে রেখে শতভাগ প্রস্তুত। এরইমধ্যে কয়েকশো গরু বিক্রি করেছে খামারটি। বিক্রির অপেক্ষায় আছে আরও হাজারের বেশি পশু। খামার ঘুরে হাজারেরও বেশি গরু দেখা গেছে। এরমধ্যে ভুটানি জাত, দেশি, শাহিয়ালসহ বেশ কিছু জাতের গরু রয়েছে। আবার আমদানি নিষিদ্ধ ব্রাহামা জাতের গরুও রয়েছে খামারটিতে।
সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল আর কে এগ্রো ফার্মে কুরবানির পশু কেনার জন্য ঢাকা ও বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতা আসছেন। এ ফার্মের ম্যানেজার আব্দুস সামাদ জানান, আমারদের ফার্মের বেশীর ভাগ পশুই  বিক্রি  হয়ে গেছে। ক্রেতার এখনো আসছে। অনেকে বুকিং দিয়ে দিয়েছে।
মিরকাদিম থেকে গরু কিনে ঢাকায় নেয়া পথে রাজধানীর ডেমরা এলাকার বাসিন্দা তোফায়েল হোসেন জানান, কুরবানির হাট বসা নিয়ে অনিশ্চতার কারণে আগে ভাগেই গরু কিনে নিয়েছি। আপতত চিন্তা মুক্ত হলাম।
সাদেক এগ্রো কর্তৃপক্ষ বলছে, পঞ্চাশ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২৫ লাখ টাকা দামেরও গরু রয়েছে তাদের কাছে। এর মধ্যে বেশি দামি গরুগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। ছোট ও মাঝারি আকারের গরুগুলো সারাবছর এই খামারেই লালন-পালন করে কুরবানি উপযোগী করে তোলা হয়েছে। গরুর পাশাপাশি খামারটিতে রয়েছে ছাগল ও দুম্বা। বিদেশি জাতের বিশালদেহী একেকটি ছাগলের দাম চাওয়া হচ্ছে লাখ টাকার ঘরে। ভারতীয় ব্রিডেল ও তুতা জাতের একেকটি ছাগল বিক্রি হচ্ছে দুই থেকে তিন লাখ টাকার মধ্যে। আবার দুবাইসহ বিভিন্ন জাতের একেকটি দুম্বার দাম চাওয়া হচ্ছে দুই থেকে চার লাখ টাকা। এছাড়া খামারটিতে বাড়তি আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে উট। যদিও খামারে নিয়ে আসা দুইটি উটের একটি এরইমধ্যে বিক্রি হয়ে গেছে। অবিক্রিত আছে একটি। উটটি যতজন না কেনার জন্য আসছেন, তার চাইতে বেশি মানুষ আসছেন দেখার জন্য।
কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারের পরিচালক এস এম আউয়াল জানিয়েছেন, দেশে ব্রাহামা জাতের গরু দেশে আমদানির অনুমতি নেই। অনেক খামার সরকারি আইনের তোয়াক্কা না করে এসব গরু আমদানি করছে।  যা জব্দ করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সম্প্রতি সাদেক এগ্রোর ১৮টি গরু আটকে দিয়েছে বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এদিকে কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে চলমান বিধিনিষেধের মধ্যেও খামারগুলোতে ক্রেতাদের এমন ঢল করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

Please follow and like us:

Check Also

পৃথিবীর যেসব দেশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিরও উপরে

জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ভয়াবহতার সাক্ষী হতে যাচ্ছে সারাবিশ্ব। প্রতিদিনই একটু একটু করে বৈরি হচ্ছে আবহাওয়া, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।