মেসির অমরত্ব নাকি নেইমার যুগের শুরু

২০১৪ সালের এই ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়ামে স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিল লিওনেল মেসির। সেবার জার্মানির ১-০ গোলে হারে বিশ্বকাপের ট্রফি খুইয়েছিল আর্জেন্টিনা। সবশেষ কোপার ফাইনালেও মাঠে দাঁড়িয়ে হার দেখেছেন মেসি। দুই বছর পর আরেকটি ফাইনাল। যে ফাইনালে অমরত্ব পাবেন মেসি নাকি নেইমার যুগের শুরু হবে এখানে? ব্রাজিলের ধারাবাহিকতা নাকি আর্জেন্টিনার শাপ মোচন? কে জিতবে কোপা আমেরিকার ফাইনালে সেটা দেখার অপেক্ষা আর কয়েক ঘণ্টা। ২০০৭ সালের পর প্রথমবার কোনো ফাইনালে মুখোমুখি হচ্ছে ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা। মারাকানায় ম্যাচ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টায়।

দু’বছর আগে কোপার সেমিফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। সেই ম্যাচের বদলা নেয়ার সুযোগ আজকের ফাইনালে।

তবে এমনটা ভাবতে নারাজ আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি। তিনি বদলা নেওয়ায় বিশ্বাসী নন। অন্যদিকে ১৯৯৩ সালে কোপা জয়ের পর থেকে আর কোনো আন্তর্জাতিক ট্রফি ঘরে তুলতে পারেনি আর্জেন্টিনা। সেই ইতিহাস দেখে আত্মবিশ্বাস বাড়াতে রাজি নন ব্রাজিলের কোচ তিতে। অতীতের দিকে তাকিয়ে যে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তা ভালোই জানেন তিনি।

দেশের জার্সিতে কোনো ট্রফি নেই মেসির। এই দুর্নাম ঘুচতে পারে কোপার ফাইনালে। স্কালোনি বলেন, মেসি সর্বকালের সেরা ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম। একটা ম্যাচে জয় বা হার দিয়ে ওর তুলনা করা যাবে না। এই ম্যাচের হার জিতের ওপর মেসির কৃতিত্ব নির্ভর করবে না। ছেলেরা জানে ফাইনালের গুরুত্ব। সেটা বার বার ওদের বলার প্রয়োজন নেই। আমরা জিততে চাই। দেশের মানুষকে আনন্দ দিতে চাই।’

তিতে জানেন ২৮ বছর ধরে ট্রফির খরা চলছে আর্জেন্টিনার। তবে তা মাথায় রাখছেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘ওটা অতীত। সামনে এগিয়ে যেতে হলে পিছনের দিকে তাকাতে নেই। শেষ দুটো কোপায় আমরা অপরাজিত। কিন্তু সেটাও অতীত। এগুলোর কোনো মূল্য নেই।’

ব্রাজিলকে নিয়ে আশায় বুক বাঁধছেন সমর্থকরা। দেশের প্রেসিডেন্ট ৫-০ গোলে জয়ের কথাও বলেছেন। তবে তিতে বলেন, ‘মানসিক চাপ আমাদের ওপরও থাকে। আমাদের কাছে খেলাটা সমর্থক বা সাংবাদিকদের থেকে সবদিক দিয়েই আলাদা। আমরা আমাদের লক্ষ্যে অবিচল থাকার চেষ্টা করছি। কখনও ইতিহাস আসবে, কখনও বিদ্রƒপ আসবে, কখনও প্রলোভন আসবে, কখনও ফুটবলারদের ক্লাবের খেলার কথা আসবে। আমাদের সে সব পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন পরিশ্রম এবং ফাইনালে ভালো খেলা।’

দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই ম্যাচ নিয়ে পুরো বিশ্ব দ্বিধাবিভক্ত। এক ভাগের চোখে নীল-সাদাই সেরা, আরেক দলের কাছে হলুদ-নীলরাই শিরোপার দাবিদার। এমন লড়াইয়ে দুই দলের দুই মধ্যমণি লিওনেল মেসি ও নেইমার জুনিয়র। এফসি বার্সেলোনায় খেলার সুবাদে স্মরণীয় কিছু সময় কাটানোর স্মৃতি রয়েছে তাদের। গভীর বন্ধুত্বও গড়ে উঠেছে দুই দেশের দুই মহাতারকার। ফাইনালের আগে অবশ্য দুইজনই ভুলে যাচ্ছেন সেই ভালোবাসা। বন্ধুত্বের প্রতি সম্মান রেখেই নিজ দলের হয়ে সেরাটা দিতে মুখিয়ে নেইমার ও মেসি।

ফাইনালে বলার অপেক্ষা রাখে না, দুই দলের লড়াইয়ের চেয়ে নজর বেশি থাকবে নেইমার-মেসির দ্বৈরথের দিকে। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে যে তারকা জ্বলে উঠবেন তার দলই জিতবে ট্রফিÑ এমনটা প্রায় নিশ্চিত।

দুই তারকার কোপার পরিসংখ্যানে এগিয়ে মেসি। মেসির চার গোলের বিপরীতে নেইমারের গোল দু’টি। মেসি অ্যাসিস্ট করেছেন ৫টি, নেইমার করেছেন ৩টি।  গোলে শট নেওয়ার দিক থেকেও এগিয়ে মেসি। ৪০টি শট নিয়েছেন তিনি পুরো টুর্নামেন্টে। নেইমার নিয়েছেন ২০টি। ড্রিবলে অবশ্য এগিয়ে নেইমার। ব্রাজিলিয়ানের ৮২ ড্রিবলের বিপরীতে মেসির ড্রিবল ৬৮টি। কোপায় দলীয় হেড টু হেড লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছে ব্রাজিল। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২০০৪ ও ২০০৭ সালে দু’টি বড় জয় রয়েছে তাদের। ব্রাজিলকে কোপার ফাইনালে আর্জেন্টিনা সর্বশেষ হারিয়েছে ১৯৩৭ সালে।

সম্ভাব্য একাদশ

ব্রাজিল: এডারসন, দানিলো, থিয়াগো সিলভা, মার্কিনিয়োস, আলেক্স সান্ড্রো, কাসেমিরো, ফ্রেড, রিচার্লিসন, পাকেতা, এভারটন ও নেইমার।

আর্জেন্টিনা: এমিলিয়ানো মার্র্টিনেস, মোলিনা, পেসেলা, ওতামেন্ডি, তালিয়াফিকো, রদরিগো দি পল, লিয়ান্দ্রো পারেদেস, জোভানি লো সেলসো, লিওনেল মেসি, লাউতারো মার্টিনেস ও পাপু গোমেস।

Please follow and like us:

Check Also

কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানকে অব্যাহতি

সনদ বাণিজ্য চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে স্ত্রী গ্রেফতার হওয়ার পর এবার বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।