সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে

প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী
কয়েকদিন পরেই আমরা সাড়ম্বরে পশু কুরবানি করব, ইনশাআল্লাহ। নিশ্চয়ই এ পশু কুরবানির উৎস আমাদের জানা আছে। সবাই বলবেন, হ্যাঁ অবশ্যই আছে। আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমাদের পিতা ইবরাহীম (আ.)-এর স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কুরবানি করার উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতীকী এ কুরবানি। আল্লাহ পাক তাঁর বান্দার পরম আত্মত্যাগে সন্তুষ্ট হয়ে একটি পশু কুরবানির বিনিময়ে ইসমাইল (আ.)-কে ফিরিয়ে দেন এবং বলেন, পরবর্তীকালের লোকদের জন্য স্মরণ হিসেবে জারি করে দিলাম। না, এ কুরবানি ইবরাহীম (আ.) শুরু করেননি, শুরু আদম (আ.) থেকে। কুরআনে বর্ণিত, আদম (আ.)-এর দুই ছেলের একজনের কুরবানি গৃহীত হয় এবং অপরজনের প্রত্যাখ্যাত হয়। সেখানে বলা হয়েছে, কেবল মুত্তাকিদের কুরবানিই কবুল হয়।
ইবরাহীম (আ.) ছিলেন একনিষ্ঠ মুসলিম এবং তিনি কখনোই মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। মুশরিক সেই, যে আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরিক করে। শিরক সবচেয়ে বড় জুলুম। আল্লাহ শিরকের অপরাধ কখনো ক্ষমা করবেন না। এটা তাঁরই কথা, এর বাইরে যাকে খুশি ক্ষমা করবেন। আল্লাহর বাণী, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরিক করে, সে গোমরাহীর মধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।’ (সূরা নিসা : ১১৬)। ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরিক করেছে, সে তো এক বিরাট মিথ্যা রচনা করেছে এবং কঠিন গুনাহের কাজ করেছে।’ (নিসা : ৪৮)।
আল্লাহর জাতে, গুণে, ক্ষমতায়, অধিকার ও তাঁর বিধান পালনে আল্লাহকে বাদ দিয়ে বা আল্লাহর পাশাপাশি আর কাউকে মেনে চলাকেই বলে শিরক। মানবজাতির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত ‘একমাত্র জীবনব্যবস্থা হলো ইসলাম।’ (আলে ইমরান : ১৯)। যারা ইসলাম মেনে চলে, তাদেরই বলে ‘মুসলিম’ (অনুগত)। কুরআনের ভাষায়, একজন মুসলিমের পরিচয়, ‘শুনলাম ও মেনে নিলাম।’ (সূরা নূর : ৫১)। ইসলামের ব্যাপারে সে অন্ধ, কোনো যুক্তি-বুদ্ধির ধার ধারে না। এটি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) কথাÑ বাস এতটুকুই যথেষ্ট। এরাই নিখাদ মুসলিম। আমাদের পিতা ইবরাহীম ছিলেন এমনি ধরনের মুসলিম। আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ, নবজাত পুত্র ইসমাইল (আ.) ও স্ত্রী হাজেরাকে (আ.) নির্জন মরুভূমিতে রেখে এসো, কোনো প্রশ্ন নেইÑ মেনে নিলেন। আবার সন্তান দৌড়াদৌড়ি করার বয়সে উপনীত হলে স্বপ্নে আদিষ্ট হলেন, প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর উদ্দেশে কুরবানি করো। কোনো আপত্তি নেই, পিতা-পুত্র উভয়ই রাজি হয়ে গেলেন। এই রাজি হওয়া বা হুকুম পালনের নামই ইসলাম এবং যে পালন করে সেই মুসলিম।
আমাদের সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ রয়েছে। যারা ইসলামকে অস্বীকার করে, তাদের বিষয়টি আমাদের বিবেচনার দরকার নেই। তারা কাট্টা কাফের। কিন্তু মুসলিম ঘরে জন্ম এবং নিজেকে মুসলিম পরিচয় দেয়, তাদের বিষয়টিই আমরা একটু পর্যালোচনা করব। আমাদের মাঝে একটি শ্রেণি আছে, যারা প্রকাশ্যে ইসলামকে অস্বীকার না করলেও কাজে-কর্মে ইসলামের অনুসরণ করে না এবং সুযোগ পেলেই ইসলামের কোনো বিধিবিধান পালনের ক্ষেত্রে আপত্তি করে। বাস্তবজীবনে নামাজ-রোজারও তেমন ধার ধারে না। এদের এবং কাফেরের মাঝে কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। কাফের নিজে একটি আলাদা পরিচয় বহন করে, কিন্তু এমন ব্যক্তি মুসলিম সমাজে থেকে ইসলামের বিরোধিতা করে। সুযোগ পেলেই এরা পর্দা, নারীর উত্তরাধিকার বা একাধিক বিবাহসহ নানা বিষয়ে মানুষের মাঝে সন্দেহ-সংশয় সৃষ্টি করে। একজন মুসলিমের এ বিশ^াস থাকতেই হবে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর বিধান সব ধরনের ভুল-ভ্রান্তি ও ত্রুটি-বিচ্যুতির ঊর্ধ্বে। এই শ্রেণির মানুষ নিজেদের বুদ্ধিজীবী মনে করে। এদের সম্পর্কেই আল্লাহর বাণী, ‘আর যারা আমার আয়াতকে খাটো করার চেষ্টা করবে, তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী।’ (সূরা হজ : ৫১)।
‘আর যারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে, তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।’ (সূরা সাবা : ৫)। ‘যারা আমার আয়াতকে ব্যর্থ করার জন্য প্রচেষ্টা চালায়, তারা শাস্তি ভোগ করবে।’ (সূরা সাবা : ৩৮)। ‘তারা কি জানে না, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মোকাবিলা করে তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, তার মধ্যে তারা চিরকাল থাকবে। এটি একটি বিরাট লাঞ্ছনার ব্যাপার।’ (সূরা তাওবা : ৬৩)। ‘না, হে মুহাম্মদ! তোমার রবের কসম, এরা কখনো মুমিন হতে পারে না, যতক্ষণ এদের পারস্পরিক মতবিরোধের ক্ষেত্রে এরা তোমাকে ফয়সালাকারী হিসেবে মেনে না নেবে। তারপর তুমি যা ফয়সালা করবে, তার ব্যাপারে নিজেদের মনের মধ্যে যেকোনো প্রকার কুণ্ঠা ও দ্বিধার স্থান দেবে না, বরং সর্বান্তকরণে মেনে নেবে।’ (নিসা : ৬৫)।
‘এ হওয়ার কারণ হলো, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের চরম বিরোধিতা করেছে। যে ব্যক্তিই আল্লাহর বিরোধিতা করে, তাকে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ অত্যন্ত কঠোর।’ (সূরা হাশর : ৪)। ‘তোমরা তোমাদের আল্লাহকে পৃথিবীতে অচল ও অক্ষম করে দিতে সক্ষম নও এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর কোনো সহযোগী ও সাহায্যকারী নেই।’ (আশ শুরা : ৩১)। ‘এদের বলে দাও, যারা কুফুরি করেছে, ফয়সালার দিন ঈমান আনা তাদের জন্য মোটেই লাভজনক হবে না এবং এরপর এদের কোনো অবকাশ দেয়া হবে না।’ (আস সাজদাহ : ২৯)।
আরেকটি শ্রেণি সম্পর্কে ভাবতে পারেন, যারা নামাজ-রোজা-হজ-জাকাতের মতো মৌলিক ইবাদতসমূহ পালনে নিষ্ঠাবান নন, কিন্তু ইসলামের প্রতি দুর্বলতা আছে, মাঝেমধ্যে মানে। কিন্তু ইসলামের কোনো বিধানের ব্যাপারে অবজ্ঞা প্রদর্শন করে না। পালন না করা প্রসঙ্গে লজ্জা অনুভব করে এবং পালনের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে। এদের ব্যাপারে ফকিহদের মাঝে ভিন্নতা রয়েছে। যেমন কুরআন-হাদিসের বর্ণনা অনুসারে কেউ কেউ বলেন, এরাও কাফের; আবার কারো কারো মতে কাফের না বলে বলা যায় গুনাহগার (কবিরা গুনাহে লিপ্ত)। এদের পেছনে দাওয়াতের কাজ করলে আশা করা যায় দীন পালনের ব্যাপারে তারা আন্তরিক হবে। যারা দা’য়ী ইলাল্লাহ, তাদের উচিত এদের পেছনে বেশি সময় ব্যয় করা। গাফিলতি দূর করতে পারলে তারা নিষ্ঠাবান মুসলিম হতে পারবে, ইনশাআল্লাহ।
আরেকটি শ্রেণি সম্পর্কে বলি, যারা মৌলিক ইবাদতে নিষ্ঠাবান, কিন্তু দীনকে ভাগ করে নিয়েছে। কিছু আল্লাহর জন্য রেখেছে আর কিছু রেখেছে তাগুতের জন্য। এদের সম্পর্কেই বলা হয়েছে, তোমরা কি দীনের কিছু অংশ মানবে ও কিছু অংশ অমান্য করবে? পরিণতি বলা হয়েছে, দুনিয়ার জীবনে রয়েছে জিল্লতি ও আখিরাতে রয়েছে ভয়াবহ আজাব। (সূরা বাকারা : ৮৫)। তাগুতের সাথে এই শ্রেণির মুসল্লিদের বেশ মিতালী। তাগুত বলতে আমি তাদেরই বোঝাচ্ছি, যারা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছু চায় এবং সমাজে তা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচেষ্টা চালায়। কালিমা তাইয়্যেবার মর্মার্থ, আল্লাহকে ইলাহ মানা নয়, বরং সকল ইলাহকে অস্বীকার করে শুধু আল্লাহকে মানা। অন্যভাবে বলা যায়, ‘আল্লাহর আনুগত্য করো এবং তাগুতকে অস্বীকার করো।’ (সূরা নাহল : ৩৬)। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকামী মুসলিমদের সাথে এই শ্রেণির (তাগুত) লোকদের প্রচণ্ড বিরোধ এবং এ বিরোধিতায় মুসল্লিবেশের লোকগুলো তাগুতেরই পক্ষাবলম্বন করে। এদের মুনাফিক বলা যায়। মুনাফিকরাও মূলত কাফের ও মুশরিক। এদের কোনো আমল গৃহীত হবে না। শিরক সম্পর্কে আল্লাহর বাণী, ‘তাদের বেশিরভাগ আল্লাহকে মানে, কিন্তু তাঁর সাথে অন্যকেও শরিক করে।’ (সূরা ইউসুফ : ১০৬)।
উপরোক্ত মুনাফিকদের সম্পর্কে আমার বিশ্লেষণ হলো, এদের মধ্যে সবাই বিশ^াসগত মুনাফিক নয়; অনেকেই রয়েছে অজ্ঞতার কারণে এমন আচরণ করে। সমাজ থেকে ইসলাম নির্মূল করার লক্ষ্যে ছদ্মবেশ ধারণ করে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে অনৈক্য, বিভেদ সৃষ্টি করে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতিসাধন করার মতো লোক হয়তো খুব বেশি নয়। ইসলামে ভালোমন্দ সবকিছু নিয়তের ওপর নির্ভর করে। ইসলাম প্রতিষ্ঠাকামী লোকজন তাদের পেছনে সময় দিয়ে বিষয়টি ধরিয়ে দিলে হয়তো তারা তাদের ভুল বুঝতে পারবে।
আল্লাহ পাক সকল নবী-রাসূলকে সমসাময়িক তাগুত বা স্বৈরশাসকদের মোকাবিলায় দাঁড় করিয়েছেন এবং কুরআন মজিদে সেভাবেই তাঁদের উপস্থাপন করা হয়েছে। তাওহিদবাদী নবী-রাসূলকে কোনো শিরকবাদী জনগোষ্ঠী বা তাগুত ও তার অনুসারীরা বরদাশত করতে পারেনি। আল্লাহ পাক এভাবে পার্থক্য করেছেন, ‘যারা ঈমানদার তারা আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করে এবং যারা কাফের তারা তাগুতের পথে লড়াই করে, তোমরা শয়তানের সঙ্গী-সাথীদের বিরুদ্ধে লড়াই করো। বিশ^াস করো, শয়তানের ষড়যন্ত্র আসলেই দুর্বল।’ (সূরা নিসা : ৭৬)।
এখানে আল্লাহ পাক মুসলিম ও কাফেরকে স্পষ্ট করেছেন। একজন ব্যক্তি তখনই মুসলিম, যখন সে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে বিশ^াস করে, মেনে চলে এবং সমাজে প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালায়। সকল ব্যবস্থাপনার ওপর আল্লাহর দীনকে বিজয়ী করার নির্দেশনা দিয়ে আল্লাহ নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন। (সূরা তওবা, ফাতহা ও সফ)। এবং দীন বিজয়ী করার প্রশ্নেই মুশরিকদের সাথে যত বিরোধ। (সূরা সফ : ৯)। নবী-রাসূলদের যে দায়িত্ব সকল ঈমানদার জনগোষ্ঠীর দায়িত্বও মূলত তাই এবং যারাই এ দায়িত্ব পালন করবে, তাদের সাথে সকল কাফের, মুশিরক ও মুনাফিক একাট্টা হয়ে বিরোধিতা করবে। বিরোধিতা উপেক্ষা করে যারা মজবুতভাবে দীনকে আঁকড়ে ধরে থাকবে, তাদের জন্য জান্নাতদানের ওয়াদা আল্লাহর পক্ষ থেকে পাকাপোক্ত ওয়াদা।
কুরআন-হাদিস পাঠে আমার উপলব্ধি, আল্লাহর দীনকে আন্তরিকভাবে মেনে নিয়ে যারা মৌলিক ইবাদতসমূহ (নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত) পালন করবে তারা ইসলামের সমর্থক হয়ে জান্নাতে যাবে। এর ভিত্তি হলো, যারা ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে, পবিত্র কুরআনে অসংখ্য জায়গায় তাদের জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করা হয়েছে। এরা সবাই নির্ভেজাল মুমিন, বাতিলের কেহ সহযোগী নয়। দি¦তীয়, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিস, এক বেদুইন এসে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে দীন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি সেই বেদুইনকে ঈমানের সাথে নামাজ, রোজা এবং সামর্থ্য থাকলে জাকাত ও হজের কথা বলেন। জবাব শুনে বেদুইন বলে, আল্লাহর কসম! আমি এর বেশিও করব না, আবার কমও করব না। তার চলে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা যদি জান্নাতি লোক দেখতে চাও তাহলে ঐ লোকটিকে দেখতে পারো। বেদুইনের জান্নাতে যাওয়ার মূলে রয়েছে ইসলামের প্রতি তার বিশ^াস ও একনিষ্ঠ সমর্থন। দীন প্রতিষ্ঠায় যারা চেষ্টা-প্রচেষ্টায় চালাবে, তাদের খুলুসিয়াত (নিষ্ঠা) এবং কর্মপ্রচেষ্টা ও ত্যাগের ওপর আখিরাতে মর্যাদা নির্ধারিত হবে।
দীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যারা বাধা হবে, তারাই জালেম এবং আল্লাহ পাক তাদের দিয়ে জাহান্নাম পূর্ণ করবেন। আল্লাহর বাণী, ‘যারা ঈমানদার নর ও নারীকে কষ্ট দেয়, অতঃপর তওবা করে না, তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আজাব, আছে ভস্ম হওয়ার শাস্তি।’ (সূরা বুরূজ : ১০)। ঈমানদারদের প্রতি জুলুম-নির্যাতনে কারো অন্তরে যদি ব্যথা অনুভূত না হয়, তাহলে বুঝতে হবে তারা জালিমেরই সহযোগী এবং আখিরাতে তাদের অবস্থান হবে জালিমদের ধারে কাছেই। কারণ সকল বিশ^াসী পরস্পরের ভাই। শুধু দেশে কেন, বিশে^র কোথাও মুসলমানদের দুঃখ-কষ্ট কারো অনুভূতিতে না লাগলে তার ঈমান প্রশ্নবিদ্ধ, সংশয়পূর্ণ।
সারা বিশে^ চলছে করোনার তাণ্ডব। মানুষের সকল জ্ঞান-বুদ্ধি, যোগ্যতা, শক্তিমত্তা, আবিষ্কার আল্লাহর এক অতি ক্ষুদ্র জীবাণুর কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। এটি মানুষের জন্য আল্লাহর এক সতর্কবার্তা। এতে যদি কেউ সতর্ক হয়ে আল্লাহর নাফরমানি ত্যাগ করে তাঁর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসে, তবে এ করোনা তার জন্য আশীর্বাদ। সে যদি মারাও যায়, তবে তার মৃত্যু শাহাদাতের। বলা যায়, সে জান্নাতের সুসংবাদ নিয়ে তার রবের কাছে হাজির হবে। পক্ষান্তরে করোনা কাফের-মুশরিক ও মুনাফিকের জন্য গজব।
সব মানুষকে জাহান্নামে প্রেরণের জন্য আমার এই লেখা নয়। আমিসহ আমার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব অগণিত আল্লাহর বান্দা যাতে জান্নাতে যাওয়ার উপযুক্ত হয়, তারই লক্ষ্যে আমার এ চেষ্টা। জান্নাতে যাওয়ার জন্য বড় বা কষ্টকর কোনো আমল প্রয়োজন নেই। হয়তো ভাববেন, জীবনে দীর্ঘসময় নামাজ পড়েননি, রোজা রাখেননি, ইসলামের দুশমনদের পেছনে ঘুরেছেন; এখন কি আর সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। তাহলে করণীয় কী? করণীয় হলো, তাওবা করা ও তাগুতের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্য মেনে চলা। এমনটি করলে আল্লাহ বান্দার পেছনের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তাই অপেক্ষা না করে এখনই বলুন, পরওয়ারদিগার ভুল করেছি ও নিজের প্রতি জুলুম করেছি, তুমি আমাকে ক্ষমা করো। বিশ^াস করুন, অন্তরে তাওবা করার ইচ্ছা পোষণের সাথে সাথে আল্লাহ পাক তাঁর বান্দার দিকে এগিয়ে আসবেন। বান্দাকে ক্ষমা করার মধ্যেই আল্লাহর যত আনন্দ।
মনে রাখতে হবেÑ পিতা ইবরাহীম (আ.) মুশরিক ছিলেন না এবং তিনি ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘আমি তো একনিষ্ঠভাবে নিজের মুখ সেই সত্তার দিকে ফিরিয়ে নিয়েছি, যিনি জমিন ও আসমান সৃষ্টি করেছেন এবং আমি কখনো মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।’ (সূরা আনয়াম : ৭৯)। ‘বল, আমার নামাজ, আমার যাবতীয় ইবাদত অনুষ্ঠান (আমার কুরবানি), আমার জীবন ও মৃত্যু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য, যার কোনো শরিক নেই। এরই নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং সবার আগে আমিই আনুগত্যের শির নতকারী (মুসলিম)।’ (সূরা আন’আম : ১৬২-১৬৩)।
কুরবানি সম্পর্কে প্রিয়তম নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ.)-এর সুন্নাত’। পিতা আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নমরূদের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন, মাতৃভূমি ত্যাগ করে অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন, বৃদ্ধ বয়সে পাওয়া সন্তান ও স্ত্রীকে নির্জন মরুভূমিতে রেখে গিয়েছিলেন ও কলিজার টুকরো সন্তানকে জবেহ করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। আল্লাহর সকল নির্দেশ কোনো প্রশ্ন ছাড়াই পালন করেছেন। আমরা তো তাঁরই সন্তান। পিতাকে অনুসরণ করে আমরাও বলি, ‘আমার নামাজ, আমার যাবতীয় ইবাদত অনুষ্ঠান (আমার কুরবানি), আমার জীবন ও মরণ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য’। আমাদের নামাজ, রোজা, কুরবানি যেমন আল্লাহর জন্য, তেমনি আমাদের বেঁচে থাকা হবে আল্লাহর জন্য এবং মরণও হবে আল্লাহর জন্য। হে আল্লাহ! তুমি আমাদের তোমার পথে কবুল করো। আমিন।

Check Also

মালয়েশিয়ার পাম তেলে ইইউ’র নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের শ্রমবাজারে অশনি সংকেত

বন উজাড়, কার্বন নির্গমনের ঝুঁকি এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টগত কারণ দেখিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।