করোনা অতিমারিতে করণীয় : ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি -বিলাল মাহিনী

আলহামদুলিল্লাহ! বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতি ভাইরাস কোভিড-১৯ থেকে এখনো আমরা (পাঠকগণ) মুক্ত। বেঁচে আছি। সুস্থ আছি। তবে বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে প্রতিদিন হাজারো প্রাণ ঝরছে। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে এখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বিরাজমান। ঈদ পূর্ববর্তী পক্ষকাল ব্যাপি সরকার ঘোষিত কঠোর বিধিনিষেধের ফলে বিগত কয়েকদিন করোনায় মৃত্যুহার তুলনামূলক কমলেও সংক্রমনের ঊর্ধ্বগতি ঠেকানো যাচ্ছে না। তাই খেটে খাওয়া মানুষের কাজের সুযোগ দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা দরকার। আইন অমান্যে জরিমানা ও শাস্তি নিশ্চিত করতে পারলে সংক্রমন কমবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞবৃন্দ। করোনা একটি সংক্রমণ ব্যাধি। যেটাকে মহামারি বা অতিমারি হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ইসলাম ধর্মে এসব মহামারিকে মানুষের কর্মফল হিসেবে গণ্য করা হয়। পবিত্র কুরআন ও বিশ্বনবীর সা. বানীতে যে কোনো মহামারিতে করণীয় বর্ণনা করা হয়েছে। আসুন আমরা জেনে নিই মহামারি আক্রান্ত জনপদের মানুষের কী কী করণীর বর্ণিত হয়েছে ইসলামে।

  বেশিরভাগ মহামারিই সংক্রামক। তাই রাসুলুল্লাহ সা. মহামারির সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন। মুমিন ঈমান ও ইখলাসের সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করবে। মহানবী সা. বলেন, ‘কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১০৬৫)
রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক এবং ঞযব ঐঁসধহর.ু ড়ভ গঁযধসসধফ: অ ঈযৎরংঃরধহ ঠরবি (ইষঁব উড়সব চৎবংং, ২০২০), ও ওংষধস রহ অসবৎরপধ: ঊীঢ়ষড়ৎরহম ঃযব ওংংঁবং (অইঈ-ঈখওঙ ২০১৯) গ্রন্থের লেখক ড. ক্রেইগ কনসিডাইন গত ১৭ মার্চ নিউজউইকে প্রকাশিত তার এক কলামে তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘আপনারা কি জানেন যে, …..আর কে মহামারীর সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও কোয়ারেন্টাইনের কথা বলেছিলেন?’ পরের বাক্যে ড. ক্রেইগ কনসিডাইন এ প্রশ্নের উত্তরে বলছেন, তিনি হচ্ছেন ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.), যিনি ১৪০০ বছর আগে এ কথা বলেছিলেন।

ড. ক্রেইগ কনসিডাইনের মতে, তিনি কোনোভাবেই প্রাণঘাতী রোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। তথাপি মুহাম্মদ (সা.) পাণঘাতী রোগ ও মহামারী মোকাবিলায় যেসব উপদেশ দিয়েছেন সেগুলো কভিড-১৯ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যথেষ্ট প্রজ্ঞাপূর্ণ ও সুবিবেচনাপ্রসূত বলে বিবেচিত হতে পারে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যদি শুনতে পাও, কোনো ভূখন্ডে প্লেগ দেখা দিয়েছে, তাহলে সেই ভূখন্ডে প্রবেশ কোর না; কিন্তু তুমি যদি দেখতে পাও, তুমি যেখানে বাস কর সেখানে প্লেগ দেখা দিয়েছে, তাহলে সেই স্থান ত্যাগ কোর না।’ কভিড-১৯ করোনাভাইরাস মোকাবিলায় আজ বিশ্বব্যাপী যে ‘কোয়ারেন্টাইন’ বা করোনা রোগী ও ভাইরাস বহনকারীদের আলাদা করা ও থাকার কথা বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে কি মুহাম্মদ (সা.)-এর এই প্রাজ্ঞ নির্দেশনার মিল পাওয়া যাচ্ছে না?

দুনিয়াবি এসব মহামারি বা বিপর্যয় ও বিভিন্ন বিপদ-আপদ সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন-‘স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুণ বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। ’ (সূরা: রূম,আয়াত: ৪১)। পবিত্র কুরআনে আরও বলা হয়েছে- ‘বলুন, তোমরা পৃথিবীতে পরিভ্রমণ কর এবং দেখ তোমাদের পুর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছে। তাদের অধিকাংশই ছিল মুশরিক। ’ (সূরা: রূম,আয়াত: ৪২)।

মানুষ পাপ করতে করতে যখন পাপের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তখনই আল্লাহর শাস্তি নাজিল হয়। পাপিষ্ঠ ফেরাউনকে আল্লাহ তায়ালা তখনই ধরেছেন, যখন সে নিজেকে সৃষ্টিকর্তা বলে দাবি করেছে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন: ‘হে মুসা! তুমি ফেরাউনের কাছে যাও, সে অত্যন্ত উদ্ধত হয়ে গেছে। ’ (সূরা: ত্বাহা, আয়াত ২৪)। নমরুদকে আল্লাহ তায়ালা তখনই শাস্তি দিয়েছেন, যখন সে নিজেকে প্রভু বলে দাবি করেছে। অনুরূপভাবে আদ, সামুদ প্রভৃতি জাতিকে তাদের সীমাহীন পাপাচারের কারণে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।
এভাবে পবিত্র কোরআনে যে ৬টি জাতির ধ্বংসের কথা উল্লেখ আছে তা হলো- মাদইয়ান সম্প্রদায়, হুদ (আ.)-এর আদ জাতি, লুত (আ.)-এর জাতি, সালেহ (আ.)-এর সামুদ সম্প্রদায়, নুহ (আ.)-এর জাতি ও মুসা (আ.)-এর জাতি। আগের নবীদের এসব কাহিনী পবিত্র কোরআনে আলোচনা করে আল্লাহ তায়ালা এটিই বোঝাতে চেয়েছেন যে, যদি উম্মতে মুহাম্মদী (সা.)ও তাদের মতো পাপাচারে লিপ্ত হয়, তবে তাদের পরিণতিও অনুরূপ হবে এবং একই ভাগ্য বরণ করতে হবে।

# দুনিয়া কাঁপানো যত মহামারি :
মহামারির ইতিহাস মানব সভ্যতার মতোই প্রাচীন। বিভিন্ন সময় সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়েছে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায়, কখনও আবার বিশ্বব্যাপী। প্লেগ, কলেরা, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, ইনফ্লুয়েঞ্জা, গুটিবসন্ত বিভিন্ন রোগ নানা সময়ে মহামারির আকার নিয়েছে। সে রকম কিছু মহামারির তথ্য তুলে ধরা হলো-
প্লেগ অব এথেন্স (খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০ অব্দ): গ্রিক ইতিহাসবিদ থুসিডিডিস (৪৬০-৪০০ খ্রিষ্টপূর্ব) লিখেছেন, “সুস্থ-সবল মানুষের হঠাৎ করে শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছিল। চোখ লাল হয়ে জ্বালাপোড়া শুরু হয়েছিল। জিভ ও গলা লালচে হয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। ” জাস্টিনিয়ান প্লেগ (৫৪১ খ্রিস্টাব্দ): সিএনএনের তথ্য অনুযায়ী, ৫৪১ খ্রিস্টাব্দে শুরু হলেও এই মহামারি চলে প্রায় দুই শতাব্দী ধরে। মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোতে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের প্রাণ নেয় এই মহামারি। ব্যাকটেরিয়াজনিত এই রোগ ইঁদুরের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দ্য ব্ল্যাক ডেথ (১৩৪৬ খ্রিস্টাব্দ): ইউরোপের অন্যতম প্রাণসংহারী মহামারি ‘ব্ল্যাক ডেথ’। এই মহামারিতে ইউরোপের অর্ধেকের মতো মানুষ প্রাণ হারায়। কলেরা মহামারি : এই রোগটি প্রথম বৈশ্বিকভাবে মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে ১৮১৭ সালে। ওই বছর বাংলাদেশের যশোরে এই রোগের প্রাদুর্ভাবে মানুষের প্রাণহানি ঘটতে থাকে। কিছু দিনের মধ্যে তা বর্তমান ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের অধিকাংশ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। স্প্যানিশ ফ্লু (১৯১৮-১৯২০): মৃতের সংখ্যার হিসাবে আধুনিক যুগের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারির একটি হচ্ছে ১৯১৮ সালে ধরা পড়া স্প্যানিশ ফ্লু। ১৯১৮ ও ১৯১৯ সালের মধ্যে স্প্যানিশ ফ্লুতে আনুমানিক ৫ কোটি মানুষের মৃত্যু হয়। এশিয়ান ফ্লু (১৯৫৭-১৯৫৮): এশিয়ান ফ্লুতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১১ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। গুটি বসন্ত : বেশ পুরনো ইতিহাস এই রোগের। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে গুটি বসন্ত ছিল এই পৃথিবীতে। ষষ্ঠ শতক থেকে অষ্টাদশ শতক নাগাদ বিশ্বজুড়ে এই রোগের দাপট ছিল। গড়ে আক্রান্তদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু ঘটে। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে চলে আসা প্রাণঘাতী গুটি বসন্ত টিকার মাধ্যমে নির্মূল হয়েছে ১৯৭৯ সালে। এইচআইভি এইডস্ : (১৯৮১ থেকে চলমান) বিশ্বজুড়ে এইডসে প্রাণ হারিয়েছেন তিন কোটি ৪০ লাখের বেশি মানুষ, যাতে এখনও চিকিৎসা আবিষ্কার না হওয়া এই রোগ ইতিহাসের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক মহামারির একটিতে পরিণত হয়েছে। ইবোলা: প্রাণঘাতী ইবোলা ভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ দেখা দেয় ১৯৭৬ সালে, একইসঙ্গে কঙ্গো ও দক্ষিণ সুদানের দুটি অঞ্চলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ভয়াবহ এই রোগে মৃত্যুহার ৫০ শতাংশের মতো। ইবোলার টিকা দেওয়া হলেও এখনো এই রোগ নির্মূল করা যায়নি।
কোভিড-১৯: ২০২০ সাল শুরুর আগ মুহূর্তে চীনের উহানে যে নতুন ভাইরাস বাসা বেঁধেছিল মানুষের শরীরে, সেই ভাইরাস লাখ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিলো বছরজুড়ে। বছরব্যাপী দুনিয়াজুড়ে আতঙ্ক হয়ে থাকা এই ভাইরাস নাম পেয়েছে নভেল করোনা ভাইরাস (সার্স সিওভি-২), আর রোগের নাম হয়েছে কোভিড-১৯।

করোনার প্রতিকার ও প্রতিরোধ : ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি

মানুষ কীভাবে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা পাবে? হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেছেন, রাসুল সা. বলেছেন, ‘এমন কোনো রোগ নেই যা আল্লাহ তাআলা সৃষ্টি করেননি। আর তিনি এর প্রতিষেধকও সৃষ্টি করেছেন।’ তাছাড়া আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে যে কোনো বিষয়ে ‘তাক্বওয়া’ বা তাকে ভয় করা এবং ‘তাওয়াক্কুল’ তথা তার ওপর ভরসা করার কথা বলেছেন। কেননা এমন কিছু জিনিস আছে যা আল্লাহর অনুগ্র ছাড়া কোনো মানুষই তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন রাসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক মাসে তিন দিন সকালবেলা মধু পান করবে, সে কোনো মারাত্মক মৌসুমি রোগে আক্রান্ত হবে না।’ (ইবনে মাজাহ) হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, ‘রাসুল সা. বলেছেন, ‘কালোজিরা ব্যবহার কর। কালো জিরায় রয়েছে ‘শাম’ (মৃত্যু) ছাড়া প্রত্যেক রোগের প্রতিষেধক।’ (সহিহ বুখারি) হাদিসে কালোজিরাকে শুধু মৃত্যু ছাড়া সব রোগের প্রতিষেধক বলা হয়েছে। সুতরাং করোনাসহ সব মহামারিতেও কালো জিরা হতে পারে রোগ ও ভাইরাসের প্রতিষেধক।
করোনা ভাইরাস থেকে বেঁচে থাকতে হাদিসে ঘোষিত নিম্নরিখিত এ দোয়াগুলোর আমলও করা যেতে পারে। রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে-‘বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মা’আসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিসসামায়ি, ওয়া হুয়াসসাম উল আলিম। ’ সকাল হওয়া পর্যন্ত ওই ব্যক্তির ওপর আকষ্মিক কোনো বিপদ আসবে না। আর যে ব্যক্তি সকালে তিনবার এ দোয়া পড়বে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো বিপদ আসবে না। (তিরমিজি, আবু দাউদ)
মহানবী সা. মহামারি থেকে পরিত্রাণ পেতে নি¤েœাক্ত দোয়া শিখিয়েছেন- ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম। ’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)
এছাড়া কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা পেতে ইসলামের দৃষ্টিতে তাহারাত (পবিত্রতা) অর্জনের পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নির্দেশিত কিছু নিয়মও আমরা মানতে পারি, যেমন- সাবান দিয়ে বারবার হাত ধুতে হবে, হাঁচি-কাশি দেওয়ার সময় টিস্যু বা রুমাল দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে ফেলতে হবে, হাঁচি-কাশি দেওয়ার পরপরই হাত ধুয়ে ফেলতে হবে, পারতপক্ষে নাক, মুখ ও চোখে হাতের স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বাইরে গেলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে এবং শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।

মহামারি কেনো আসে :
কোরআন ও হাদিসের ভাষ্য মতে মহামারি পৃথিবীতে আল্লাহর একটি শাস্তি। যখন কোনো জাতির মধ্যে অশ্লীলতার মতো জঘন্য পাপ বেড়ে যায়, তখন আল্লাহ তাদের মহামারির মাধ্যমে শাস্তি দেন। মহানবী সা. ইরশাদ করেন, ‘যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারির প্রাদুর্ভাব হয়। তাছাড়া এমন সব ব্যাধির উদ্ভব হয়, যা আগের লোকদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৪০১৯)

আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি রাসুল সা.-কে প্লেগ রোগ (মহামারি) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। আল্লাহর নবী সা. তাকে জানান, এটি হচ্ছে এক ধরনের শাস্তি। আল্লাহ যার ওপর তা পাঠাতে ইচ্ছে করেন, পাঠান। কিন্তু আল্লাহ এটিকে মুমিনের জন্য রহমত বানিয়েছেন। অতএব প্লেগ (মহামাারি) রোগে কোনো বান্দা যদি ধৈর্য ধরে এবং এ বিশ্বাস নিয়ে আপন শহরে অবস্থান করতে থাকে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্দিষ্ট করে রেখেছেন তাছাড়া আর কোনো বিপদ তার ওপর আসবে না; তাহলে সেই বান্দার জন্য থাকবে শহীদের সাওয়াবের সমান সাওয়াব।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৪)

মহামারি নিয়ে মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী : মহামারি ও রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়াকে রাসুলুল্লাহ সা. কিয়ামতের অন্যতম আলামত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ‘কিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, এরপর তোমাদের মধ্যে ঘটবে মহামারি, বকরির পালের মহামারির মতো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৩১৭৬)

প্রিয় পাঠকগণ! করোনার এই অতিমারিতে তাই আমাদের সর্বদা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা দরকার। লকডাউনের পাশাপাশি নিজ নিজ স্রষ্টার নিকট হেডডাউন দেয়া জরুরি। কেননা, আজকের এই মহামারি আমাদের অতি-আধুনিক প্রজন্মের পাপের ফল বৈকি! মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে প্রাণঘাতি করোনা অতিমারির সংক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে বাসযোগ্য একটি সুন্দর সবুজ পৃথিবী দান করুন। আমিন।

লেখক : বিলাল মাহিনী / পরীক্ষক : ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা। প্রভাষক : গাজীপুর রউফিয়া কামিল মাদরাসা, প্রতিষ্ঠাতা ও  নির্বাহী সম্পাদক : সিংগাড়ী আঞ্চলিক গণগ্রন্থাগার ও ভৈরব সংস্কৃতি কেন্দ্র, জীবন সদস্য : নওয়াপাড়া ইনস্টিটিউট, অভয়নগর, যশোর।

Please follow and like us:

Check Also

বেড়িবাঁধ কেটে নোনাপানি ঢুকিয়ে ঘের ব্যবসা

সুন্দরবন–সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলায় যত্রতত্র বেড়িবাঁধ কেটে ও ছিদ্র করে পাইপ দিয়ে নোনাপানি উঠিয়ে চলছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।