এখন থেকে সেনা-পুলিশে নিয়োগে ‌‌সতীত্ব পরীক্ষা দিতে হবে

ইন্দোনেশিয়ার নারীরা যদি পুলিশ বা সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চান, তা হলে যোগ্যতা পরীক্ষায় তাদের প্রথমে ‘সতীত্বের প্রমাণ’ দিতে হয়।

আর সেই পরীক্ষা ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নামে পরিচিত। সোমবার এ নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।

যেভাবে হয় সতীত্ব পরীক্ষা

চিকিৎসক (পুরুষ কিংবা নারী) নারীদের যোনিতে দু’টি আঙুল ঢুকিয়ে দেখে নেন হাইমেন পর্দা সুরক্ষিত রয়েছে কি না। পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কের ফলে এই পর্দাটি ছিঁড়ে যায়। পর্দা ঠিকঠাক না থাকা মানেই ধরে নেওয়া হয় ওই নারী যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন। যদিও চিকিৎসকদের মতে, এই পর্দা আরও অনেক কারণেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

নারীদের ওপর এই পরীক্ষা ১৯৬৫ সাল থেকে চলে আসছে।

যে কারণে সতীত্ব পরীক্ষা

উচ্চপদস্থ অফিসারদের যুক্তি ছিল, এক জন নারী যিনি সেনা হিসাবে দেশের সেবা করতে চান তাকে মানসিক এবং শারীরিক দিক থেকে অত্যন্ত দৃঢ় হতে হবে। তাঁদের দাবি, ‘সতীত্ব’ই নাকি কোনও নারীর দৃঢ় মানসিকতার পরিচয়।

১৯৯৯ সালে ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার কমিশন এই দ্বিচারিতাকে বেআইনি ঘোষণা করে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই পরীক্ষায় নিষেধাজ্ঞা দাবি করে। কিন্তু এত কিছুর পরও চুপ ছিল ইন্দোনেশিয়া প্রশাসন।

সতীত্ব পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক

২০১৪ সালে ইন্দোনেশিয়া পুলিশে নিয়োগের এটি বিজ্ঞপ্তি ফের ঝড় তোলে। তাতে পরিষ্কার লেখা ছিল, যোগ্যতা নির্ণায়ক পর্বে অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি নারীদের ‘সতীত্বের’ প্রমাণ দেওয়া বাধ্যতামূলক। তাতে এও লেখা ছিল যে, যে সমস্ত নারী নিজেদের পুলিশ হিসাবে দেখতে চান তারা যেন ছোট থেকেই ‘সতীত্ব’ বজায় রাখার মানসিকতা তৈরি করে নেন।

২০১৩ সাল নাগাদ ইন্দোনেশিয়ার বেশ কিছু স্কুলও ছাত্রী ভর্তির সময় এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেয়।

এর পর ইন্দোনেশিয়ার চিকিৎসকরাও এর বিরুদ্ধে সরব হন। হাইমেন পর্দার পরিস্থিতি বৈজ্ঞানিকভাবে কখনও কোনও নারীর সতীত্বের প্রমাণ হতে পারে না।

কোনও নারীর হাইমেন পর্দা নানা কারণে ছিঁড়ে যেতে বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে পর্দা ছেঁড়ার প্রকৃত কারণ বিশ্লেষণ না করেই ওই নারী কোনও পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয়েছেন ধরে নেওয়া হয়। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলেছিল চিকিৎসক মহল।

২০১৫ সালে ইউরোপীয় কমিশন এই অভ্যাসকে ‘বৈষম্যমূলক এবং অবমাননাকর’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন চিকিৎসক নিলা ময়লোয়েক। তিনিও সে সময় এই নিয়মের সমালোচনা করেন।

২০১৯ সালে পশ্চিম জাভার এক জিমন্যাস্টকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ান গেমসে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তিনি নাকি ‘সতীত্ব’ হারিয়েছিলেন।

Please follow and like us:

Check Also

আবুল কাশেম কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি,তাই জনগণ তাকে বার বার নির্বাচিত করতেন: সাতক্ষীরায় মিয়া গোলাম পরওয়ার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।