বিনাদোষে সৌদিতে স্বামীর ২০ বছরের জেল, দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন রাবেয়া

বিনাদোষে সৌদি আরবে স্বামীর ২০ বছরের জেল হওয়ার খবর শুনে পাঁচ বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন মেহেন্দিগঞ্জের মেয়ে রাবেয়া। তিনি জানান, সৌদি আরবে মাদক পাচারের অভিযোগে স্বামী আবুল বাশারকে জেল দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যার দোষে তার স্বামী জেল খাটছেন তার বিরুদ্ধে মামলা হলেও তিনি জামিনে বের হয়ে ঘুরছেন। আর এখন তিনি স্বামীর রেখে যাওয়া ঋণের ৮ লাখ টাকা শোধ করতে সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে কাজের সন্ধানে ঢাকায় ঘুরছেন।

রাবেয়া জানান, তার স্বামী আবুল বাশার গত বছরের ডিসেম্বরে ছুটি কাটাতে দেশে আসেন। ছুটি শেষে ১১ মার্চ দিবাগত রাতে সৌদি আরবে যাওয়ার সময় তিনি ঘটনার শিকার হন। তাদের বিয়ে হয়েছে ৭ বছর।

রাবেয়ার অভিযোগ, সৌদি আরবে যাওয়ার পথে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নূর মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি তার স্বামীর ব্যাগে আচার রয়েছে বলে জোর করে ইয়াবা ঢুকিয়ে দেন।

নূর মোহাম্মদ বিমানবন্দর পরিচ্ছন্নতার দায়িত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠান একে ট্রেডার্সের এসআর সুপারভাইজার হিসেবে ওই সময় কাজ করতেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে নূর মোহাম্মদকে শনাক্ত করে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ গ্রেফতারও করে। কিন্তু তিনি গ্রেফতারের চার দিন পরই জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসে সবকিছুই জানানো হয়েছিল। তারা যথেষ্ট সক্রিয় ছিল না। সে কারণে তার স্বামীকে এখন কারাভোগ করতে হচ্ছে। হাতে সময় খুব কম। এক মাসের মধ্যে আপিল করতে হবে।

নির্দোষ বাশারের মুক্তির জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না তার স্ত্রী রাবেয়া। তার দাবি, সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো যেন বাশারকে মুক্ত করার ব্যবস্থা নেয়। পাঁচ বছরের মেয়েকে নিয়ে স্বামীর মুক্তির জন্য সরকারের ঊর্ধ্বতনদের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি।

রাবেয়া বলেন, ‘অপরিচিত ওই ব্যক্তির প্যাকেট নিতে অস্বীকৃতি জানান আমার স্বামী। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নিজেকে বিমানের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে তাকে ভয়ভীতি দেখান। প্যাকেট না নিলে তাকে ফ্লাইটে উঠতে দেবেন না বলেও ভয় দেখান। এতেও নিতে রাজি না হলে একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নিজেই জোর করে আমার স্বামীর ব্যাগে প্যাকেটটি ঢুকিয়ে দেয়। ভয়ভীতি দেখানোয় এবং ফ্লাইটের সময় হয়ে যাওয়ায় কারও কাছে কোনো অভিযোগ না দিয়ে আমার স্বামী ফ্লাইটে উঠে পড়েন। কিন্তু সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর নিরাপত্তাকর্মীরা তার ব্যাগ তল্লাশি করলে ইয়াবার প্যাকেট পায় এবং আমার স্বামীকে জেলে পাঠায়।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ত্যাগের পর থেকেই আমার স্বামীর খোঁজ পাচ্ছিলাম না। ২০ দিন পর ঘটনার বিস্তারিত এবং জেলে থাকার কথা জানিয়ে সৌদি থেকে টেলিফোন করেন তিনি। পরে ১৩ এপ্রিল বিমানবন্দরে গিয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাই।

‘আর্মড পুলিশ আমার অভিযোগের ভিত্তিতে বিমাবন্দরের সিসি ক্যামেরার রেকর্ড চেক করে ঘটনার সত্যতা পায়। ১৪ এপ্রিল বিমানবন্দরে পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত একে ট্রেডার্সের এসআর সুপারভাইজার নূর মোহাম্মদকে আটক করে তারা। এ ঘটনায় আমি বিমানবন্দর থানায় মামলা করি। এরই মধ্যে নূর মোহাম্মদকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’

বাশারের স্ত্রী রাবেয়া বলেন, ‘আমার স্বামী অপরাধ না করেও প্রায় ৭ মাস ধরে জেলে আছেন। সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আইনি সহায়তা না পাওয়ায় এক পক্ষীয়ভাবে আদালত তাকে ২০ বছরের সাজা দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা না পেলে আমার স্বামীকে বিনা অপরাধে ২০ বছর জেল খাটতে হবে। আমি আমার পাঁচ বছর বয়সী কন্যাসন্তানকে নিয়ে দেশে মানবেতর জীবন যাপন করছি।’

মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে স্বামীর মুক্তিতে সরকারের সাহায্য চেয়ে আবেদন করেছেন রাবেয়া।

এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জিয়াউল হক একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘১৩ মার্চ সৌদিপ্রবাসী বাশারের স্ত্রী রাবেয়ার অভিযোগ পেয়ে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে নূর মোহাম্মদকে শনাক্ত করি। পরদিন তাকে আটক করি। তিনি আমাদের কাছে অপরাধের কথা প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন। পরে বিমানবন্দর থানায় করা রাবেয়ার মামলায় নূর মোহাম্মদ কারাগারে রয়েছেন।’

জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের বিশেষ শাখায় বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠিয়েছি। বিশেষ শাখা ইন্টারপোলের বাংলাদেশ ডেস্কে পাঠিয়েছে। তারাও সৌদি আরবের ইন্টারপোলকে চিঠি লিখেছে বলে জানি।

Please follow and like us:

Check Also

পৃথিবীর যেসব দেশে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রিরও উপরে

জলবায়ু পরিবর্তনের চরম ভয়াবহতার সাক্ষী হতে যাচ্ছে সারাবিশ্ব। প্রতিদিনই একটু একটু করে বৈরি হচ্ছে আবহাওয়া, …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।