চিঠি পড়ে – বিলাল মাহিনী

 

গায়ের নকশিকাঁথায় যত্ন করে যেমনিভাবে সুতোগুলো বোনা হয়
তেমনি তোমার কোমল হাতে কী সুন্দর করে লিখতে আমায় চিঠি,
রঙিন খামে উড়িয়ে দিতে প্রিয় ঠিকানায়।

আজও তোমার শত চিঠি সযত্নে জমা আছে আলমিরার পুরোনো ফাইলে।
তুমি ‘প্রিয়’ বলে ডাকতে, আমি ডাকতাম ‘সাথী’।
তোমার পত্রাদির লেখা ও মায়ামাখা ভাষা কী দারুণ তৃপ্ত করতো আমায়_
আজও ভেবে ভেবে সুখসুধা পানে বিরহের তৃষ্ণা মেটাই।

স্বপন ঘেরে মনে হয় যেনো তুমি ‘হাওয়া’ বেশে আমি ‘আদম’র জন্য জান্নাতি ফলের জুস হাতে ডাকছো আমায়!
তোমার সিক্ত হস্তদ্বয় গড়িয়ে পড়ছে সুস্বাদু রস।

মতিহারের সবুজ চত্বরে,
কখনো রেললাইন ঘেঁসে চারুকলার পাশে বসে, কখনোবা ছাদে হেলান দিয়ে_ তোমার লেখা পড়তাম।
তোমার হাতের প্রতিটি অক্ষরে তোমায় খুঁজে পেতাম।
প্রজাপতি-ভ্রমর লুটোপুটি খেতো তোমার পত্রপটে।

মাঝে মধ্যে রুমাল পাঠাতে, পত্রের বিকল্প হিসেবে
ভালোবাসার প্রতীকী বৃত্তে তোমার-আমার নামের প্রথম দুটি অক্ষর লিখতে রেশমি সুতোয়।
পত্র মাঝে গুঁজে দিতে কিছু পাপড়ি
দু-একটি চিঠিতে তোমার বিরহী কাজল ধোয়া গড়িয়ে যেতো,
নিজেকে সামলাতে পারতাম না,
তোমার-আমার অশ্রুতে সিক্ত হতো পত্রপাতা।

তুমি এখন বহুতলে থাকো
শীত-গ্রীষ্ম নিয়ন্ত্রিত আলো ঝলমল বাগান বিলাসে, আমি আজও চিলেকোঠায়।
অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াই-
তোমার পুরনো রক্ত-অশ্রু মাখা চিঠিগুলো।
এখনো আলোড়িত করে আমার চৈতন্য- ‘তোমার শিহরণ ভালোবাসা’।
রাত ফুরোয় তোমার কণ্ঠের শিশির ঝরা স্বর শুনে শুনে।

পৌড় হৃদয় এখন আমার;
মৃগতৃষ্ণিকাতলে বৈতাল মরুভূমিতে তুমি আসো ঈষৎ পাহাড়ি ঝর্ণা হয়ে।
আজও জানি না, ভালোবাসাবাসি ছিলো কি-না!
তবে, মরীচিকা জয় করেছি-
এটা অনুভব করি তোমার চিঠি পড়ে।

Please follow and like us:

Check Also

বেড়িবাঁধ কেটে নোনাপানি ঢুকিয়ে ঘের ব্যবসা

সুন্দরবন–সংলগ্ন খুলনার কয়রা উপজেলায় যত্রতত্র বেড়িবাঁধ কেটে ও ছিদ্র করে পাইপ দিয়ে নোনাপানি উঠিয়ে চলছে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।