উপনির্বাচনে ৪টি কেন্দ্রেই বিপুলভাবে জয়ী তৃণমূল

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কয়েক মাস আগেই দিনহাটায় বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি’র কাছে হেরে গিয়েছিল তৃণমূল। সেই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে আগেরবার হেরে যাওয়া প্রার্থী উদয়ন গুহ জিতেছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৫ ভোটে। গোসাবায় তৃণমূল জিতেছে ১ লাখ ৪১ হাজারেরও বেশি ভোটে। গতবার শান্তিপুর জিতেছিল বিজেপি। এবার শান্তিপুরও তাদের হাতছাড়া হচ্ছে। খড়দহে তৃণমূল প্রার্থী ও রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জিতেছেন ৯৩ হাজারেরও বেশি ভোটে। ফলে চারটির মধ্যে চারটিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। পশ্চিমবঙ্গে উপনির্বাচনেও বড় ধাক্কা খেয়েছে মোদি-শাহের দল।

দিনহাটায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের বাড়ির বুথেও বিজেপি জিততে পারেনি। এরপরই রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন টুইট করে বলেছেন, ‘দিনহাটায় গত মে মাসে তৃণমূল ৫৭ ভোটে হেরেছিল। সেখানে দেড় লাখের বেশি ভোটে জয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাড়ির বুথেও বিজেপির হার। অমিত শাহ কি আগামী দেওয়ালির আগে পশ্চিমবঙ্গে আসবেন?’

এই ফলাফলের পিছনে
প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘দেখা যাচ্ছে, বিজেপি তার পুরনো জায়গায় ফিরে যাচ্ছে। তারা ১৩-১৪ শতাংশ ভোট হয়তো পাবে।’

তিনি মনে করেন, ‘গত বিধানসভা নির্বাচনে লড়াইটা ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বনাম নরেন্দ্র মোদির। তাই বিজেপি বেশি ভোট পেয়েছিল। ইতিমধ্যে বিজেপি থেকে তৃণমূলে নেতাদের ফিরে আসা, বিজেপির অন্দরের গোলমাল, পেট্রোল-ডিজেলের দাম সমানে বেড়ে যাওয়া, তার জেরে জিনিসের দাম বাড়ার মতো বিষয়গুলো সামনে এসেছে। তাই ভোট কমেছে বিজেপির।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, ‘ঘৃণা ও মিথ্যার রাজনীতির বিরুদ্ধে মানুষ রায় দিয়েছে।’ আর তার ভাইপো অভিষেকের কটাক্ষ, ‘এটা বিজেপিকে শব্দবাজিহীন দীপাবলির শুভেচ্ছা।

লোকসভায় হার
তিনটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন হয়েছিল। তার মধ্যে দুটিতে বিজেপি হেরেছে। হিমাচলের মান্ডিতে জিতেছে কংগ্রেস এবং দাদরা ও নগর হাভেলিতে জিতেছে শিবসেনা। ৪৭ হাজারেরও বেশি ভোটে বিজেপি প্রার্থী হেরেছেন। গুজরাটের প্রতিবেশী এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিজেপির হার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। শুধুমাত্র মধ্যপ্রদেশে একটি লোকসভা আসনে জিতে মান বাঁচিয়েছে বিজেপি।

হিমাচলে কংগ্রেস
হিমাচলে তিনটি বিধানসভা ও একটি লোকসভা আসনের উপনির্বাচনের সবকটিতেই কংগ্রেস জিতেছে। মান্ডি লোকসভা কেন্দ্র আগে বিজেপির হাতে ছিল। সেটাও কংগ্রেস ছিনিয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, হিমাচল প্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায়। উপনির্বাচনে সাধারণত ক্ষমতাসীন দল সুবিধা পায়। সেখানে বিজেপির একটি আসনেও জিততে না পারা এবং কংগ্রেসের সবকটি আসনে জয় তাৎপর্যপূর্ণ।

রাজস্থানে কংগ্রেস দুটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে জিতেছে। মহারাষ্ট্রেও তারা একটিতে এগিয়ে আছে। মধ্যপ্রদেশে তারা একটিতে এগিয়ে। কর্ণাটকেও তারা একটি আসনে এগিয়ে।

আসামে বিজেপি
আসামে পাঁচটি বিধানসভা উপনির্বাচনের চারটিতে বিজেপি ও একটিতে তাদের শরিক জিতেছে। কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ তাদের আগে জেতা আসন ধরে রাখতে পারেনি। উত্তর-পূর্বের বাকি রাজ্যের ফলও বিজেপি বা তার শরিকদের দিকেই গেছে।

মধ্যপ্রদেশে দুইটি ও কর্ণাটকে একটি আসনে এগিয়ে বিজেপি। তারা মধ্যপ্রদেশে একটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও এগিয়ে।

অসমিয়া প্রতিদিনের প্রবীণ সাংবাদিক আশিস গুপ্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, এমনিতে উপনির্বাচনে সরকারে যে দল আছে, তারা সুবিধা পায়। তার উপর মুখ্যমন্ত্রী প্রতিটি কেন্দ্রে গিয়ে একাধিক জনসভা করেছেন। আশিস জানিয়েছেন, এর মধ্যে তিনজন প্রার্থী কংগ্রেস ও এআইইউডিএফ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপির হয়ে লড়েছে। তাদের একটা প্রভাব আছে। তাই বিজেপি এভাবে জিততে পেরেছে।

সূত্র : ডয়চে ভেলে

Please follow and like us:

Check Also

আবুল কাশেম কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি করেননি,তাই জনগণ তাকে বার বার নির্বাচিত করতেন: সাতক্ষীরায় মিয়া গোলাম পরওয়ার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি, বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।