সাতক্ষীরার ১৩ ইউপি’র ১০ টিতেই চরম ভরাডুবি নৌকার

সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: সাতক্ষীরায় ইউপি নির্বাচনে নৌকার দ্বিগুণ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন জামায়াতের ২ প্রাথী। একটি ইউনিয়নে জামানত হারিয়েছে নৌকার প্রভাবশালী মাঝি। ১৩ ইউপি’র ১০ টিতেই চরম ভরাডুবি হয়েছে নৌকার। গত ১১ নভেম্বর এ ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের ফলাফলে দেখা যায় সদর উপজেলার কুশখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধীতা করেন। এ ইউনিয়নে  সাতক্ষীরা জামায়াতের কর্ম পরিষদ সাবেক থানা আমীর মাওলানা আব্দুল গফফার (টেলিফোন) ৪৭২৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: তাজউল ইসলাম (নৌকা) পেয়েছেন ২৭৮৭ ভোট। এ ইউনিয়নে বাকি ৯ প্রার্থী যথাক্রমে মো: আবুল কালাম আজাদ (ঢোল) ১১ ভোট, মো: ইকবাল হোসেন (টেবিলফ্যান) ১৫৯ ভোট, মো: কবির উদ্দীন মন্ডল (ঘোড়া) ৭৯ ভোট, মো: গোলাম মোস্তফা (অটোরিক্সা) ২৭০৫ ভোট, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের মো: মনিরুল ইসলাম (আনারস) ২৫০৯ ভোট, জাতীয় পার্টির মো: মুনছুর আলী সরদার (লাঙ্গল) ১২৭ ভোট, মো: শফিকুল ইসলাম (রজনীগন্ধা) ১৪৬৫ ভোট, ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: সাইফুদ্দীন পলাশ (চশমা)২৫৬ ভোট ও মো: হুমায়ুন কবির (মোটর সাইকেল) ২৮৫ ভোট পেয়েছেন। ভোট বিশ্লেষণে দেখা যায় জামায়াতের প্রাথী মাওলানা আব্দুল গফফার নৌকার প্রাথী তাজউল ইসলামের প্রাপ্ত ভোটের প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়েছে। এছাড়া আগরদাড়ি ইউনিয়নে জামায়াতের প্রার্থী মো: কবীর হোসেন (টেবিল ফ্যান) ৭৫৫০ ভোট, পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: মঈনুল ইসলাম (নৌকা) পেয়েছেন ৩৮৮০ ভোট। এ ইউনিয়নে বাকি ৫ প্রার্থী যর্থাক্রমে সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোহম্মদ লুৎফর রহমান (ঘোড়া) ৩৬৩৮ ভোট, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান মো: মজনুর রহমান (চশমা) পেয়েছেন ৩৫৮৯ ভোট, মো: নুরুল ইসলাম (আনারস) ২২৯ ভোট, শাহিদ (মোটর সাইকেল) ৩৩৬৩ ভোট ও হাবিবুর রহমান (অটোরিক্সা) পেয়েছেন ১০৮৬ ভোট।

এই ভোটে জামানত হারাতে যাচ্ছেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলা বৈকরী ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মো: আসাদুজ্জামান অসলে।

জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার মোট কাস্টিং ভোটের ৮ ভাগের ১ ভগের কম পেলে সেই প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। বৈকালী ইউনিয়নে তিন প্রার্থী মিলে ভোট কাস্টিং হয়েছে ১২ হাজার ১০৮ টি। এখানে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আবু মো: মোস্তফা কামাল (মটর সাইকেল) ১০ হাজার ২৯২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী আসাদুজ্জামান অসলে ভোট পেয়েছেন এক হাজার ১২৫ ভোট। বিধি অনুসারে তাকে এক হাজার পাঁচশত ১৩ ভোট পেতে হবে। কিন্ত তিনি ৩৮৮ ভোট কম পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে অপর প্রার্থী জামায়াত সমর্থিত মো: জালাল উদ্দীন (আনারস) পেয়েছেন ৬৯১ ভোট। ভোটের এক সপ্তাহ আগে তিনি তার নির্বাচনি কার্যক্রম প্রত্যাহার করে নেনে। আওয়ামীলীগের হামলা ও মামলার কারণে তিনি নির্বাচন থেকে সরে যান বলে সূত্র জানায়।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা ৩টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৫টি, বিএনপি ২টি, জামায়াত ২টি এবং জাতীয় পাটিতে একটিতে নির্বাচিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার উৎসবমুখর পরিবেশে ১৩টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর গণনা শেষে রিটানিং অফিসারদ্বয় বেসরকারী ফলাফল ঘোষণা করেন। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী বাঁশদাহ ও কুশখালী ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার উপজেলা কৃষি অফিসার মো: রফিকুল ইসলাম’র দেওয়া তথ্য থেকে দেখা যায়, সদর উপজেলার বাঁশদহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ৭ জন প্রার্থী  প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। এ ইউনয়নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: মফিজুর রহমান (নৌকা) ৫১৩১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী মো: নাজমুল হাসান (মোটর সাইকেল) ৩৩৭০ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়নের বাকি পাঁচ প্রার্থী যথাক্রমে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেক (টেলিফোন) ৩৩৫ ভোট, এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান (চশমা) ২০৯৪ ভোট, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম মোশাররফ হোসেন (আনারস) ১২০৯ ভোট, মো: ময়নুর রহমান (দুটি পাতা) ২৭ ভোট ও জাতীয় পার্টির শেখ শরিফুজ্জান (লাঙ্গল) ১৫৭২ ভোট পেয়েছেন।

লাবসা ইউনিয়নে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল আলিম (আনারস) ১৭৩৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো: নজরুল ইসলাম (নৌকা) পেয়েছেন ৩৩৭৫ ভোট। এ ইউনিয়েন অপর প্রার্থী মোহাম্মাদ শাহীন হোসেন (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ৯৫ ভোট।

বলল্লী ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সদস্য এড. মো: মহিতুল ইসলাম (আনারস) ৪৫৫৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে। তার নিকটতম প্রার্থী শেখ হাবিবুর রহমান (চশমা) পেয়েছেন ৪০১১ ভোট। এ ইউনিয়নের অপর দুই প্রার্থী যথাক্রমে বল্লি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: বজলুর রহমান (নৌকা) ১৭৮৭ ভোট পেয়েছেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো: খায়রুল ইসলাম (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ৫৬ ভোট।

ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান মো: আজমল উদ্দীন (নৌকা) ১০৬১৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বদ্বি বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ৮৪৫৯ ভোট। এ ইউনিয়নে অপর প্রার্থী জয়দেব কুমার ঘোষ (আনারস) পেয়েছেন ১৮০৭ ভোট।

ঘোনা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী  প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো: আব্দুল কাদের (মোটর সাইকেল) ৪৫৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান মো: ফজলুর রহমান (নৌকা) পেয়েছেন ২৬৫০ ভোট। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মো: কামরুজ্জামান (আনারস) ৬৯১ ভোট, জাতীয় পাটির লাঙ্গল প্রতীক পেয়ে মো: বদরুজ্জামান (লাঙ্গল) ৫৪৩ ভোট ও মো: সদর উপজেলার পশ্চিম জামায়াতের সেক্রেটারি মোশাররাফ হোসেন (চশমা) ১৬৮০ ভোট পেয়েছেন।

বৈকারী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আবু মো: মোস্তফা কামাল (মটর সাইকেল) ১০২৯২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান মো: আসাদুজ্জামান (নৌকা) পেয়েছেন ১১২৫ ভোট। এ ইউনিয়নে অপর প্রার্থী জামায়াত সমর্থিত মো: জালাল উদ্দীন (আনারস) পয়েছেন ৬৯১ ভোট। তিনি ভোটের এক সপ্তাহ পূর্বে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

ভোমরা ও শিবপুর ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার উপজেলা সমাজসেবা অফিসার শেখ সহিদুর রহমান দেওয়া তথ্য থেকে দেখা যায়, ভোমরা ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী (মোটর সাইকেল) ৬৫৭১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম (নৌকা) পেয়েছেন ৪৭০৮ ভোট। এ ইউনিয়ননের অপর তিন প্রার্থী যথাক্রামে মো: মমিমুল ইসলাম (ঘোড়া) ৮৬ ভোট, মো: সামছুল আলম (চশমা) ২০২৮ ভোট ও মো: সাহেব আলী (আনারস) ৩৮৪৯ ভোট পেয়েছেন।

শিবপুরে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাাদক এসএম আবুল কালাম আজাদ (আনারস) ৭৪৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নকিটতম প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী (নৌকা) ৩৮১৭ ভোট। এ ইউনিয়নের অপর প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো: ইমাদুল হোসেন (হাতপাখা) ৩৩৬ ভোট পেয়েছেন।

ধুলিহার, ব্রহ্মরাজপুর ও ফিংড়ি ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসার উপজেলা নির্বাচন অফিসার শেখ শরিফুল ইসলাম’র দেওয়া তথ্য থেকে দেখা যায়, ফিংড়ি ইউনিয়ন ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো: লুৎফর রহমান (আনারস) ১০১৩৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী জামাতের মো: আজাদুল ইসলাম (চশমা) ৫৩১৯ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে অপর তিন প্রাথী যথাক্রামে আওয়ামী লীগের মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান মো: সামছুর রহমান (নৌকা) ৪৯৫৮ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বেলাল হোসেন (হাতপাখা) ১৮৪ ভোট ও মো: সেলিম রেজা গাজী (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ২১৪ ভোট।

ধুলিহর ইউনিয়নে মো: মিজানুর রহমান চৌধুরী (আনারস) ৮২৫৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান মো: মিজানুর রহমান (নৌকা) পেয়েছেন ৭০৯৩ ভোট। এ ইউনিয়নের অপর দুই প্রার্থী যর্থাক্রামে মো: ফজলুর রহমান (চশমা) ২২২ ভোট ও স. ম. মসিউর রহমান (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ৬২২ ভোট।

ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো: আলাউদ্দীন (নৌকা) ৭২৩৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান মো: শহিদুল ইসলাম (আনারস) পেয়েছেন ৩৮৫৪ ভোট। এ ইউনিয়নে অপর দুই প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো: এবাদুল ইসলাম (হাতপাখা) পেয়েছেন ৪২৯ ভোট এবং থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মো: নূরুল ইসলাম (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ৩৪২৪ ভোট।

Check Also

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইয়াছিন আলীকে গ্রেফতার করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।