সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে পরাজিত জ্যোৎন্সা ও সাথীর মামলা

চলতি বছরের ১৪ ফেব্রæয়ারি সাতক্ষীরা পৌরসভা নির্বাচনে ১, ২ ও ৩ নং সংরক্ষিত এলাকায় নির্বাচনে কারচুপি অনিয়ম দুর্নীতি ও ইভিএম মেশিনের এসডি কার্ডের মাধ্যমে ভোট জালিয়াতিপূর্বক চশমা প্রতিকের প্রার্থী জ্যোৎ¯œা আরাকে পরাজিত করার অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করা হয়েছে। বিজ্ঞ যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ ১ম আদালত ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সাতক্ষীরাতে এ মামলা দায়ের করেন পরাজিত প্রার্থী জ্যোৎ¯œা আরা। মামলায় উক্ত সংরক্ষিত এলাকায় নির্বাচিত জবা ফুলের প্রার্থী নুর জাহান বেগমকে ১নং বিবাদী করে প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ৩১জনকে পর্যায়ক্রমে বিবাদী করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মামলার দুটি ধার্যদিন অতিবাহিত হওয়ার পর ১নং বিবাদী সম্প্রতি আদালতের নোটিশ পেয়েছেন।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, নির্ধারিত ভোটের দিনে সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় ভোট গ্রহণ শেষ করেই গণনা শুরু করেন। এসময় নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী বাদিনীর (প্রার্থীর) পোলিং এজেন্ট ও প্রতিনিধিদেরকে বুথ ও কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে একটি ফরমেটে স্বাক্ষর করিয়ে নেয় এবং তাদের অনুপস্থিতিতে ভোটের ফলাফল ভিন্নখাতে প্রবাহিত করে। বুথ ভিত্তিক গ্রহণকৃত ভোট এসডি কার্ডে সংরক্ষিত ছিল তা প্রিজাইডিং অফিসারের রুমে রক্ষিত কন্ট্রোল ইভিএম মেশিনে কপি পেস্ট না করেই ৮ থেকে ১৫ নং বিবাদীগণ পূর্ব থেকে তৈরিকৃত ফলাফল সম্বলিত অন্য একটি এসডি কার্ডের মাধ্যমে প্রিন্ট করে ফলাফল ঘোষণা দেয়া হয়। সঠিকভাবে গণনা করলে বাদীনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হতেন বলে দাবী করা হয়েছে। ১৬ থেকে ৩১ নং বিবাদীগণকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানো হলেও তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি।

ফলে ১৪ ফেব্রæয়ারি ২০২১ সাতক্ষীরা পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নং সংরক্ষিত এলাকার বিজয়ী জবা ফুল প্রতিকের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নুর জাহান বেগমকে ঘোষণা বাতিলপূর্বক ১৬টি কেন্দ্রের ৯৩টি বুথের ভোট পূনরায় গণনা বা পূন:নির্বাচন দাবী করেছেন বাদিনী।

 

মামলায় বিজয়ী নুর জাহান বেগম ছাড়াও আরো বিবাদী করা হয়েছে, আনারস প্রতিকের প্রার্থী তাজিনা আক্তার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, সচিব, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা খুলনা, জেলা রিটানিং কর্মকর্তা নাজমুল কবির, সহকারি রিটানিং কর্মকর্তা। আরো বিবাদী করা হয়েছে, ঢাকার আইডিইএ প্রকল্প টেকনিক্যাল এক্সপার্ট টিম লিডার আরাফাত হোসেন, এ্যাসোসিয়েট আইডিইএ প্রকল্পের মোখলেচুর রহমান, একই বিভাগের টেকনিক্যাল সাপোর্ট আমির হোসেন, ডাটা এন্ট্রি অপরেটর আশরাফুল আলম ও শরিয়াতুল্লাহ, মেশিন অপরেটর ফারুক হোসেন ও মোহাম্মদ ইসমাইল ও স্কানিং অপরেটর মাহমুদুর রহমান।

পাশাপাশি এ মামলার অন্যান্য বিবাদীরা হলেন, প্রিজাইডিং অফিসার (প্রাণী সম্পদের) জয়দেব কুমার সিংহ, সমাজ সেবার মিজানুর রহমান, মৎস্য কর্মকর্তা হাসান সাজ্জাদ, রিসোর্স সেন্টারের ইয়াছিন আলী, যুব উন্নয়নের সঞ্জিব কুমার দাস, পলিটেকনিকের শেখ আহসান কবির, সদর উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের আবু তাহের, সদর উপজেলা সমবায় অফিসার কারিমুল হক, জনস্বাস্থ্যের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান, পিটিআই এর ইন্সট্রেক্টর আকবর হোসেন, সদর উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার সহিদুর রহমান, সদর পল্লী উন্নয়ন অফিসার ইসরাইল হোসেন, পলিটেকনিকের ইন্সট্রেক্টর ফারুক হোসেন, সদরের সহকারি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সন্তোস কুমার মন্ডল, সহকারি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন ও সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক শাহিনুর রহমান।

তবে এই মামলার বিষয়ে পৌরসভার ১, ২ ও ৩ সংরক্ষিত এলাকার বর্তমান নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নুর জাহান বেগম গণমাধ্যমকে জানান, উক্ত সংরক্ষিত এলাকায় মোট ভোটার সংখ্যা ছিল ৩২ হাজার ৭০৬ জন। আর পরাজিত প্রার্থী চশমা প্রতিকে ভোট পেয়েছিলেন ৫ হাজার ৮৬৮টি এবং আমি জবা ফুলে ভোট পেয়েছি ১১ হাজার ৮৮৫টি। বিগত পৌরসভা নির্বাচন জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা যথেষ্ট স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন করেছেন। যা সাতক্ষীরাবাসী দেখেছেন। এতদিন পর নির্বাচনে কারচুপির যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা আদৌ যুক্তিসংগত নয়। শুধুমাত্র কিছু সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারি ও বিজয়ী জনপ্রতিনিধি হিসেবে আমাকে হয়রানি করার জন্য এই মামলার সৃষ্টি করেছেন পরাজিত প্রার্থী।

 

তিনি বলেন, আমি সম্প্রতি আদালতের নোটিশ পেয়েছি, আগামী ৬ জানুয়ারি আদালতে হাজির হয়ে জবাব দাখিল করে মামলাটি চ্যালেঞ্জ করা হবে।
সার্বিক বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নাজমুল কবীর জানান, পৌরসভা নির্বাচনে তথাকথিত অনিয়মের বিষয়ে ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত এলাকার পরাজিত প্রার্থী জ্যোৎ¯œা আরা ও ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে সংরক্ষিত এলাকার পরাজিত প্রার্থী ফারহা দিবা খান সাথী পৃথক দুটি মামলা করেছেন। উভয় মামলার একই ধরণের অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে। আমরা আদালতের নোটিশ পেয়েছি। এ বিষয়ে কোন মন্তব্য না করেই তিনি বলেন, যেহেতু বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। তাই আদালতেই এর সমাধান হবে।

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।