গণতন্ত্রহীনতায় মুরাদদের উত্থান

॥ হারুন ইবনে শাহাদাত ॥
গাজীপুরের মেয়র জাহাঙ্গীর এবং খুলনা বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) এর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান কাণ্ড শেষ হতে না হতেই পাদপ্রদীপের আলোয় এলেন বিতর্কিত তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের কান গরম করা অশ্লীল টেলিফোন আলাপ। অবশ্য কান গরম করা, লজ্জা-শরমের মাথা খাওয়া তার অনেক বক্তব্য এর আগেও ভাইরাল হয়েছে। সেই সব বক্তব্য প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নোত্তরে তিনি সরকারপ্রধানের দোহাই দিয়ে বলেছেন, ‘তিনি যা করেন যা বলেন’, তার অনুমতি নিয়েই বলেন। তার এই বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিল। কতটা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিল, তা বোঝা যায় ডা. মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে বলার আগে বিবিসি বাংলার কাছে করা রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক মহিউদ্দিন আহমেদের মন্তব্যে। তিনি বলেন, ‘সরকারের একজন মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী, যিনি সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করছেন, যিনি সংবিধান মেনে শপথ নিয়েছেন, সেখানে এ ধরনের কথা বলা সংবিধানের বরখেলাপ। এ ধরনের কথা বলার সাহস তখনই তারা পান, যখন এসব কথা বলার জন্য তারা তিরস্কৃত হন না, বরং পুরস্কৃত হন।’ শুধু মহিউদ্দিন আহমেদ নয়, জনমনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও শামসুল হক প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগ (আওয়ামী লীগ)-এর নীতি ও আদর্শ নিয়ে তৈরি হচ্ছিল নানান প্রশ্ন। এ কথা সত্য, আওয়ামী লীগের বাঁক বদল হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষমতার মসনদ পাওয়ার পর যেমনটা ঘটে। তাই বলে এতটা, জনগণ খুব সহজে বিষয়টি মেনে নিতে পারছিল না। এমনকি আওয়ামী লীগের সমর্থকরাও না। এর প্রমাণ ডা. মুরাদ হাসানের মন্ত্রিত্ব হারানোর খবরে তার এলাকায় নিজ দলের লোকদের মিষ্টি বিতরণের খবর ও ছবি। তারা মন্তব্য করেছেন, ডা. মুরাদের কারণে তারা বিব্রত। কারণ জনগণ তার মতোই তাদেরও ভাবতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
পানির রং নেই, গ্লাসের রঙে রঙিন দেখায়
পানির রং নেই, গ্লাসের রঙে রঙিন দেখায়। কোনো দল বা আদর্শকেও চেনা যায় সেই আদর্শের ধারক মানুষটিকে দেখেই। দেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারার অনুপস্থিতির কথা বিশ্লেষকরা বলে আসছেন তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে। বিরোধী দলমতের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা বিষয়টি উপলব্ধি করছেন। কিন্তু যারা সরকারে আছেন, তারা জেগে ঘুমাচ্ছেন নয়তো ঘুমের ভান করছেন। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের শরিকরা এবং তথাকথিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির ঘুম মাঝে মাঝে ভাঙে। যখন স্বার্থে টান পড়ে, ঠিক সেই সময়ই ঘুম ভাঙানো ঘণ্টা বাজে। সাথে সাথে তারা চিৎকার শুরু করেন। সরকারের বিরুদ্ধে তাদের মতো করে নানান বয়ানে মাঠ গরমের চেষ্টা করেন। কিন্তু জনগণ তাদের বিশ্বাস করে না। সরকারের দালাল বলে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এই তো গত ২৭ নভেম্বরও জাতীয় সংসদে বক্তৃতাকালে এ কথা স্বীকার করেছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক বলেছেন, ‘সরকারের কথা বলতে গিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে, মাননীয় স্পিকার, পাবলিক আমাদের আওয়ামী লীগের দালাল বলে।’ আসলে দালালি করতে গেলে রং ঠিক থাকে না। গণতন্ত্র হত্যা করা কোনো দালাল ছাড়া সম্ভব হয় না। তাই সরকার দুধ-কলা দিয়ে দালাল পোষে। কিন্তু এতেও কি শেষ রক্ষা হয়? না, হয় না। এর প্রমাণ ক্ষমতাসীনরা প্রতিনিয়ত পাচ্ছেন। কিন্তু ক্ষমতার মোহে গণতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মসনদ দখলে রাখতে গিয়ে দেশ ও জনগণের সর্বনাশ করার সাথে সাথে আওয়ামী লীগকেও ডোবাচ্ছে। ডা. মুরাদের মতো লোকেরা মন্ত্রী হচ্ছেন। সরকারপ্রধান ও দলীয় প্রধানের আশীর্বাদের হাত তাঁর মাথায় আছে এমন প্রচারণা চালিয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করছেন। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের আদর্শ ইসলাম, সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেম সমাজ ও বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীদের নিয়ে মুখে যা আসে, তাই বলেন। অশ্লীল আহ্বানের কঠিন বার্তা পাঠান দেশের চলচ্চিত্র অভিনেত্রীদের কাছে। তারকাদের সাথে ফোনালাপে খেই হারিয়ে কলঙ্কিত করেন বিনাভোটে অলঙ্কিত করা মন্ত্রিত্বের মতো দায়িত্বশীল মর্যাদাপূর্ণ আসনকে। গত ৬ ডিসেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তাকে কেন বরখাস্ত করা হলো না, পদত্যাগ করতে বলা হলো? তার বিরুদ্ধে তো অনেক অভিযোগ, কোন অভিযোগে তাকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে, তা-ও পরিষ্কার করা হয়নি।
 কোন কারণে পদত্যাগ করতে বলা হলো?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন। কেন এমন নির্দেশ, তা না বলা হলেও জনগণ ধরে নিয়েছেন, নৈতিক স্খলনের জন্য মন্ত্রিত্ব গেল তথ্য প্রতিমন্ত্রীর। তাকে নিয়ে অনেক দিন ধরে নানা ধরনের আলোচনা সমালোচনা ও বিতর্ক চলছিল। এখন বড় প্রশ্নÑ ঠিক কোন কথার জন্য আসলেÑ তাঁর মন্ত্রিত্ব গেল। তাঁর কোন কথাটা আসলে নৈতিক স্খলনের সমতুল্য? এ প্রসঙ্গে একটি জাতীয় দৈনিকের অনলাইন সংস্করণে বলা হয়েছে, “তিনি যত ধরনের কথা বলেছেন, তার বড় অংশই প্রকাশযোগ্য নয়। তিনি প্রকাশ্যে, জেনেশুনে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, তার অনেক কিছু এতটাই অশ্লীল যে, তা একেবারেই অপ্রকাশযোগ্য। আবার চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে যে টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়েছে, সেসব কথাবার্তা প্রকাশযোগ্য নয়। মুরাদ হাসান সেই বিরল ব্যক্তিদের একজন, যার প্রকাশ্য বা গোপন কথাবার্তা, কোনোটাই জনসম্মুখে আনার মতো নয়। সুতরাং আলোচনায় কিছুটা রাখঢাক থাকবে। ১. নাহিদ নামে এক উপস্থাপকের সঞ্চালনায় প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বিএনপি নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তারেক রহমান এবং তাঁর কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে যা বলেছেন, তা কেবল শিষ্টাচারবহির্ভূত বলা ভুল হবে। বলা যায়, তা ছিল বিকৃত মানসিকতার প্রতিফলন। এই মানসিকতা কেবল যে বক্তা মুরাদ হাসান দেখিয়েছেন তা নয়, উপস্থাপক নাহিদও সমান দোষে দুষ্ট। প্রতিপক্ষ দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীকে বিষোদ্গার করা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি অংশই হয়ে গেছে। কিন্তু সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছেন মুরাদ হাসান। কিন্তু বিএনপি নেত্রী ও তার পরিবার নিয়ে কথা বলার জন্য কারও পদ যাওয়ার ঘটনা খুবই বিরল। সুতরাং খালেদা জিয়া ও জাইমা রহমানকে নিয়ে মুরাদ হাসানের বক্তব্য নৈতিক স্খলনের মধ্যে পড়বে কি না, সে প্রশ্ন করাই যায়।
২. চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিকে টেলিফোনে যে ভাষায় কথা বলেছেন, যেভাবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, যেভাবে ভয় দেখিয়েছেন, যেসব ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন, তার সবটাকেই নৈতিক স্খলনের মধ্যে আনা যায়। বেশ কিছুদিন আগের এই টেলিফোন কথোপকথন ফাঁস হয়েছে গতকাল (৫ ডিসেম্বর) রাতে। শুরুতে কণ্ঠ শুনে ব্যক্তিদের পরিচয় অনুমান করতে হয়েছে। পরে অবশ্য অভিনেতা ইমন গণমাধ্যমে স্বীকার করেছেন যে এই কণ্ঠ তার, মাহিয়া মাহি ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের। সুতরাং সরকার থেকে যে নৈতিক স্খলনের কথা বলা হচ্ছে, সেটা কি এই টেলিফোন আলাপ? নাকি যে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর নাম ব্যবহার করা হয়েছে তাদের কারণেই এই নির্দেশ?
৩. বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজই (৬ ডিসেম্বর) এক সভায় বলেছেন, মুরাদ হাসান একসময় ছাত্রদল করতেন। পরে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। বিএনপি বা জামায়াত থেকে ক্ষমতার লোভে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার অভিযোগ বেশ পুরোনো। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্য ঠিক হলে এর সর্বশেষ সংযোজন মুরাদ হাসান। তাহলে এ কারণেই কি পদ গেল প্রতিমন্ত্রীর?
৪. আবার ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া এবং শামসুন নাহার হলের ছাত্রলীগ নেত্রীদের সম্পর্কেও কথা বলতে শোনা গেছে। যেমন তিনি বলেছেন, ‘তারা শিষ্টাচারের সংজ্ঞাটা আমাদের শেখাতে চাচ্ছে। তসলিমা নাসরিনের মতো অনেক তসলিমা নাসরিন বাংলাদেশ আছে, দুঃখ লাগে কোনটা জানেন? এরা আবার জয় বাংলার কথা বলে। এরা ছাত্রলীগ করছে নাকি, এরা আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে, এরা নাকি আবার নেত্রী ছিল কোনো কোনো হলে। কিন্তু রাতের বেলা এরা নিজেদের হলে থাকতেন না, ঘুমাতেন হোটেলে হোটেলে। কারণ, ফাইভ স্টার হোটেলে থাকার মজা, আর রোকেয়া হল ও শামসুন নাহার হলে থাকাটা কি এককথা? আমি এর চেয়ে বেশি বললে মিছিল শুরু হয়ে যেতে পারে। আমি আর বেশি কিছু বলব না।’ এই বক্তব্যে দলের নারীনেত্রীরাই ক্ষুব্ধ হয়েছেন, প্রতিবাদও করেছেন। নিজের দলের নেত্রীদের সম্পর্কেই যার এই ধারণা ও মনোভাব, তার সঙ্গে এক টেবিলে বসে দল করা অন্যদের জন্য বেশ কঠিন। এ কারণেই কি চাকরি গেল তথ্য প্রতিমন্ত্রীর? এর বাইরেও রাষ্ট্রীয় ধর্ম থাকা না-থাকা, একাধিক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাসহ নানা বিষয়ে ইদানীং অনেক কথা বলেছেন মুরাদ হাসান। এসবও কি কারণ ছিল মন্ত্রিত্ব যাওয়ার? সুতরাং মুরাদ হাসানের নৈতিক স্খলনের সংজ্ঞাটা জানা যেমন জরুরি, তেমনি ঠিক কী কারণে পদ গেল, তা বোঝাটাও দরকার। নিশ্চয়ই সরকার তা জানাবে। আর এসব বক্তব্যের শাস্তি পদত্যাগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে কি না, সেটাও জানা প্রয়োজন।” (দৈনিক প্রথম আলো অনলাইন, ৬ ডিসেম্বর ২০২১)।
গণতন্ত্রহীনতায় আছাগা-পরগাছার দৌরাত্ম্য
রাজনীতি বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিনাভোটে স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে দেশে যে নব্যরাজনৈতিক ধারার সূচনা করেছে ডা. মুরাদ হাসানরা তারই ফল। গণতন্ত্রহীনতার কারণেই রাজনীতির মাঠে; বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরকার ও দলে আছাগা-পরগাছার দৌরাত্ম্য বাড়ছে। এর আগেও নানারকম বক্তব্যের জন্য আলোচনায় উঠে এসেছেন জামালপুর-৪ আসনের এমপি মি. হাসান। একবার এক টকশোতে বিএনপি নেত্রী সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়ার সাথে অশালীন আচরণের কারণে সমালোচিত হয়েছিলেন। তার এমন আচরণ সম্পর্কে সৈয়দা আসিফা আশরাফী পাপিয়া বলেন, ‘মুরাদ হাসান যদি সত্যিকার অর্থে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হতেন, তাহলে তিনি দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এ ধরনের মন্তব্য করতে পারতেন না’।
বিশিষ্ট চিকিৎসক বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে লিখেছেন, “গত কয়েকদিন ধরে সরকারের দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তির অসংলগ্ন শিষ্টাচারবহির্ভূত বেশকিছু আচরণ গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। ভেবেছিলাম কুরুচিপূর্ণ এই আচরণের ব্যাপারে কিছুই বলবো না। এই ব্যক্তি রাষ্ট্রের সংবিধান রক্ষার শপথ নিয়ে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রাষ্ট্রধর্ম বিষয়ে বেপরোয়া ও উসকানিমূলক মনোভাব প্রদর্শন করেছেন। শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের কাছে হৃদয়ের অংশ ও নন্দিত মুফাসসিরে কুরআন হিসেবে পরিচিত, বার বার নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ ও ষড়যন্ত্রমূলক বক্তব্য রেখেছেন। অথচ আল্লামা সাঈদী চরম রাষ্ট্রীয় জুলুমের শিকার।  সর্বশেষ এই উন্মাদনায় যোগ হয়েছে মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, তাঁর সহধর্মিণী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তাঁদের নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমানের ব্যাপারে সীমাহীন ঔদ্ধত্যপূর্ণ, অশালীন ও অমার্জনীয় কুৎসিত বক্তব্য। কিন্তু এ পর্যন্ত সরকার তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। রাজনীতিতে প্রতিযোগিতা এবং বিরোধ থাকতেই পারে। তাই বলে শিষ্টাচার, সভ্য আচরণ ও সামাজিক মূল্যবোধের শেষ চিহ্নটুকুও মিটিয়ে দিতে হবে? মনে পড়ে গেল ’৭৩ সালের সেই সামাজিক ছবিটির কথাÑ ‘আবার তোরা মানুষ হ’।
সত্যি কী তারা আবার মানুষ হবে
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় জনগণের দ্বারা গঠিত সরকার। জনগণ যাদের পছন্দ করেন, সরাসরি ভোটের মাধ্যমে তাদের নির্বাচিত করেন। এটাই গণতান্ত্রিক রীতি। এখানে জোর যার মুল্লুক তার দর্শনের স্থান নেই। এর বিপরীত হলো, জংলি শাসন, মগের মুল্লুক, স্বৈরশাসন, একদলীয় জুলুমতন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি। এমন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় প্রকৃত মানুষ খুব সহজে সরকার গঠন করার সুযোগ পায় না। পেশি শক্তির জোরে পাশবিক শক্তির অধিকারী অমানুষরা সরকার গঠন করে। তাই আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির পরও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সরকার গঠন প্রক্রিয়াকে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করেন। দেশে আজ সেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা না থাকার কারণেই ডা. মুরাদদের মতো অমানুষদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। এতে শুধু বিরোধী দল বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, অন্য দল ও জনগণই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগেও ভালো মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। দেশ পরিণত হচ্ছে একদলীয় জুলুমতন্ত্রের জঙ্গলে। এ অবস্থা উত্তরণে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলসহ সব রাজনৈতিক দল এবং দেশের সচেতনমহলকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের ঘুম না ভাঙলে গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন জোরদার করতে হবে। তবেই ঘুম ভাঙবে।

Check Also

উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তুলব: পরিদর্শন বইয়ে প্রধানমন্ত্রী

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।