সাতক্ষীরায় ৪২৯টি খাল ভরাট হয়ে কৃষিতে বিরূপ প্রভাব: শুরু হয়েছে মরুকরণ

আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: ভরাট হয়ে গেছে সাতক্ষীরার প্রায় ৪২৯টি খাল। আর এসব খাল ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে এ এলাকার শত শত একর জমি অনাবাদি থেকে যাচ্ছে। এর ফলে সেচ ও ব্যবহারের কাজে মিঠা পানির তব্র্রি সঙ্কট দেখা দিয়েছে এবং কৃষকদের কৃষিকাজে বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বহু এলাকায় আমন ছাড়া রবিশস্যসহ অন্য কিছু আবাদের সুযোগ নেই। এমনকি বর্ষা মৌসুমে আমন আবাদেও চরম দুরাবস্থায় পড়ছে কৃষকেরা। পানি নিস্কাশনের সকল পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের দাবি, এসব খাল এখনই পুণ:খনন করা হোক, নাহলে কৃষি উৎপাদনে মারাত্মক বিরুপ প্রভাব পড়বে। এমনকি খাদ্যে দ্বিগুন উদ্ধৃত্ত জেলায় খাদ্য সঙ্কটে পড়ার প্রবল আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সাতক্ষীরা পানিউন্নয়ন বোর্ড বলছে জেলার ১৪টি নদী কোন রকমে টিকে আছে। এসব নদীর শাখা প্রশাখায় প্রবাহিত রয়েছে ৪২৯ টি খাল। পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাবে যার বেশির খাল এখন অস্তিত্ব হারিয়েছে। অনেক জায়গায় নদী ও খালের বুকে জেগে উঠা চরে মানুষ বসতি শুরু করেছে। ১৯৬০ ও ১৯৭০ এর দর্শকে এসব খালের উপর নির্মিত ২১৬টিস্লুইস গেটের মেয়াদ প্রায় শেষ।
সূত্র জানায়, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগে ২১৬টি স্লুইস গেট রয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর অধীনে ১২৩টি স্লুইস গেট রয়েছে। যার ৮০টি কার্যক্ষম আছে বাকি ৩৪ টি সম্পূর্ণ অকেজো। এছাড়া সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর অধীনে ৯৩ টি স্লুইস গেটের মধ্যে ২৮টি সম্পূর্ণ অকেজো। ৫০টির তলদেশ পলি জমে উঁচু হয়ে যাওয়ায় এগুলো পানি নিষ্কাশন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। পাউবো-১ এর একটি তথ্যে দেখা যায় ১২৩টি স্লুুইস গেটেরে মধ্যে ১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সালে নির্মিত ৩৫টি,১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ সালে নির্মিত ৫টি,১৯৬৩ থেকে ১৯৬৭ সালে নির্মিত ৩০টি, ১৯৬৩ থেকে ১৯৭৬ সালে নির্মিত ৪৮টি এবং ১৯৮৯ থেকে ৯৩ সালে নির্মিত ৫টি। যার বেশির ভাগ স্লুুইস গেটের মেয়াদই শেষ।
সরেজমিনে না দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, খাল ভরাটের কারনে কৃষকের কী দুরাবস্থা হয়েছে। খাল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্ধরা রবিশস্য আবাদের পাশাপাশি গবাদিপশু পালনের জন্য খালের পানি ব্যবহার করত। কিন্তু বর্তমানে বেশির ভাগ খাল শুকিয়ে গেছে। নেই খাওয়ানোর পানি। খাল ভরাট হয়ে পানিশূন্য হয়ে গেছে গোটা এলাকা। ফলে কৃষকের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই।
সচেতন কৃষকরা জানান, এসব খাল পুন:খনন করা প্রয়োজন। তার মতে শুধুমাত্র তালায় ৫০ কিলোমিটার খাল গত তিন যুগে ভরাট হয়ে গেছে। যা কৃষকের এখন কৃষিকাজে ব্যবহার করতে পারছেনা।
স্থানীয়রা জানায়, নদী নালা,খাল বিল ছিল এ এলাকার মানুষের জীবন-জীবিকার মাধ্যম, খাল বিলের পানি দিয়ে চলত, কৃষকের চাষাবাদ ও মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত জেলে সম্প্রদায়। শুধু তাই নয়, নদী থেকে পূরণ হতো এলাকার দেশি মাছের চাহিদা। পরিবেশবিদদের মতে, তালা কলারোয়া উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কপোতাক্ষ নদ অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে কৃষি চাষে কৃষকদের খরচ বেড়েছে। অনেক স্থানে খালের চিহ্ন পর্যন্ত হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে হুমকির মুখে পড়ছে জীববৈচিত্র্য।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জলাবদ্ধতা নিরসনে ৪৭৫ কোটি ২৬ লাখ ১৬ হাজার টাকার এই প্রকল্পে থাকা জলাবদ্ধতা নিরসনে সহায়ক নয়-এমন দুটি বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ গত অর্থ বছরে শুরু হয়। প্রায় ১০ কোটি টাকার ওই দুটি প্রকল্প স্থানীয় জনগণ ও বিএসএফ’র বাঁধার কারণে বন্ধ হয়ে আছে। প্রকল্পের আওতায় সাতক্ষীরা পৌরসভা সদর উপজেলা ও আসপাশের জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ড ১ ও ২ এর আওতায় বেতনা নদী ৪৪ কি: মি: ও মরিচ্চাপ নদীর ৩৭ কি: মি: ড্রেজিং ও পুন:খনন, এই সীমানায় অভ্যন্তরীণ ৮২টি খালের ৩৪৪.২২ কি: মি: পুন:খনন ও সংস্কার, ২১টি স্লুইসগেট সংস্কার/নির্মাণ, ১১৩.১২ কি: মি: বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ সংস্কার, ৪টি আরসিসি ঘাটলা নির্মাণসহ ১.৭০ কি: মি: ঢাল প্রতিক্ষার কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল খায়ের জানান, বরাদ্দের টাকা আগামী ২০২০-২১, ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ অর্থ বছর পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদী এই প্রকল্প পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের কাজ চলমান থাকবে। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে ২০-২১ অর্থ বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকার দুটি প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার মেয়র তাজকীন আহমেদ চিশতী বলেন, বেতনা মরিচ্চাপ নদীসহ সংযোগ খালগুলো খনন ও সংস্কার করা না হবে, ততদিন জলাবদ্ধতার নিরসন হবে না।সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান জানান, সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর আওতায় বেতনা নদীর ৪৪ কিলোমিটার এবং মরিচ্চাপ নদীর ১৭ কিলোমটার পওর বিভাগ-২এর আওতায় বাস্তবায়িত হবে। পাশাপাশি সংযোগ ৮২টি খালের ৬৬টি খাল পওর বিভিাগ-২ এর আওতায় কাজ হবে। সূত্র বলছে গত ১০ বছরে একাধিকবার খননের পরও জলাবদ্ধতা অন্তত দশগুন বেড়েছে। সেক্ষেত্রে ৪৭৫ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে জনগণ কতটা সুবিধা সেটায় এখন দেখার বিষয়।

Please follow and like us:

Check Also

ঈদে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পারায় দিনমজুর স্বামীর আত্মহত্যা

জামালপুরের বকশীগঞ্জে স্ত্রীর জন্য মাংস কিনতে না পেরে চিঠি লিখে আত্মহত্যা করেছেন হাসান আলী (২৬) …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।