স্বাগতম ২০২২  সব সংকটের উত্তরণ হোক নতুন বছরে 

ইবরাহীম খলিল : পুরনোর বিদায় অনিবার্য্য। সেই অনিবার্য্যতার হাত ধরেই এসে গেছে নতুন। তেমনি ২০২১ এর বিদায়ে এসেছে ২০২২। মনোরম দৃশ্যে আঁকা শিল্পীর তুলির আঁচড়ের বর্ষপঞ্জটিকে ছেড়ে দিতে হলো জায়গা। উত্থান-পতন পেরিয়ে অতীতের খাতায় চিরতরে জমা হলো ২০২১ সাল।

শুক্রবার সূর্যাস্ত যেতেই শুরু হয় নতুন বছরের প্রহর গণনা। শুক্রবার রাতে ঘড়ির কাঁটা ১২টা ছুঁতেই বদলে গেলো ঘরের কোণায় ঝুলে থাকা ক্যালেন্ডার। আমাদের দোরগোড়ায় এরই মধ্যে এসে দাঁড়িয়েছে ইংরেজি নতুন বছর। স্বাগতম ২০২২।

২০২১ সালের চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে অসীমের পানে মহাকালের যে যাত্রা, সেখানে সূচিত হলো আরেকটি মাইলফলক। এই যে মহাকালের যাত্রা, সেখানে একেকটি বছর আসে নতুন উদ্দীপনা ও প্রেরণা নিয়ে। ফলে নববর্ষ আসে পুরনো বছরের স্তূপে ভর করে। প্রবাদ আছে পুরনো সকল কর্মকাণ্ডের ফলাফলই বহন করে নতুন বছর। যে কারণে পুরাতন ও নতুন বছরের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আত্মসমালোচনা, আত্মমূল্যায়ন ও আত্মসমীক্ষার সুযোগ ঘটে। নিছক উৎসব ও হুল্লোড়ে মেতে তা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

ইদানিং বাংলাদেশে নববর্ষ বরণের নামে উগ্র উৎসব সীমাহীন বেলেল্লাপনার যোগ হয়েছে। এ কারণে আত্মসমালোচনা, আত্মমূল্যায়ন ও আত্মসমীক্ষার বারোটা বেজে যায় এবং নববর্ষ পালনের উৎসবটি নোংরামি, অশ্লীলতা ও আতঙ্কের বিষয়ে পরিণত হয়। বিশেষত, ইংরেজি নববর্ষ পালনের নামে থার্টিফাস্ট নাইটের সময় যে উদ্দামতা দেখা যায়, তা আইন, সংস্কৃতি, মূল্যবোধকে বিপন্ন করে ছাড়ে।

রাজধানী ঢাকা এবং বড় শহরগুলোর অভিজাত এলাকার একশ্রেণির উৎশৃঙ্খল তরুণ-তরুণী থার্টিফার্স্ট নাইটের নামে উদ্দামতা, উন্মত্ততা ও উচ্ছলতার বল্গাহীন স্রোতে নিজেকে সঁপে দেয়। ঢাকার গুলশান, বনানী, উত্তরা, বারিধারায় সেসময় স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নিরীহ নাগরিকগণ আতঙ্কিত হন তখন। পরদিন সেসব এলাকার রাস্তা থেকে মদ, বিয়ারের খালি বোতল পরিষ্কার করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যান পরিচ্ছন্ন কর্মীগণ। কখনো কখনো নেশাপ্রবণ তারুণ্য সংঘর্ষ ও রক্তপাতের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা-দুর্ঘটনারও জন্ম দেয়।

এই ধরনের লাগামহীন উৎসব ধর্ম, দর্শন, নীতি, নৈতিকতা, আইন ও মূল্যবোধের আলোকে অনাচারের শামিল গর্হিত কাজ। ফলে নববর্ষ বা বর্ষবরণের নামে কোনো ধরনের সীমালঙ্ঘন ও অশ্লীলতাকে ধর্ম-দর্শন নির্বিশেষে শুভবোধসম্পন্ন সভ্য মানুষ সমর্থন করতে পারেন না।

আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষে কোনো উন্মুক্ত স্থানে নাচ, গান, কনসার্টসহ কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না- বলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও অনেকে তা মান্য করেন না। যদিও করোনার মহাপ্লাবন ধেয়ে আসার সময় মাস্ক, স্বাস্থ্যবিধি, সামাজিক দূরত্ব প্রতিপালন করা আইনগত ও স্বাস্থ্যগত দিক থেকে অবশ্যপালনীয় বিষয়। বিশেষ করে করোনার নতুন ও আগ্রাসী ভ্যারিয়্যান্ট ওমিক্রনের ধাবমান উদ্বেগের মধ্যে শুধু বাংলাদেশই নয়, সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশেষজ্ঞগণ সতর্কবার্তা দিয়েছেন। ফলে ইংরেজি বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণে ভিড় এবং উৎসব থেকে বিরত থাকা অতীব জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, ওমিক্রন কিন্তু কোভিডের আগের রূপগুলোর থেকে অনেক বেশি সংক্রামক। অল্প সময়ের মধ্যেই একাধিক মানুষকে সংক্রমিত করার ক্ষমতা রয়েছে ওমিক্রনের।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, কড়াকড়ি এবং বিধিনিষেধের মধ্যেই রাজধানীর তারকা হোটেলগুলোতে ইংরেজি নতুন বছর বা থার্টিফার্স্ট নাইট উদ্যাপন করতে নেয়া হয়েছে নানা প্রস্তুতি। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজন। অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেয়া হয়েছে হোটেলের হল, বলরুম। হোটেলগুলোতে সন্ধ্যা থেকে মাঝরাত পর্যন্ত ডিজে ড্যান্স পার্টি, ককটেল পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিজাত ক্লাবগুলোতে পার্টির জন্য ভাড়া করা হয় ডিজে গার্লদের। হোটেলগুলোতে ডিজে পার্টি ছাড়াও নানা জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া এসব আয়োজন চলে ভোররাত পর্যন্ত। হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের অনুষ্ঠান অর্গানাইজার মিডিয়াকে বলেছেন, ‘থার্টিফার্স্ট উপলক্ষে ক্যাফে বাজারের স্পেশাল ডিনার, স্পেশাল নাইট মিউজিক উইথ বার-বিকিউ ডিনারের ব্যবস্থা করা হয়। নানা আয়োজন করা হয় ওয়েস্টিন হোটেলে, রেডিসন ব্লু ঢাকায়, হোটেল লা মেরিডিয়ানে।

২০২১ সালকে বিদায় জানিয়ে ২০২২ সালকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত বিশ্ববাসী। কিন্তু করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে ইংরেজি নববর্ষ-২০২২ সালকে ঘিরে নেই তেমন একটা আয়োজন। অনেকটা নিরানন্দের মধ্য দিয়ে আরও একটি বছর শুরু করতে যাচ্ছে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ।

বিশ্বে করোনা শনাক্তের রেকর্ড এখন আকাশচুম্বী। অতি সংক্রামক করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে কিছু দেশ নববর্ষ উদযাপন আয়োজন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। অনেক দেশ এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছে নববর্ষ উদযাপনের আয়োজন নিয়ে। কারণ যতই নতুন বছর শুরুর সময় গড়াচ্ছে ততই করোনা সংক্রমণের খবর আসছে বিশ্বজুড়ে। বলা চলে ওমিক্রনের কারণে ভেসতে যাচেছ নববর্ষ উদযাপন।

এদিকে দেশে নানাবিধ সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সবকিছুতেই। গণতন্ত্রহীনতা, রাজনৈতিক অসহিষ্ণুতা, মানবাধিকরের লঙ্ঘন, দুর্নীতি-লুটপাট, সুশাসনের অভাব যেন আষ্টেপৃষ্টে রেখেছে পুরো জাতিকে। বিজয়ের পঞ্চাশ বছরেও জাতি মুক্তি পায়নি দু:শাসন থেকে। ৫১তম বছরে এসে এসব থেকে পরিত্রাণ চায় দেশের মানুষ। এছাড়া নতুন বছর সমৃদ্ধির প্রতীক হয়ে আসুক এই প্রত্যাশা সবার।

Please follow and like us:

Check Also

বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ৮ জলদস্যু গ্রেফতার

বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ অপহরণে যুক্ত ৮ জলদস্যুকে আটক করেছে সোমালিয়ার পুলিশ। রোববার জাহাজটিকে মুক্তি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।