শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সিরাজপুর গ্রামে বিবাদমান দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে মোঃ রহমত মল্লিক নামের (৫২) এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলর ভুরুলিয়া গ্রামের হরিনাগাড়ী গৌরিপুর গ্রামের মৃত দেরাজতুল্লাহ মল্লিকের ছেলে। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে উপজেলার সিরাজপুর বাজারে এক সালিশি বৈঠক শেষে দু’পক্ষ পুনরায় বাদদানুবাদে সুত্র ধরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এসময় দু’পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ১২/১৪ জন আহত হয়ে শ্যামনগর হাসপাতালে ভর্তি হয়। একপর্যায়ে রাত বারটার দিকে মোঃ রহমত আলরি মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করে চিকিৎসকরা। ভুরুলিয়া ইউনিয়নের একটি সরকারি খালের পানি নিয়ে বিরোধর সুত্র ধরে দুই পক্ষের মধ্যে ঐ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এঘটনায় নিহত রহমত মল্লিকের ভাই মোঃ মিজানুর রহমান বাদি হয়ে শ্যামনগর থানায় মামলা করেছে। লুৎফর রহমানের মৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশ আব্দুল হামিদ ও নজরুল রহমান নামের দু’জনকে আটক করেছে। তারা যথাক্রমে ভুরুলিয়া ইউনিয়নের কুলটুপুর গ্রামের লুৎফর রহমান ও হরিনাগাড়ী গৌরিপুর গ্রামের ইমাম মল্লিকের ছেলে। যদিও স্থানীয় এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি আটক ব্যক্তিদ্বয় সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িত নয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানায় শ্রীফলতলা মধুসুদনপুর মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির নামে ইজারা নিয়ে সরকারি মালিকানাধীন ঐ খালের পানিব্যবহার করে স্থানীয় শতাধিক কৃষক তদসংলগ্ন জমিতে বোরা ধানের চাষবাদ করে। সরকারি ঐ খালের পানি ব্যবহার নিয়ে প্রতি বছর বোরা মৌসুমের শুরুতে দুই গ্রামের কৃষকদের মধ্যে উত্তেজনারও সৃষ্টি হয়। এবারের বোরা মৌসুমের শুরুতে বরাবরের মত দুই গ্রামের কৃষকদের মধ্যে খালের পানি নিয়ে উত্তেজনার তৈরী হয়। এক পর্যায়ে দু’পক্ষ স্থানীয় ভুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করলে তিনি শুক্রবার বিকালে সিরাজপুর বাজারে মিমাংসা বৈঠকে দু’পক্ষকে হাজির হওয়ার কথা জানিয়ে দেন।

জানা গেছে শুক্রবার বিকালে দু’পক্ষের উপস্থিতিতে সিরাজপুর বাজারে সরকারি ঐ খালের পানি নিয়ে দু’পক্ষের দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হয়। বৈঠক শেষে চেয়ারম্যানসহ অন্যরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করার পুর্ব মুহুর্তে মধুসুদনপুর গ্রামের মৃত নুরালী গাজীর ছেলে শরিফুল ইসলাম, সফিকুল ইসলামসহ তাদের লোকজন খালের ইজারাদার হরিনাগাড়ী গৌরীপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামর উপর চড়াও হয়। এসময় সিরাজুল ইসলামের ভাই সাথে থাকা কৃষকরা ইজারাদার সিরাজুলকে উদ্ধারে এগিয়ে গেলে দু’পক্ষে সংঘর্ষ বাঁেধ।
এক পর্যায়ে দু’পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়লে মিয়ারাজ, আকরাম, দেলোয়ার, সিরাজুল রেজাউল ইসলাম, আইয়ুবআলী, সাইফুল, জামাত আলীসহ ১২/১৪ জন আহত হয়। আহতদের উদ্ধার করে শ্যামনগর হাসপাতালে নেয়ার পর রাত ১২টার দিকে খালের ইজারাদার সিরাজুলের ভাই রহমত মারা যায়।
সরকারি ঐ খালের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা আহত সফিকুল ইসলাম জানান চেয়ারম্যানের নির্দেশ মেনে সিরাজপুর যেয়ে বৈঠকে অংশ নেয়ার এক পর্যায়ে সিরাজুল ও তার লোকজন তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১০/১২ জন আহত হয়।

নিহতের ভাই মিজানুর রহমান জানান বৈঠক শেষে সফিকল ও তার লোকজন উত্তেজিত হয়ে হরিনাগাড়ী গৌরিপুর এলাকার লোকজনকে মারধর শুরু করে। এসময় ারাত্বক আহতদের কয়েকজনকে শ্যামনগর হাপাতালে নেয়ার পর তাার ভাইয়ের মৃত্যু হয়।
৫ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হোসেন আলী জানায় বিবামান দুই পক্ষের ঝামেলা মিমাংসা করার পর হঠাৎ দুই পক্ষ উত্তেজিত হয়ে সংঘর্ষে জড়লে বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরবর্তীতে তাদেরই একজনের মৃত্যু হয়।

এবিষয়ে ভুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ জাফরুল আলম বাবু জানান, খালের পানি নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধপুর্ন সমস্যা সমাধানের পর মুখ বলাবললির জেরে দু’পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আহতদের কয়েকজনকে হাসপাতালে নেয়ার পর রহমত আলীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
শ্যামনগর থানার অফিসার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) কাজী শহিদুল ইসলাম জানান, সিরাজপুর বাজারের সংঘর্ষের ঘটনায় একজনের মৃত্যুর পর একটি মামলা হয়েছে। ইতিমধ্যে ঐ ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার ও মৃতদেহ পোষ্ট মটেমের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।