অভয়নগরে তীব্র শীত, গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, ঘন কুয়াশায় জনজীবনে দুর্ভোগ

সব্যসাচী বিশ্বাস (অভয়নগর) যশোর:

যশোর জেলার অভয়নগর উপজেলায় ঘন কুয়াশা, তীব্র শীত জনজীবন বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। গত ২২ ও ২৩ জানুয়ারি ২০২২ শনি ও রবিবার সকালে সূর্যের দেখা মেলেনি। মাঝে মাঝে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ফলে শহর ও গ্রাম-গঞ্জের জনজীবন বির্পযস্ত হয়ে পড়েছে। তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও বাতাসের হাওয়ায় রাস্তাঘাটে যানবাহন ও মানুষ চলাচল কমে গেছে। হাতে কাজ না থাকায় অভাবী মানুষের ঘরে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। শীতবস্ত্রের অভাবে হতদরিদ্র মানুষগুলো চরম কষ্টে ছেলে মেয়েদের নিয়ে দিনাতিপাত করছে।

তবে এ উপজেলা শীর্তাতের মাঝে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কম্বল বিতরণ করেছে। তীব্র শীতের কারণে গ্রামাঞ্চল সহ ভবদহে পাড়ের মানুষ পড়েছে সবচেয়ে বেকায়দায় । তাছাড়া ভৈরব নদের পাড়ে থাকা মানুষসহ পশু পাখির জীবন চরম ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সেই সাথে বাড়ছে বিভিন্ন প্রকারের শীতজনিত রোগবালাই। দিনরাত তীব্র শীত ঘনকুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। টানা কয়েকদিন সকাল ও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে কুয়াশায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় গোটা এলাকা। ২২ জানুয়ারি ২০২২ শনিবার শীতের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পেয়ে জনজীবন বির্পযস্ত করে তুলেছে।

সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশার ঘনত্ব বাড়তে থাকে রাত ১০টার পর ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় পুরো এলাকা। একই অবস্থা শনিবার, রবিবার সকালে ও সারা দিন হিমেল হাওয়া আর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে রাস্তা ঘাট ছিল ফাঁকা। ফলে নওয়াপাড়া চুড়িপট্টি, কাপড়পট্টি, সোনাপট্টি, আকিজ সিটি মার্কেট সহ উপজেলার বিপণি-বিতান, রেলওয়ে স্টেশন, বাস স্টেশন, অটোরিকশা স্ট্যান্ডসহ কোলাহলপূর্ণ স্থানগুলোতে লোকজন নাই বললেই চলে। কাজের তাগিদে বের হওয়া সাধারণ মানুষ শীতের কাপড় গায়ে জড়িয়ে সারাদিন কাজ করতে দেখা গেছে। মহাসড়কে যানবহন চলাচলে লাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। কুয়াশা আর তীব্র শীতের কারনে হত-দরিদ্র মানুষগুলো আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণ করছে। এলাকায় ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায় গ্রাম। ফুটপাতের সবজি, মাছ, ফলমূল ও শীতের কাপড় বেচা-কেনা না থাকায় অনেক ব্যবসায়ীদের দোকান গুছিয়ে বাড়ি চলে যেতে দেখা গেছে। তাছাড়াও রিকশাচালক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরাও ভাড়ার আশায় আর বসে থাকছেন না।

এ বিষয়ে স্টেশন এলাকার রিকশা চালক শহিদুল ফকির বলেন, শীতের কারণে শনিবার থেকে রবিবার ভোর থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত রিকশা চালানো সম্ভব হয়নি। সবজি বিক্রেতা আলমগীর হোসেন, মাছ বিক্রেতা আতাউর গাজী, মিজানুর রহমান, কুয়াশার কারণে মানুষজন বের হচ্ছে না। এ কারণে অর্ধেক সবজি ও মাছ বিক্রি হয়নি। কম মূল্যে আড়তে বিক্রয় করে চলে এসেছি। থ্রি-হুইলার চালক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, সকাল ৭টার দিকে প্রচুর কুয়াশা পড়েছে। এক হাত দূরেও কিছু দেখা যাচ্ছিল না। যাত্রী নিয়ে ধীরে গাড়ি চালাতে হয়েছে। নৌ বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, কুয়াশার কারণে সকালে লাইট জ্বালিয়ে ছোট বড় জাহাজ লোড আনলোড করছে।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ আলিমুর রাজিব বলেন, ঘন কুয়াশা, তীব্র শীতের কারণে শ্বাসকষ্ট, কাশিঁসহ বেশ কয়েকজন হাসপাতালে সেবা নিতে এসেছে। তাছাড়ও ১০ জনের করোনা স্যাম্পল ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। আমরা রোগীদের এ বিষয়ে পর্রামশ দিয়ে যাচ্ছি। বিআইডব্লিউটিএ নওয়াপাড়া শাখার কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ জানান, রাতে নৌ-যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। কুয়াশার কারণে ভোর বেলায় নৌ-যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। কুয়াশা কেটে গেলে নৌ-যান চলাচল স্বাভাবিক হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা কর্মকর্তা কৃষিবিদ গোলাম ছামদানী বলেন, বাতাসের আদ্রতা প্রায় ৯০ থেকে ৯২ শতাংশ হওয়ায় কুয়াশার এত ঘনত্ব বেড়েছে। আবহাওয়ায় উচ্চ বলয় চাপের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাপমাত্রা সর্বনিম্ন ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তবে জেলার কোথাও কোথাও তা ৮ ডিগ্রী তাপমাত্রা রয়েছে। আলু ও সবজি চাষিদের কুয়াশার কারণে আমরা পরার্মশ দিয়েছি। যে কারণে আলু ও সবজিতে কোন প্রকার ক্ষতি না হয়। মাঝে মাঝে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি ক্ষতি করছে পাতাকপি, ফুলকপি, পাকার অপেক্ষায় থাকা সরিষার ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।

Please follow and like us:

Check Also

রাজাপুর আল- হেরা জামে মসজিদের কমিটি গঠন

সাদী হাসান, চাম্পাফুল প্রতিনিধিঃ কালীগঞ্জ উপজেলা রাজাপুর আল- হেরা জামে মসজিদে নতুন কমিটি গঠন করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।