জালিয়াতির মাধ্যমে ডুপ্লিকেট সফটওয়্যার ব্যবহার করে শেয়ারবাজারের দুই শতাধিক বিনিয়োগকারীর প্রায় শত কোটি টাকা লুটে নিল তামহা সিকিউরিটিজ। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা এখন দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। ইতোমধ্যে হাউসটির লেনদেন বন্ধ করে দেওয়া হলেও টাকা আদায়ের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে এসব কার্যক্রমের জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) গাফিলতিকে দায়ী করছেন ভুক্তভোগীরা।
বুধবার রাজধানীর পল্টনের আলরাজী কমপ্লেক্সে ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরামের (সিএমজেএফ) অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন- বিনিয়োগকারী ফখরুল ইসলাম, মুজিবুর রহমান এবং রওশনারা হোসেন। আরও উপস্থিত ছিলেন- বিনিয়োগকারী নজরুল ইসলাম, আবু তাহের, সোহরাব হোসেন, সোহেল, বাবুল, রুহুল হোসেন এবং শাহজাহান প্রমুখ।
বিনিয়োগকারীরা বলেন, সম্প্রতি তামহা সিকিউরিটিজের মালিক ডা. হারুন জালিয়াতির মাধ্যমে ডুপ্লিকেট সফটওয়্যার ব্যবহার করে সব শেয়ার বিক্রি করে দেন। তবে তিনি বাঁচার জন্য অফিস স্টাফদের ওপর দোষ দিচ্ছেন। তার হাউসে দুর্নীতি হয়েছে বলে নিজেও তিনি বিএসইসিতে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি নিজেই মূল দুর্নীতিবাজ বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের।
পরে ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর হাউসটির ট্রেক (লেনদেনের অধিকার) স্থগিত করে দেয় বিএসইসি। ইলেট্রনিক পদ্ধতি শেয়ার সংরক্ষণকারী কোম্পানি সিডিবিএলে যোগাযোগ করলে জানানো হয় আমাদের বিও হিসাবে কোনো শেয়ার নেই। জালিয়াতির বিষয়টি গোপন রাখতে দুই শতাধিক বিনিয়োগকারীদের মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করে তামহা সিকিউরিটিজ। এরপর ডুপ্লিকেট সফটওয়্যার ব্যবহার করে আমাদেরকে ক্রয়-বিক্রয়ের এসএমএস ও মেইলে প্রতিদিনের হালনাগাদ তথ্য দিত। এ কারণে তাদের জালিয়াতির বিষয়টি বোঝা কঠিন হতো। সিকিউরিটিজ হাউসটির মালিকসহ তার দুই ভাই-বোন প্রায় শত কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়ে যায়।
বিনিয়োগকারীরা বলেন, তাদের আবেদন ছাড়া সিডিবিএল কীভাবে মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করল- তা রহস্যজনক। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মনিটরিংয়ের অভাবে তারা সবকিছু হারিয়েছেন বলে অভিযোগ তাদের। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ঠিকমতো মনিটরিং করলে এ ধরনের জালিয়াতি ঘটত না বলেও উল্লেখ করেন ভুক্তভোগীরা।
বিনিয়োগকারীরা বলেন, আমরা বিএসইসির চেয়ারম্যানকে বলেছি- অর্থ আত্মসাতকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শেয়ার ফেরতের উদ্যোগ নিন। দুই শতাধিক বিনিয়োগকারী তিন মাস ধরে পথে পথে ঘুরেছি। কখনো বিএসইসি আবার কখনো ডিএসইতে। কেউ টাকা ফেরতের আশ্বাস দিচ্ছেন না। করোনার মধ্যে সবকিছু হারিয়ে আমরা অসহায়।
ভুক্তভোগী ফখরুল ইসলাম বলেন, কোম্পানি থেকে শুরুতে ১৫ দিনের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।
ভুক্তভোগী মজিবুর রহমান বলেন, ১৩ লাখ টাকা এই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছি। এগুলো চাকরির পেনশনের টাকা। এখন কোনো টাকা নেই। এখন আমার সংসার চালাতে সমস্যায় পড়েছি। আমার স্ত্রী খুবই অসুস্থ। তার চিকিৎসাও হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পেয়ে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর তামহা সিকিউরিটিজের বাণিজ্য বন্ধ করে ডিএসই। এরপর বিএসইসির অনুরোধে গত ৫ জানুয়ারি হাউসটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশিদসহ প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।