সাতক্ষীরায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট: ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে ২ থেকে ১০ মিটার

আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ায় সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে পুকুর ও খাল শুকিয়ে গেছে। পানির স্তর নেমে যাওয়াতে অগভীর নকুপগুলোতে পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি খাবার ও গৃহস্থালির কাজ, সেচ, কৃষি ও শিল্প-কলকারখানায় বেড়েছে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার। এবার শুষ্ক মৌসুমে আবহাওয়া ও জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী লক্ষ্যমাত্রার ৮০ শতাংশের কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্বাভাবিক স্তর নিচে নেমে গেছে দুই থেকে ১০ মিটার। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে দেশের উপকূলীয় এলাকার পানিতে লবণাক্ততা বেড়েছে। কোথাও কোথাও দেখা দিয়েছে খরাও। সংশ্লিষ্ট এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খরা ও পানির স্তর স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে নিচে নেমে যাওয়ায় এবার দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির হাহাকার চলছে। পানি সংকট প্রবণ এলাকার মানুষ নিরুপায় হয়ে বিশুদ্ধ ও লবণাক্ত পানি পান করায় ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, ফাঙ্গাল ইনফেকশন ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ছাড়া নরম মাটি এলাকার ভূমি দেবে যাওয়া ও ফাটল ধরতে পারে বলেও আশঙ্কা আছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, বাংলাদের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বছরের মার্চ মাসে ২ হাজার ১১৫ মিলিমিটার এবং এপ্রিল মাসে ৫ হাজার ৪৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়া জরুরি। ২০২১ সালে মার্চ মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৮৪৪ মিলিমিটার, যেটা স্বাভাবিকের চেয়ে ৬০ শতাংশ কম হয়েছিল। আর ওই বছর এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত হয়েছিল ৬ হাজার ৫৫৭ মিলিমিটার, যেটা স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি ছিল। সে কারণে গত বছর পানির সংকট অনেকাংশে কম ছিল। কিন্তু চলতি বছরে এখনো বৃষ্টিপাতের পরিমাণ তেমন দেখা মেলেনি। পানি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, শুষ্ক মৌসুমে দেশের ৭৫ শতাংশ এলাকার ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ২-৩ মিটার নিচে নেমে যায়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এখনো সারা দেশের গৃহস্থালি ও খাবার পানির ৯৪ শতাংশ চাহিদা পূরণ হচ্ছে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে। এ উৎস থেকে গ্রাম এলাকায় ৯৯ শতাংশ ও ৮০ শতাংশ শহর এলাকায় পানি সরবরাহ করা হয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার কারণে চলতি মৌসুমে দেশের ১৮ শতাংশ নলকূপের পানি উত্তোলনে সমস্যা হয়েছে।
এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকার গভীর ও অগভীর ভূ-স্তরের মাত্রাতিরিক্ত আয়রন ও আর্সেনিকের উপস্থিতি এবং উপযুক্ত ভূ-গর্ভস্থ পানির আধারের দুষ্প্রাপ্যতার কারণে নিরাপদ পানিপ্রাপ্তি বিঘিœত করে। উপকূলীয় এলাকায় পলিমাটির আধিক্য ও গভীর নলকূপ স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অঞ্চলগুলোতে ভূ-উপরিস্থ পানি ব্যবহারের ওপর জোর দেয়া হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শুষ্ক মৌসুমে খরা, অনাবৃষ্টি ও বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের কারণে পুকুর ও খাল শুকিয়ে যাওয়ায় চলতি বছরে উপকূলীয় এলাকার বেশির ভাগ জায়গাতে মানুষ সুপেয় পানির চরম কষ্টে পড়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি,কালিগঞ্জও তালা,খুলনার দাকোপ, কয়রা, বাগেরহাটের মোংলা, শরণখোলা ও মোরেলগঞ্জ এলাকায় পানযোগ্য পানি খুবই দুষ্পাপ্য। এসব এলাকার বেশির ভাগ উপজেলায় গভীর নলকূপ কার্যকর নয়। এখানে বসবাসরত মানুষ বর্ষার মৌসুমের বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে ৩ থেকে ৪ মাস খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহার করে।
স্বল্পসংখ্যক পুকুরই তখন হয়ে ওঠে সুপেয় পানির প্রধান উৎস। এসব এলাকার সীমিত সংখ্যক পুকুর, সিডর, আইলা ও আম্ফানের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ জলাশয় ও দীর্ঘস্থায়ী খরার কারণে এ বছর পানি সরবরাহ ব্যবস্থা জটিল আকার ধারণ করেছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী বলেন, শুষ্ক মৌসুমে নদ-নদীতে পানি না থাকা এবং ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া বাংলাদেশের নৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছর বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে দক্ষিণাঞ্চলসহ বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এ সমস্যা নিরসনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

 

Please follow and like us:

Check Also

কলারোয়া  উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি আবুল কাশেমের ইন্তেকালঃ বঙ্গবন্ধু বিশেষ সুপারিশে  যিনি কারা মুক্ত হন

সাতক্ষীরা সংবাদদাতাঃ কলারোয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা জামায়াতের প্রথম সভাপতি বাংলাদেশ পরিবহন মালিক সমিতির …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।