মানবতাবিরোধী অপরাধ: সাতক্ষীরা জামায়াতের সাবেক এমপি খালেকসহ ২ জনের মৃত্যুদণ্ড

 স্টাফ রিপোটার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সাবেক সদস্য, সাতক্ষীরা জেলার সাবেক আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মন্ডলসহ দুই জনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অপর আসামি হলেন- পলাতক খান রোকনুজ্জামান।

আজ বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও রেজিয়া সুলতানা চমন। আসামিদের পক্ষে ছিলেন এডভোকেট আব্দুস সুবহান তরফদার ও গাজী এম এইচ তামিম। এ মামলায় মোট আসামি ছিলেন চারজন। অপর দুই আসামি আব্দুল্লাহ হেল বাকী ও জহিরুল ইসলাম টেক্কা খান বিচার চলাকালে মারা যান।

২০১৮ সালের ৫ মার্চ এ মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়। ২০১৭ সালের ১৯ মার্চ এ মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ছয়জনকে হত্যা, দু’জনকে ধর্ষণ, ১৪ জনকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ।

২০১৫ সালের ১৬ জুন ভোরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খলিলনগর মহিলা মাদরাসা থেকে আব্দুল খালেক মন্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই বছরের ২৫ আগস্ট খালেক মন্ডলের বিরুদ্ধে সাতক্ষীরায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলার মধ্যে শহীদ মোস্তফা গাজী হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখান ট্রাইব্যুনাল।

মাওলানা আবদুল খালেকমন্ডল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে সাতক্ষীরা সদর আসন দুইবার নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার চেয়ারম্যান হিসেবেও নির্বাচিত হয়েছিলেন। এর আগে তিনি সাতক্ষীরা সদরের বৈকারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মাওলানা আবদুল খালেক মন্ডল সাতক্ষীরা আগরদাড়ী কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল খালেক মন্ডলকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনিসহ আটক সকল জামায়াত নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান আজ বিবৃতি দিয়েছেন।

রায় ঘোষণার পর জামায়াত নেতা আবদুল খালেক মণ্ডলের পক্ষে অন্যতম আইনজীবী অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, মাওলানা আবদুল খালেক মণ্ডল একজন জনপ্রিয় নেতা। তার বিরুদ্ধে দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে আমরা উচ্চ আদালতে যাব।

——————০—————————-

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাতক্ষীরা জেলার সাবেক আমীর, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সাবেক সদস্য, ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলায় নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান এবং জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য জনাব আব্দুল খালেক মন্ডলকে মিথ্যা অভিযোগ, দলীয় সাক্ষী ও প্রতিহিংসামূলক তদন্ত ইত্যাদির মাধ্যমে সরকার যে সাজানো বিচারের আয়োজন করেছিলো, তাতে তাঁর বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় প্রদান করা হয়েছে। তিনি যদি এতোটাই অপরাধী হয়ে থাকতেন, তাহলে তাঁর এলাকার মানুষই তাঁকে সবচেয় বেশি জানার কথা। এরকম একজন লোক কিভাবে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলায় এবং জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়?
এটি দিবালোকের মত স্পষ্ট, ঈমানের ওপর অবিচল থেকে দ্বীন কায়েমের সংগ্রামে যার অংশগ্রহণ মেধা, যোগ্যতা, সততা ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের মোকাবেলায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ তাঁকে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়ে ষড়যন্ত্রের পথ বেছে নিয়েছে।
দুনিয়ার এই বিচারই চূড়ান্ত বিচায় নয়। আসল বিচারের একটি জায়গা ব্যক্তিগতভাবে সকল মানুষের জন্যই নির্ধারিত আছে। সেই বিচারে যিনি মহান প্রভুর দরবারে জিতে যাবেন, তিনিই জান্নাতি হাসি হাসবেন।
ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, জামায়াত নেতৃবৃন্দকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করে তাদের অন্তরে লালিত ইসলামের সুমহান আদর্শকে হত্যা করা যায়নি এবং যাবেনা। নেতা-কর্মীদের সীমাহীন ত্যাগ ও কুরবানীর বিনিময়ে প্রিয় দেশের জমিন ইসলামের জন্য ক্রমান্বয়ে উর্বর হয়ে উঠছে।
গভীরভাবে বিশ্বাস করি, ইসলামের সুমহান আদর্শ ইনশাআল্লাহ এ দেশে একদিন প্রতিষ্ঠা পাবেই। হয়তোবা সেদিন বেশি দূরে নয়।
Please follow and like us:

Check Also

ফরিদপুরে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ১৩

ফরিদপুরের কানাইপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।