মোদি কেন মোমেনকে সময় দিলেন না, প্রশ্ন কংগ্রেসের পত্রিকায়

গত মাসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন তার সঙ্গে দেখা করেননি—সেই প্রশ্ন তুলে দিল্লির বিজেপি সরকারকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেছে বিরোধী দল কংগ্রেসের ঘনিষ্ঠ একটি পত্রিকা।

‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিবন্ধে ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক ও কলামিস্ট এস এন এম আবদি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘দিল্লি সফরে আসা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদোল্লাহিয়াকে যেখানে নরেন্দ্র মোদি সময় দিতে পারলেন, তার মাত্র দশ দিনের মাথায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে কেন তিনি দেখা করতে পারলেন না?’

‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধ

‘ভারত সফররত কোনও বিদেশি অতিথির সফরকে দিল্লি কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, তার মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তিনি সাক্ষাৎ পাচ্ছেন কি না! সেই বিচারে এই প্রশ্নটাও তাই উঠছে যে ভারতের পররাষ্ট্রনীতির অগ্রাধিকারের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান আসলে কোথায়!’—ওই নিবন্ধে মন্তব্য করেছেন এস এন এম আবদি।

ভারতীয় গণতন্ত্রে শাসক ও বিরোধী দলের মধ্যে যতই সংঘাত থাক, সাধারণত পররাষ্ট্রনীতির বিষয়গুলোতে একটা ঐকমত্য থাকে – বিরোধী দলগুলোও বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সরকারের প্রকাশ্য সমালোচনা থেকে বিরত থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে সম্পর্ক এতটাই তিক্ত হয়ে উঠেছে যে বিরোধীরা মোদির পররাষ্ট্রনীতিকে খোলাখুলি আক্রমণ করছেন।

বিশেষত বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বর্তমান বিজেপি সরকারের নীতির কারণেই যে ‘বন্ধুত্বে ফাটল’ ধরছে বলে তারা মনে করে – কংগ্রেস তা তাদের ওয়েবসাইটে গত কয়েক বছর ধরেই ঘোষণা করে রেখেছে। এখন তাদের দলের ‘আনঅফিশিয়াল মুখপত্রে’ আবারও মোদির বাংলাদেশ নীতির কড়া সমালোচনা করে তারা বুঝিয়ে দিলো—এই প্রশ্নটি নিয়ে তারা সরকারকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি নয়।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন ভারত-বাংলাদেশ জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি এসেছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। তিন দিনের ওই রাষ্ট্রীয় সফরে তিনি ভারতে তার কাউন্টারপার্ট এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও দেখা করেছিলেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও দেশের উপরাষ্ট্রপতি ভেঙ্কাইয়া নাইডুর সঙ্গেও। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে তার কোনও বৈঠক হয়নি।

এস এন এম আবদি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, এই সফরের ঠিক দশ দিন আগে দিল্লিতে আসেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আবদোল্লাহিয়া। তিনি কিন্তু দিল্লির তথাকথিত ‘বিগ থ্রি’, অর্থাৎ মোদি-জয়শঙ্কর-ডোভাল সবার সঙ্গেই দেখা করতে পেরেছিলেন।

এস এন এম আবদিএস এন এম আবদি

যদিও সম্প্রতি, অনেক ইস্যু ইরান ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও সংযত ছিল বাংলাদেশ। এস এন এম আবদির মতে, ‘আর কিছু না-হোক, শুধু বাংলাদেশ সরকারের এই সংযত প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্যই নরেন্দ্র মোদির উচিত ছিল আবদুল মোমেনের সঙ্গে দিল্লিতে দেখা করে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানানো।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশকে এই ছোট সৌজন্যটুকু দেখালে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ত না। আমি জানি না আড়ালে দিল্লি কী করে?’

বস্তুত, একে আবদুল মোমেনের পূর্বসূরি এ এইচ মাহমুদ আলী যখন জেসিসি বৈঠকে যোগ দিতে ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে এসেছিলেন, তখন প্রধানমন্ত্রী মোদি কিন্তু তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। শুধু তাই নয়, নরেন্দ্র মোদির অফিশিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া পেজগুলো থেকেও সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিও পোস্ট করা হয়েছিল। পাশাপাশি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করও যতবারই ঢাকা গেছেন, প্রতিবারই তিনি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এসেছেন।

কংগ্রেসের বিদেশ সেলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা ও এমপি এদিন বাংলা ট্রিবিউনকে পরিষ্কার বলেছেন, কূটনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে দল হয়তো সরাসরি একথাগুলো বলতে পারছে না – কিন্তু ভারতের বাংলাদেশ নীতির সমালোচনা করে এস এন এম আবদি নিবন্ধে যে কথাগুলো লিখেছেন সেটাই কংগ্রেস শতভাগ বিশ্বাস করে।

আর ন্যাশনাল হেরাল্ড পত্রিকাটিও যে কংগ্রেসের অঘোষিত মুখপত্র, এ কথাও সুবিদিত। প্রসঙ্গত, পণ্ডিত জহরলাল নেহরুর প্রতিষ্ঠিত এই পত্রিকাটি নতুন রূপে প্রকাশ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, আর সেই পত্রিকার সম্পত্তি বেচাকেনার সূত্র ধরেই তাকে এখন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি-র জেরার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

নিবন্ধকার এস এন এম আবদি-ও ভারতের শ্রদ্ধেয় ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের মধ্যে অগ্রগণ্য। ১৯৮০ সালে বিহারের ভাগলপুরে বন্দিদের চোখে পুলিশের অ্যাসিড ঢেলে অন্ধ করে দেওয়ার খবর তিনিই ‘ব্রেক’ করেছিলেন, যার জন্য জাতিসংঘ তাকে পুরস্কৃতও করেছিল।

ভারতের বহু বিখ্যাত পত্র-পত্রিকায় তিনি কাজ করেছেন, ‘দ্য আউটলুক’ ম্যাগাজিনের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন দীর্ঘকাল। বাংলাদেশ প্রসঙ্গেও তিনি ভারতের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন।

২০১৯ সালের মে মাসে এস এন এম আবদির এরকমই একটি লেখা বেশ আলোড়ন ফেলেছিল, যাতে তিনি বলেছিলেন নরেন্দ্র মোদির উচিত হবে ফোন করে প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে অনুরোধ করা, যাতে (তখন জেলে বন্দি) বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।

Check Also

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেফতার

প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ইয়াছিন আলীকে গ্রেফতার করা …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।