সাতক্ষীরার কিংবদন্তি সাংবাদিক সুবাস চৌধুরীর  অন্তোষ্টিত্রিয়া সম্পন্ন 

সাতক্ষীরার সাংবাদিকতার প্রাণপুরুষ, জীবন্ত ডায়েরী খ্যাত সুভাষ চৌধুরী (৭৩)। বুধবার বেলা ১২ টায় সাতক্ষীরা শহরের রসুলপুর মহাশসানে তার অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়েছে। এর আগে সকাল সাড়ে দশটায় তার মরদেহ আনাহয় সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে। সেখানে তাঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য দলে দলে জড়ো হয় সাংবাদিক, রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার শতশত মানুষ।
তিনি গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা শহরের কাটিয়া সরকার পাড়াস্থ তার নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সুভাষ চৌধুরী এনটিভির সাতক্ষীরার স্টাফ করেসপনডেন্ট ও দৈনিক যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এনটিভির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলীসহ এনটিভি পরিবার, সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব, ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন।
সুভাষ চৌধুরীর পুরো নাম চৌধুরী সুভাষ চন্দ। তিনি ১৯৫০ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারী খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের দেড়ুলী গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম সুধীর কুমার চৌধুরী। মাতা রাধা রানী চৌধুরী।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সুভাষ চৌধুরী নির্ভুল ও তথ্য সমৃদ্ধ সংবাদ পরিবেশনে এই জেলায় তাঁর সমসাংবাদিক তৈরী হয়নি এখনো। সংবাদকে নির্ভুল ও তথ্য সমৃদ্ধ করতে সাতক্ষীরার এপ্রান্ত থেকে ছুটে গেছেন অপর প্রান্তে। ঘটনা স্থল পরিদর্শন এবং সঠিক তথ্য সংগ্রহ করেই তবে সংবাদ প্রকাশ করা তাঁর সবচেয়ে বড় গুন ছিলো।
সাতক্ষীরার বেসরকারি পল্লীমঙ্গল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজী বিষয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি ১৯৭৪-৭৫ সালে দৈনিক বাংলা পত্রিকায় সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে দৈনিক ভোরের কাগজ, সপ্তাহিক বিচিত্রাসহ দেশের বহু জাতীয় দৈনিক প্রত্রিকায় সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন। ২০০৪ সালে বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভিতে যোগদান করেন তিনি। বর্তমানে এনটিভি ছাড়াও জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের জেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তাঁর বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ ও খুরধার উপসম্পাদকীয় লেখনীর মাধ্যমে সাতক্ষীরার একাধিক আঞ্চলিক দৈনিক প্রত্রিকা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তাঁর প্রায় ছয় দশকের সাংবাদিকতা জীবনে সাফল্য যেমন এসেছে বহু ক্ষেত্রে, তেমনই কোন কোন ক্ষেত্রে এসেছে ব্যর্থতাও। টেলিভিশন-ইন্টারনেটের যুগেও তবু সাংবাদিকতার ঘরানা পরিবর্তন করেননি তিনি। মানুষের সহজবোধ্য ভাষায় সাবলীল সংবাদ পরিবেশনা তত্ত্বব্যাখ্যার এই প্রবণতাই আজ জাতীয় ও সাতক্ষীরার আঞ্চলিক অনেক সংবাদপত্র ও অন্যান্য পত্রিকার প্রকাশিত তাঁর সংবাদ জনপ্রিয়তার কারণ।
তিনি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও সাতক্ষীরা সাংবাদিক ঐক্যের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি। নিপিড়ীত সাংবাদিক সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে ও অপরাধ, অপশক্তি, দুর্নীতি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাহসীকতার সাথে দুর্বার প্রতিরোধ করে গেছেন তার লেখনীর মাধ্যমে।
ন্যায়, নীতি,সত্য, নিষ্ঠা আর মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। অনেক সুযোগ থাকা সত্যেও একেবারেই সাধারণ জীবন যাপন করেছেন এই সমাজে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন সবার কাছে মহামানব রুপে। অর্জন করেছেন খ্যাতি ও ভালোবাসা সব মানুষের।
সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য গত ৩০ মে বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন এই প্রবীণ সাংবাদিক। এছাড়া জেলা সাহিত্য পরিষদ, জেলা শিল্পকলা একাডেমী, জেলা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন, দৈনিক কালের চিত্র ও সাপ্তাহিক সূর্যের আলো পত্রিকার পুরষ্কার ও সম্মাননা প্রাপ্ত ছাড়াও বিভিন্ন সময় পেয়েছেন নানা সম্মাননা।
সুভাষ চৌধুরী জীবদ্দশায় সাহসিকতার সঙ্গে সব অপশক্তি, ভয়ভীতি উপেক্ষা করেই লিখে গেছেন।  সাংবাদিকতায় তিনি ছিলেন বিশাল তথ্যভাণ্ডার। এজন্য তিনি চলমান ডিকশনারি, জীবন্ত কম্পিউটার, তথ্যের লাইব্রেরি হিসেবেও পরিচিত ছিলেনl

Check Also

স্বাধীনতার ৫৩ বছরে আজ প্রশ্ন উঠছে গণতন্ত্র কোথায়: মঈন খান

ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য বিরোধী দলের রুদ্ধে এক লাখ মামলা দেওয়া হয়েছে ও তাদের …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।