এই সরকারকে সরিয়ে দেব, সব দলের সঙ্গে কথা বলছি: ফখরুল

সরকার সরানো ছাড়া অন্য কোনো পথ খোলা নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের সামনে পথ একটাই এই সরকারকে সরিয়ে দেব। এজন্য সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলছি। তাদেরকেও এই কাতারে আনার চেষ্টা করছি।’

ফখরুল বলেন, ‘সবার আগে প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে।একটা নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নতুন যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসবে তারা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। এরপর নির্বাচনের মাধ্যমে একটা পার্লামেন্ট গঠন করা হবে।’

শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী উলামা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এই সভা হয়।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকার বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে, তা ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে। এখন আবার তাদের (আওয়ামী লীগ) নেতারা বলছেন, আসুন নির্বাচন করুন। তারা (ক্ষমতাসীন দল) কোন নির্বাচন করবে? সেই ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন করবে? তা এবার আর হবে না। একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হবে। তাদের অধীনেই নির্বাচন হবে।’

ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমরা অন্যায় কিছু বলি না। এখনো বলছি সঠিক পথে চলুন। বলছি না বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দিন। আমরা বলছি, জনগণ যাকে চায় তাদেরকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। তারা দেশ চালাবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘দেশে বিদ্যুৎ নেই, এটাই এই সরকারের আসল চেহারা। বিদ্যুতের কথা বলে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প তৈরির নামে অর্থ চুরি ও বিদেশে পাচার করা হয়েছে। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট তৈরি করে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে যে পরিমাণ টাকা তারা (সরকার) লুট করেছে, তা দিয়ে এক বছরের বাজেট হয়ে যেত।’

তিনি বলেন, ‘দেশে গণতন্ত্র নেই। কথা বলা ও সংগঠন করার স্বাধীনতা নেই। মানুষের নিরাপত্তা নেই।’

রাজবাড়ি জেলায় সোনিয়া আক্তার নামে এক নারীকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতারের প্রসঙ্গ তুলে ধরে ফখরুল বলেন, প্রতিবাদী একজন নারীকে রাত দুইটার সময় তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই যে একটি অবস্থা তৈরি হয়েছে, যা দেশের মানুষ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করেছে।’

আইসিটি বিভাগ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮-এর ধারা ১৫-এর ক্ষমতাবলে সম্প্রতি যে ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো হিসেবে ঘোষণা করছে, তারও কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘আগে সংবাদপত্র বিভিন্ন দপ্তরে যে চুরি হচ্ছে, সেগুলো তুলে ধরতেন। এখন তারা সেগুলোও লিখতে পারবে না।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ প্রতিটি থানায় বিএনপির নেতা ও অর্থ জোগানদাতাদের তালিকা করার নির্দেশ দিয়েছে।  বিরোধী দল যাতে কোনো কাজ করতে না পারে, সে জন্য এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তাদের ওপর দমন-পীড়ন করা হবে।’

‘প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় এখন ছাত্রলীগের দখলে চলে গেছে’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শুক্রবার বুয়েটের ছাত্র আবরার হত্যার মৃত্যুবার্ষিকীর কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ হামলা করেছে। এর আগে ছাত্রদল শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল। সেখানেও তাদের অন্যায় ও মর্মান্তিকভাবে বেধড়ক পিটিয়েছে।’

‘দেশে একটা অসহনীয় পরিবেশ বিরাজ করছে’ উল্লে­খ করে তিনি আরও বলেন, ‘মসজিদ পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করা হয়। মসজিদে মসজিদে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকে পোশাকে এবং সাদা পোশাকে। খুতবা হবে তাও তারা (সরকার) নির্ধারণ করে দেবে। এর চেয়ে খারাপ কথা আর কী হতে পারে। এসব কাজ করতে এতটুকু দ্বিধাবোধ করে না। আমি আমার ধর্ম পালন করব- এটা আমার সাংবিধানিক অধিকার, স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করব। সেখানেও নিয়ন্ত্রণ করছে। দেশের শীর্ষ আলেম-ওলামাদের কারাবন্দি করে রাখার কঠোর সমালোচনাও করেন বিএনপি মহাসচিব।’

উলামা দলের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ শাহ নেছারুল হকের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম তালুকদার ও সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মাওলানা মো. সেলিম রেজার সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির উদ্দিন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরাফত আলী প্রমুখ।

Please follow and like us:

Check Also

নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র

মূল্যস্ফীতির কশাঘাত মোকাবিলায় ২০ লাখ ২৬ হাজার দরিদ্র মানুষকে নতুন করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।