বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

রফিকুল ইসলাম : বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচ হাতে রেখেই টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামে প্রথম ম্যাচে ৬ উইকেটে জয়ের পর গতকাল মিরপুরে দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ৪ উইকেটে। ফলে টানা দুই ম্যাচ জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিত করলো টাইগাররা। বাংলাদেশ সফরে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজও জিততে চেয়েছিল সফরকারী ইংল্যান্ড। কিন্তু ওয়ানডে সিরিজে হারের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। আর এক ম্যাচ হাতে রেখেই টানা দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করে সাকিবরা। মেহেদি হাসান মিরাজের দুর্দান্ত বোলিং ও নাজমুল হোসেন শান্তর দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আধিপত্য বজায় রেখেই জয় পেয়েছে টাইগাররা। ৭ বল হাতে রেখেই বাংলাদেশ ৪ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ডকে। সিরিজ জয়ের ম্যাচে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার পান মিরাজই। ফলে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। গতকাল মিরপুরে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মিরাজের ঘুর্ণিতে ২০ ওভারে মাত্র ১১৭ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই সর্বনি¤œ রান ইংলিশদের। মিরাজ ১২ রানে একাই নেন ৪ উইকেট। জবাবে ব্যাট করতে নেমে নাজমুল হোসেন শান্তর অপরাজিত ৪৬ রানের ইনিংসে ৭ বল বাকী রেখেই ১২০ রান করে  ৪ উইকেটে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সামনে টার্গেট ছিল ১১৮ রান। টার্গেটটা সহজই ছিল বাংলাদেশের জন্য। তবে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা তেমন ভালো হয়নি সাকিবদের। ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় ওভারে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কারানের বলে ডিপ স্কয়ার লেগে সল্টকে ক্যাচ দিয়ে ৯ রানে থামেন ওপেনার লিটন দাস। ৯ রানে আউট হন অপর ওপেনার রনি তালুকদারও। আর্চারের বলে মঈনকে ক্যাচ দিয়ে রনি আউট হলে ২৭ রানে ২ উইকেট হারায় টাইগাররা। তবে বাংলাদেশ শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠে নাজমুল হোসেন শান্ত ও তৌহিদ হৃদয়ের ব্যাটে। ৩টি চারে ৩১ বলে ২৯ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হন শান্ত-হৃদয় জুটি। হৃদয়কে ১৭ রানে থামান অভিষেক হওয়া স্পিনার রেহান। ১৮ বল খেলে ২টি চার মারেন হৃদয়। দলীয় ৫৬ রানে হৃদয় ফেরার পর দলের রানের গতি বাড়ান শান্ত ও মিরাজ। ১৪ ও ১৫তম ওভারে ১২ রান করে যোগ করেন তারা। জুটিতে ৩২ বলে ৪১ রান যোগ হবার পর আর্চারের বলে আউট হন মিরাজ। ২টি ছক্কায় ১৬ বলে ২০ রান করেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া এ অলরাউন্ডার। উইকেটে এসে ৩ বলের বেশি খেলতে পারেননি সাকিব। মঈনের বলে জর্ডানকে ক্যাচ দিয়ে শূন্য হাতে বিদায় নেন সাকিব। দলীয় ১০৫ রানে আর্চারের বলে আফিফ ২ রানে বোল্ড হলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এমন অবস্থায় ম্যাচ জিততে ৪ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ১৩ বলে ১৩ রান দরকার পড়ে টাইগারদের। সপ্তম উইকেটে ৬ বল খেলে অবিচ্ছিন্ন ১৫ রান তুলে বাংলাদেশকে সিরিজ জয়ের স্বাদ দেন শান্ত ও তাসকিন। জর্ডানের করা ১৯তম ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে ২টি চারে জয় নিশ্চিত করেন তাসকিন। শান্ত ৩টি চারে ৪৭ বলে অপরাজিত ৪৬ রান করেন। ৩ বলে অপরাজিত ৮ রান করেন তাসকিন। ইংল্যান্ডের আর্চার ১৩ রানে ৩ উইকেট নেন। এরআগে, ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছির ইংল্যান্ড। তবে ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই বাংলাদেশকে উইকেট পাইয়ে দেন পেসার তাসকিন আহমেদ। তাসকিনের বলে হাসান মাহমুদকে ক্যাচ দেন ওপেনার ৫ রান করা ডেভিড মালান। দলীয় ১৬ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশ বোলারদের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন আরেক ওপেনার ফিল সল্ট ও মঈন আলি। ফলে পাওয়ার প্লেতে দলকে ৫০ রান এনে দেন তারা। সল্ট-মঈনের জুটি ভাঙ্গতে সপ্তম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমণে এসেই সাফল্যের দেখা পান সাকিব। তৃতীয় ডেলিভারিতে সাকিবকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন সল্ট। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৯ বলে ২৫ রান করেন তিনি।

সল্টের বিদায়ের পর মহাবিপদে পড়ে ইংল্যান্ড। অষ্টম ওভারে প্রথম বল করতে এসে শেষ ডেলিভারিতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জশ বাটলারকে ইয়র্কারে বোল্ড করেন পেসার হাসান মাহমুদ। পাঁচ নম্বরে নেমে ৪ রান করেন বাটলার। সাকিব ও হাসানের মত প্রথমবারের মত বল করতে এসেই নবম ওভারে উইকেট তুলে নেন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। সুইপ করে ছক্কা মারতে গিয়ে মিড উইকেটে দ্বাদশ ফিল্ডার শামীম হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন মঈন। আউট হওয়ার আগে ১টি করে চার-ছক্কায় ১৭ বলে ১৫ রান করেন মঈন। ৭ রানের ব্যবধানে পরপর তিন ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে মহাচাপে পড়ে ইংল্যান্ড। দলকে চাপমুক্ত করতে পঞ্চম উইকেটে ৩২ বলে ৩৪ রান যোগ করেন বেন ডাকেট ও স্যাম কারান। ১৫তম ওভারে তৃতীয়বারের মত আক্রমণে এসে ২ উইকেট তুলে নেন মিরাজ। দ্বিতীয় বলে কারানকে ১২ রানে এবং চতুর্থ বলে ক্রিস ওকসকে শূন্যতে স্টাম্পড আউট করলে ৯১ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। ক্রিস জর্ডানকে নিয়ে দলের স্কোর ১শতে নেন ডাকেট। ১৭তম ওভারে শেষবারের মত বল হাতে এসে জর্ডানকে ৩ রানে আউট করে ইনিংসে চতুর্থ উইকেট নেন মিরাজ। ক্যারিয়ার সেরা  ৪ ওভার বল করে ১২ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। শেষ পর্যন্ত পুরো ২০ ওভার খেলে ১১৭ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড। ডাকেটকে ২৮ রানে থামান পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। অভিষিক্ত রেহান আহমেদ ১১ ও জোফরা আর্চার খালি হাতে রান আউট হন। মিরাজের পর বাংলাদেশের পক্ষে তাসকিন-মুস্তাফিজ-সাকিব-হাসান ১টি করে উইকেট নেন।

Check Also

উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তুলব: পরিদর্শন বইয়ে প্রধানমন্ত্রী

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে ঢাকার সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।